গ্রীষ্ম হোক বা শীত— সিকিম সব ময়ই পর্যটকের সমাগমে মুখর। কলকাতা বা বঙ্গবাসীর পছন্দের তালিকাতেও থাকে হিমালয়ের কোলের ছোট্ট রাজ্যটি। পাহাড়ি জনপদের রূপের আকর্ষণ কম নয়। মরসুমভেদে বদলায় তার সৌন্দর্য।
অক্টোবর, নভেম্বর সিকিম ঘোরার জন্য আদর্শ ঠিকই। তবে এপ্রিল-মে মাসও এখানে ভ্রমণের ভাল সময়। এই সময় যেমন সর্বত্র ঠান্ডার কাঁপুনি থাকে না, ঠিক তেমনই গরমও থাকে না। এমন সময় সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে কোন কোন জায়গা রাখবেন তালিকায়?
গুরুদোংমার

গুরুদোংমার হ্রদ। ছবিঃ সংগৃহীত।
উত্তর সিকিমের রূপের টানে বার বারই ছুটে আসেন পর্যটেকরা। তবে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ গুরুদোংমার হ্রদ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল গুরুদোংমার যাত্রা। প্রবল শীতে রাস্তা বরফে আটকে গেলেও এই হ্রদে যাওয়া যায় না। ফলে মার্চ মাসের শেষ থেকে মে-জুন মাসের শুরু পর্যন্ত ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে তালিকায় রাখতে পারেন ১৭ হাজার ৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত হ্রদটি। শুধু গুরুদোংমার নয়, ঘুরে নেওয়া যায় কালা পাত্থর। কালো রঙের পাহাড়ের উপর শ্বেতশুভ্র তুষারের বৈপরীত্যের রং দেখার মতো। গুরুদোংমার যাওয়ার জন্য অনুমতি লাগে। পাসপোর্ট ছবি এবং ভোটার কার্ড দরকার হয় সে জন্য।
কী ভাবে যাবেন?
গুরুদোংমার যেতে হলে গ্যাংটক থেকে লাচেন হয় প্রথম গন্তব্য। লাচেনে থাকতে হয় এক রাত। লাচেন থেকে সকালে গাড়ি করে হ্রদ এবং কালাপাত্থর ঘুরিয়ে আনা হয়। গ্যাংটক থেকে সড়কপথে লাচেন গিয়ে গুরুদোংমার ঘুরতে হয়। গাড়ি ভাড়া করে যেতে হয়। শেয়ার ট্যাক্সি বুক করেও উত্তর সিকিম ঘোরা যায়।
থাকার জায়গা: লাচেনে একাধিক হোটেল আছে। বিভিন্ন মানের এবং দামের।
ইয়ুমথাং
উত্তর সিকিমের ছোট্ট জনপদ লাচুং। সেখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় ইয়ুমথাং। মে এবং জুন মাসে উপত্যকা জুড়ে রঙিন ফুল ফুটে থাকে। তুষারাবৃত উপত্যকা সবুজ হয়ে ওঠে। ফুলের স্বর্গীয় শোভা দেখতে হলে মে মাস আদর্শ। জুন মাস পর্যন্ত সেই রূপ দৃশ্যমান হয়। ইয়ুমথাং থেকে ঘুরে নেওয়া যায় জিরো পয়েন্ট। লাচুং গ্রামটিও ভারি সুন্দর। সাধারণত, প্যাকেজ ট্যুরে এসে পর্যটকেরা এখানে একরাত্রি কাটিয়ে চলে যান। তবে যদি অন্তত ২-৩দিন এখানে থাকেন লাচুং এবং ইয়ুমথাঙের রূপ ভাল ভাবে উপভোগ করা যাবে। লাচুং দিয়ে বয়ে গিয়েছে পার্বত্য নদী। সেই রূপও নয়নাভিরাম।
কী ভাবে যাবেন?
উত্তর সিকিমে যাওয়ার জন্য অনুমতি লাগে। ইয়ুমথাং যেতে হলে থাকতে হয় লাচুং-এ। গ্যাংটক থেকে গাড়িতে ৫-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। বজরা ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে শেয়ার ট্যাক্সিতে লাচুং, ইয়ুমথাং ঘুরে নেওয়া যায়। ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করেও ভ্রমণ করা যায়।
থাকার জায়গা: বিভিন্ন দামের এবং মানের হোটেল রয়েছে লাচুং-এ।
তারেভির

ঘুরে নিতে পারেন তারেভির। ছবি:সংগৃহীত।
উত্তর সিকিম শুধু নয়, রূপ-সৌন্দর্যে টেক্কা দিতে পারে দক্ষিণ সিকিমও। এখানকার ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ তারেভির। এ রাজ্যের অন্যান্য স্থানের চেয়ে তারেভির আলাদা তার রূপের জন্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ১০ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের প্রায় মাথা দিয়ে একদম শেষ পর্যন্ত চলে গিয়েছে লম্বা পথ। অন্তত ২-৩ কিলোমিটার তো হবেই। সেই পথের একপাশে পাইনের বন। অন্য পাশে ঘন সবুজ ঘাসের চাদর। এখানের বাঁধানো সিঁড়ির মতো পথ দিয়ে একবারে পাহাড়ের প্রান্তে পৌঁছোতে গেলে প্রথমে আসে নামার পালা। তবে সিঁড়ি পথে ওটা বেশ কষ্টকর।
কী ভাবে যাবেন?
দক্ষিণ সিকিমের শহর নামচি। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নামচির দূরত্ব মোটামুটি ৯২ কিলোমিটার। নামচি থেকে তারেভিরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। নামচিতে রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে তারেভির যেতে পারেন।
থাকার জায়গা: বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে এখানে।
ইয়কসম

পশ্চিম সিকিমের ইয়কসম রাখতে পারেন ভ্রমণের তালিকায়। ছবি: সংগৃহীত।
সিকিমের অনেক জায়গাতেই পর্যটকের ভিড় থাকে। তবে সে সব এড়িয়ে, চেনা ছকের বাইরে প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে হবে ইয়কসম। সিকিমের পশ্চিম প্রান্তে এর অবস্থান। খুব পুরনো বৌদ্ধ মন্দির । গোয়েচা-লা ট্রেকের সূচনা হয় ইয়কসম থেকে। কাঞ্জনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানের রূপ-সৌন্দর্য উপভোগ ইয়কসম থেকে ট্রেকিং করেন অনেকেই। এই স্থান পাখিদের স্বর্গরাজ্য। এপ্রিল, মে মাসে ঘুরে নিতে পারেন এখানেও।
থাকার জায়গা: হাতেগোনা কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে এখানে।
কী ভাবে যাবেন?
গ্যাংটক থেকে ইয়কসমের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। যেতে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই সুবিধাজক।
জঙ্গু
উত্তর সিকিমের আর একটি জায়গা হল জঙ্গু। এখানে যেতে গেলেও আগাম অনুমতির প্রয়োজন হয়। এখান থেকে ঘুরে নিতে পারেন লিংজা জলপ্রপাত, লিংডেম উষ্ণ প্রস্রবণ, লিংথেম বৌদ্ধমঠ, টিংভং গ্রাম। অন্তত ৩ রাত থাকলে আপার জঙ্গু ভাল করে ঘুরতে পারবেন। লেপচা জনজাতির বাস এখানে। জঙ্গল, আধ্যাত্মিকতা, লেপচাদের ধর্মীর বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে এই স্থান জুড়ে। এই জায়গা ছবির মতোই সুন্দর, শান্ত, নিরিবিলি। পাখি দেখার জন্য এই স্থান আদর্শ।
কী ভাবে যাবেন?
গ্যাংটক থেকে মঙ্গনের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। মঙ্গন থেকে জঙ্গু যেতে হয়। মঙ্গন থেকে নদী পেরিয়ে যেতে হয় আপার জঙ্গু। তিস্তার উপরে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু।সেটি হেঁটে পার হওয়ার পর, অন্য পারে আবার গাড়িতে চাপতে হয়। এখানকার হোমস্টে মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরাই অনুমতিপত্র জোগাড় করে দেন। এ জন্য পরিচয়পত্র এবং ছবি লাগে।
থাকার জায়গা: বেশ কয়েকটি হোমস্টে রয়েছে এখানে।