
শালবনিতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা। ছবি: সংগৃহীত।
বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বলেন, ‘‘আমার সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আমায় উপেক্ষা করতে পারবেন না। অনেকেই অনেক কিছু বলে থাকেন। আমরা বলি না, আমরা শুধু করে দেখাই।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলার ঐতিহাসিক প্রকল্প। শালবনির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে এ রাজ্যের ২৩ জেলাই উপকৃত হবে। ১৫ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। আগামিকাল সোলার প্ল্যান্টের উদ্বোধন করব। আগে বলা হত, লোডশেডিংয়ের সরকার, আর নেই দরকার। এখন ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আরও দুটো তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হবে জিন্দলদের।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘বাংলায় ছ’টি ইকোনমিক করিডর হয়েছে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই ৩৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ডেউচা-পাঁচামিতে বিশাল কোল ব্লক তৈরি হচ্ছে। ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। ৩০ তারিখ জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হবে দিঘায়। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে পাঁচটি বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করবে।’’
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
শালবনির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে গোটা রাজ্যেরই সার্বিক উন্নয়ন হবে, বললেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব বলেন, ‘‘যাঁরা বলেন, বাংলার উন্নতি হচ্ছে না, তাঁরা এসে দেখা যান, কী ভাবে বাংলার উন্নতিতে কাজ করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি খুবই খুশি যে, এটা শালবনিতে হল। এ রাজ্যে আরও বড় বড় শিল্প আসবে।’’
শালবনিতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং সজ্জন জিন্দল। শিলান্যাস হল ২০০০ একরের শিল্প পার্কেরও।
অনুষ্ঠানে সজ্জন জিন্দল বলেন, ‘‘শালবনিতে গত ১০ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। দেখে মনে হয়, এ রকমই হওয়া উচিত। এখানকার জমি কৃষকদের। তাই তাঁরা যাতে উপকৃত হন, সেটা আমাদের দেখতে হবে। দিদিও আমাকে সে কথা বার বার বলেছেন। এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনও দূষণ হবে না, এটা আমরা নিশ্চিত করব। এই রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। তা মাথায় রেখেই এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।’’
জিন্দল আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিতে দিদি অনেক কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের উন্নতি হলে গোটা দেশের উন্নতি হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’’
শালবনিতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মঞ্চে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সজ্জন জিন্দল এবং তাঁর পুত্র পার্থ জিন্দল।
শালবনিতে পৌঁছোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁকে স্বাগত জানাতে হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে হাজির ছিলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি, জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার এবং সাংসদ জুন মালিয়া। শালবনিতে নেমেই মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে যান জিন্দলদের কারখানার। খানিক পরেই তিনি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাস করবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে আঁটসাঁট নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে শালবনিতে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই দফায় দফায় বৈঠক করছে, যাতে সব দিক থেকে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ থাকে। সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। পরদিন ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার তিনি মেদিনীপুর কলেজ মাঠে সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, যেখানে গোয়ালতোড়ের একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট-সহ একাধিক নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ঘোষণায় নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন শালবনি এবং পার্শ্ববর্তী প্রায় ৩০টি গ্রামের মানুষ, যাঁরা এক সময় জমি দিয়েছিলেন বড় কারখানার আশায়। বাম আমলে ওই জমিতে একটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর মাওবাদী হামলার পর তা স্থগিত হয়ে যায়। সে দিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে শালবনি থেকে মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। ঘটনাচক্রে, সেই কনভয়ে শামিল ছিল কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের গাড়িও। এর ফলে সন্ত্রাসের আবহে থেমে যায় শিল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া।
শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্পের জন্য যে জমি জিন্দলদের হাতে ছিল, সেখানেই গড়ে উঠবে বিদ্যুৎ প্রকল্প। ফলে জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলে জানান মহেন্দ্র। তাঁর দাবি, শিলান্যাসের ৪২ মাসের মধ্যে প্রথম ইউনিট এবং ৪৮ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) মঞ্চে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন জিন্দল। প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ২৫ বছরের জন্য কিনে নেবে রাজ্য। এই মর্মে ইতিমধ্যে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এবং জেএসডব্লিউ এনার্জির চুক্তি হয়েছে। মহেন্দ্র জানান, রাজ্যে এখন বার্ষিক মাথাপিছু ৬০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। সর্বভারতীয় স্তরে যা ১২০০ ইউনিট। ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্যে যে ভাবে নগরায়ণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে, তাতে আগামী দশকে বিদ্যুতের চাহিদা কয়েক গুণ বাড়বে বলে মনে করছেন জিন্দল গোষ্ঠীর কর্তা।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। শালবনিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জিন্দল গোষ্ঠীর শীর্ষকর্তারাও। সংস্থার সিইও শরদ মহেন্দ্র বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বহু দিন বাদে কোনও বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠছে। আমরা গর্বিত। আগামী চার বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, প্রকল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ২০০০-এর বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে গুরুত্ব পান সে দিকে নজর দিচ্ছে সংস্থা। অনুষ্ঠানে সজ্জন জিন্দলের থাকার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy