Advertisement
E-Paper

পিছন দিকে হাঁটার উপকারিতা অনেক! শুধু মমতা নন, বহু বছর ধরে চলছে চর্চা, ভরসা রাখেন খেলোয়াড়েরাও

লন্ডন সফরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখালেন ‘ব্যাক ওয়াকিং’ বা উল্টো হাঁটা। যা ইউরোপ-আমেরিকা তো বটেই, অন্যান্য দেশেও খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃত।

Mamata Banerjee

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ১৩:৩২
Share
Save

খেলাচ্ছলে উল্টো দিকে হাঁটলে এক কথা। তবে লন্ডনের হাইড পার্কে যে উল্টো হাঁটা নিয়ে আলোচনা শিরোনামে, সেটি তেমন বিষয় নয়। হাঁটার ওই বিশেষ পদ্ধতির আলাদা মাহাত্ম্য আছে। যিনি হেঁটেছেন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে নয়, বিজ্ঞান বলছে, এটি অত্যন্ত কার্যকরী একটি শরীরচর্চা। যা শুধু শরীর নয়, মাথাও পরিষ্কার রাখে।

একা মুখ্যমন্ত্রী নন

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর হাঁটাহাঁটির অভ্যাস নতুন নয়। যেখানে যান সকালে হাঁটতে বেরিয়ে পড়েন। লন্ডন হোক বা মাদ্রিদ, কনকনে ঠান্ডা হোক বা বিষুব গরম— রুটিনে নড়চড় হয় না। কালীঘাটের বাড়িতে থাকলে ট্রেডমিল, না হলে রাস্তা। সে জেলা সফরে দার্জিলিঙের পাহাড়ি পথ হোক কিংবা লন্ডনের জগার্স পার্ক— ওয়াকিং শ্যু ছাড়া যে গতিতে হনহনিয়ে হাঁটেন মমতা, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খেতে হয় অপেক্ষাকৃত কমবয়সি পার্ষদদেরও। ঘনিষ্ঠ মহলে শোনা যায়, ‘ফিট’ থাকার জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে প্রতি দিন দশ হাজার পা হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁর চিকিৎসকেরাই। সেই পরামর্শ আবার সময়বিশেষে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর অনুজ সঙ্গীদেরও দিয়ে থাকেন। এ বারের লন্ডন সফরে যদিও প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে মমতা শেখালেন ‘ব্যাক ওয়াকিং’ বা উল্টো হাঁটতে। যা ইউরোপ-আমেরিকা তো বটেই, অন্যান্য দেশেও খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃত। বহু টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়কে নিয়ম করে উল্টো হাঁটা অভ্যাস করানো হয়, যাতে খেলার সময় তাঁদের পিছনের দিকের পেশি সঞ্চালন এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মস্তিষ্ক সঞ্চালন নিখুঁত থাকে।

পিছনে হেঁটে বুদ্ধি বাড়ে!

ইতালির মিলানের ডিপার্টমেন্ট অফ ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সাধারণ হাঁটা শুধু শরীর ফিট রাখে। ব্যাক ওয়াকিং শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও ভাল রাখে। চিন্তাশক্তিকে রাখে তীক্ষ্ণ। গবেষণার জন্য যাঁদের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল, দেখা গিয়েছে সামনে হাঁটা এবং পিছনে হাঁটার সময়ে তাঁদের মস্তিষ্কের দু’টি আলাদা অংশ সক্রিয় হচ্ছে। পিছনে হাঁটলে যে অংশটি সক্রিয় হচ্ছে, তার নাম প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বা সমস্যার সমাধান করার সময় মস্তিষ্কের ওই অংশ কাজে লাগে। এমনকি, মেধাবৃত্তির কাজও হয় মস্তিষ্কের ওই অংশেই। পিছনে হাঁটার সময় ওই অংশটি সক্রিয় হয় বলে চিকিৎসকেরা বলছেন প্রতি দিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট পিছনে হাঁটলে তার সুপ্রভাব পড়বে মস্তিষ্কেও। একই কথা বলছে নেদারল্যান্ডসের একটি গবেষণাও। ২০১৯ সালে ওই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল হেপাটোলজিতে। রেডবন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৩৮ জন। গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের সামনে রেখেছিলেন কিছু ধন্দমূলক বিষয়বস্তু। যেমন ‘নীল’ শব্দটি লেখা লাল রং দিয়ে। দেখা গিয়েছে, যাঁরা উল্টো হেঁটেছেন তাঁরা সবার আগে জবাব দিয়েছেন। কেন? গবেষকেরা এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘‘কারণ, তাঁদের মস্তিষ্ক আগেই পিছনে হাঁটার মতো জটিল কাজ করে ফেলেছিল।’’ ব্রিটেনে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় এবং রিহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা পিছনে হাঁটা অভ্যাস করেছেন, এমনকি, সফরে ট্রেন বা বাসের অভিমুখের উল্টো দিকে বসেছেন, তাঁদের মধ্যে পুরনো কথা মনে করার ক্ষমতা বাকিদের থেকে বেড়েছে!

শরীরে কী প্রভাব পড়ে?

অর্থাৎ ব্যাক ওয়াকিং যে চিন্তাশক্তি এবং মেধাকে উন্নত করে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। চিকিৎসকেরা এ-ও বলছেন যে, নিয়মিত ব্যাক ওয়াকিং অভ্যাস করলে হ্যামস্ট্রিং, গোড়ালি এবং শরীরের পিছনের দিকের পেশির ক্ষমতা যতটা বাড়ে, তা খুব কম শরীরচর্চাতেই সম্ভব।

আমেরিকার নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যানেট দুফেক গত ২০ বছর ধরে গবেষণা করছেন পিছনে হাঁটা বা পিছন দিকে দৌড়নোর প্রভাব নিয়ে। তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা নিজেদের উপরে পরীক্ষা করে দেখেছেন, চার সপ্তাহ ধরে প্রতি দিন ১৫ মিনিট করে পিছনে হেঁটে তাঁদের হ্যামস্ট্রিং নমনীয় হয়েছে। ১০ জন সুস্থ-সবল শিক্ষার্থীর উপরে একই পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, তাঁদের শরীরের পিছনের দিকের পেশির ক্ষমতা বেড়েছে। বেড়েছে মেরুদণ্ডের নমনীয়তা। একই পরীক্ষা পাঁচ জন খেলোয়াড়ের উপর করা হলে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের পিঠ এবং কোমরের ব্যথা আগের থেকে অনেক কমেছে।

ইতিহাসেও প্রমাণ আছে

উল্টো হাঁটা নিয়ে বিগত কয়েক দিনে আলোচনা বেশি হলেও উল্টো হাঁটার ইতিহাস একেবারেই নতুন নয়। উনিশ শতকের একেবারে শুরুর দিকেও উল্টো হেঁটে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন আমেরিকার এক মাঝবয়সি দোকানদার। প্যাট্রিক হ্যামন নামে এক সিগারের দোকানের মালিক শুধু মোটা টাকা পুরস্কারের লোভে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হেঁটেছিলেন সান ফ্রান্সিসকো থেকে নিউ ইয়র্ক সিটি পর্যন্ত। দূরত্বটা নেহাত কম নয়। ৩৯০০ মাইল বা ৬৩০০ কিলোমিটার। ২৯০ দিন লেগেছিল গন্তব্যে পৌঁছোতে। আর এই পুরো পথে একটিও পদক্ষেপ সামনের দিকে নেননি প্যাট্রিক। পরে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ওই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার পরে তাঁর গোড়ালি এতটাই শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে যে, সেটিকে ভাঙতে একটা বড়সড় হাতুড়ির জোরালো আঘাত লাগবে।

‘ওষুধ’-এর ইতিহাস

তবে তখনও পিছনে হাঁটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়ই ছিল। তার একটি নামও ছিল। রেট্রো ওয়াকিং। পরবর্তী কালে অবশ্য সেই রেট্রো ওয়াকিং পিঠ কোমরের ব্যথা সারাতে, হাঁটুর রোগের নিরাময়ে, এমনকি, আর্থ্রাইটিস সারানোর জন্যও কাজে লাগানো হতে থাকে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ব্যথা-বেদনার উপশমে পিছনে হাঁটানোর ‘ওষুধ’ প্রয়োগ বহু বছর আগে প্রথম শুরু হয়েছিল চিনে। তবে তা স্বীকৃতি পায় সম্প্রতি। বিভিন্ন গবেষণায় যখন দেখা যায়, পিছনে হাঁটলে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স অনেক বেশি ভাল হয়, তখন।

অতএব

ব্যাক ওয়াকিং ভাল। কিন্তু তাতে ঝুঁকিও আছে। ৩৯০০ মাইল পিছনপানে হাঁটা মাঝবয়সি দোকানদার প্যাট্রিকও সে কথা জানতেন। তাই সঙ্গে রেখেছিলেন এক বন্ধুকে। প্রাতর্ভ্রমণে আর এক জনকে নিয়ে বেরোনো সম্ভব না হতেই পারে। জ্যানেট বলছেন, ‘‘সে তো বটেই। হ্যামস্ট্রিং শক্তিশালী করার জন্য আরও অনেক ব্যায়াম আছে। কিন্তু তাতে সেই মজাটা কোথায়!’’

Walking backward Back walking

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}