এইমস যে কল্যাণীতেই হবে ন’মাস আগে চিঠি দিয়ে নবান্নকে তা জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু শহর-লাগোয়া কোন জমিতে তৈরি হবে ওই হাসপাতাল, তা নিয়ে সংশয় ছিল। অবশেষে সোমবার স্বাস্থ্য দফতরকে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসুরক্ষা যোজনার অধিকর্তা সঞ্জীব চাড্ডা জানিয়ে দিয়েছেন, দু’টি জমি পরিদর্শনের পরে তাঁরা কল্যাণীর বসন্তপুরের গোড়াগাছা মৌজার ১৮০ একর জমিকেই এইমস-এর জন্য চিহ্নিত করেছেন।
দিল্লির চিঠি পেয়ে স্পষ্টতই খুশি রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “৮২৩ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে অবশেষে কাজ শুরু হতে চলেছে।” নবান্নের খবর, নিয়ম মেনে এ বার দিল্লির হাতে ওই জমি তুলে দেবে রাজ্যের ভূমি দফতর। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, প্রস্তাবিত হাসপাতাল থেকে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত যাতায়াতের চারটি রাস্তা তৈরি করে দেবে রাজ্য। হাসপাতাল তৈরির যাবতীয় খরচ দেবে কেন্দ্র।
এ রাজ্যে এইমস কোথায় হবে, সেই টালবাহানার শুরু ১৯৯৪ থেকে। কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে তত্কালীন বাম সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূর কল্যাণীতে ‘এইমস-এর ধাঁচে’ হাসপাতাল তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যোজনা কমিশনের তত্কালীন চেয়ারম্যান প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই খাতে ১০ কোটি টাকা অনুমোদনও করেন। ওই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা ওই জমিতে ‘পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন বলা হয়, এটিই ‘এইমসের ধাঁচে’-র হাসপাতাল হিসাবে গড়ে উঠবে। নবান্নের কর্তারা জানান, রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ওই পুরনো প্রকল্পের খসড়া দেখিয়েই দিল্লিতে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ বা এইমস তৈরির প্রস্তাব পাঠায়। এ দিকে ইউপিএ-টু সরকারের আমলে রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাসমুন্সি তাঁর লোকসভা এলাকাতেই এইমস গড়ার পুরনো দাবি তোলেন। কিন্তু মমতা আগাগোড়া রায়গঞ্জের বদলে রাজ্যের অন্যত্র এই হাসপাতাল করার পক্ষে ছিলেন। এমনকী শিলিগুড়ির নামও এক বার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে রায়গঞ্জ না অন্যত্র কোথায় তৈরি হবে হাসপাতাল, তা নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। অবশেষে বাম আমলে প্রস্তাবিত জায়গা কল্যাণীর নামেই চূড়ান্ত সিলমোহর দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
প্রশাসনের মতে, উন্নয়নের প্রশ্নে সব রাজ্যকেই যে তাঁর সরকার সহযোগিতা করতে চায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন মোদী। কিন্তু দিল্লির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলেন মমতা। সম্প্রতি সেই পথ থেকে অনেকটা সরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যের বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর থেকেই বরফ গলার ইঙ্গিত পাচ্ছে নবান্ন। রাজ্য সরকারের এক কর্তার কথায়, “এইমস করার সবুজ সঙ্কেত আসার কয়েক দিনের মধ্যে রাজ্যের আবেদন মেনে ছ’টি কয়লাখনি পশ্চিমবঙ্গের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে নর্থ ব্লক।”
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত জুলাইয়ে কল্যাণীতে দু’টি জমি পছন্দ করে দিল্লিকে জানানো হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের টেকনিক্যাল টিম এবং এক জন যুগ্মসচিব তার বেশ কয়েক মাস পর জমি দেখে যান। অবশেষে ২৩ মার্চ চিঠি দিয়ে বসন্তপুরের জমিটি চূড়ান্ত করা কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, গত বছর জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী, মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল এবং অন্ধ্রপ্রদেশে চারটি নতুন এইমস তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রাথমিক বরাদ্দ ঘোষণা হয়েছিল ৫০০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ বাদ দিয়ে বাকি রাজ্যগুলি কাজ শুরু করে ইতিমধ্যেই ৫৩০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। কিন্তু কল্যাণীর জমি চূড়ান্ত না হওয়ায় এত দিন কাজই শুরু হয়নি। আগামী অর্থবর্ষে নতুন ও পুরনো এইমস মিলিয়ে ১৭৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে মোদী সরকার। এর মধ্যে কল্যাণীর জন্যও টাকা ধরা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy