হৃদরোগের শিকার হলে ব্যায়াম বন্ধ নয়, বরং নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করুন। ছবি: শাটারস্টক।
হৃদরোগ মানেই সামান্য পরিশ্রমেও বিপদের ভয়, আর হাত ধরে নাকচ প্রায় সব কষ্টসাধ্য ব্যায়াম! এমন করেই ভাবেন অধিকাংশ জন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, বিষয়টা মোটেও এমন নয় বরং নিয়ন্ত্রিত ব্যায়ামই হৃদরোগে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।
তবে তা একেবারেই তাড়াহুড়ো করে শরীরকে জোর করে মানিয়ে নয়। বরং কী ভাবে ব্যায়াম করছেন আর কী কী ব্যায়াম করছেন তার উপরেই নির্ভর করবে আপনি হৃদরোগের সঙ্গে কত সক্রিয় ভাবে লড়তে পারবেন। জানেন কি, কেমন হবে হৃদরোগীর ব্যায়ামের নিয়ম?
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হঠাৎ করে কিছু করবেন না৷ ধীরেসুস্থে এগোন, বিশেষ করে ব্যায়ামের অভ্যাস যদি না থাকে, বয়স বেশি হয় এবং হাইপ্রেশার বা হাঁটু–কোমর ব্যথা থাকে তা হলে আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ বরং বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে নিন কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার শরীরে এঅকান্তই প্রয়োজন৷’’
আরও পড়ুন: ফাইবারেই জব্দ কোষ্ঠকাঠিন্য, ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকুন এ ভাবে
লিপস্টিক প্রথমে কী থেকে তৈরি করা হয় জানেন?
কোল্যাটারাল সার্কুলেশন
ব্যায়াম করলে মূল করোনারি ধমনীগুলির পাশাপাশি বেশ কিছু ধমনী থাকে যারা সচরাচর তেমন কাজ করে না৷ নিয়মিত ব্যায়াম করলে আস্তে আস্তে এরা সজীব হয়৷ রক্ত সঞ্চালন শুরু হয় এদের মধ্যে দিয়ে৷ যত তা বাড়ে, তত তরতাজা হয় হার্ট৷ ধকল সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ে৷
সাইকেল চালানো অন্যতম সেরা কার্ডিও এক্সারসাইজ। ছবি: শাটারস্টক।
হৃদরোগ ঠেকাতে
হৃদয় ও ফুসফুসকে ভাল রাখতে দরকার কিছু কার্ডিও এক্সারসাইজ৷ অর্থাৎ হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার, খেলাধুলা ইত্যাদি৷ শুয়ে–বসে থাকার অভ্যাস থাকলে তা আগে ত্যাগ করুন। বরং হাঁটতে পারলে ব্যায়ামের প্রাথমিক ভাগটা শুরু করুন হাঁটা দিয়ে৷ প্রথমে ধীরে, তার পর অভ্যাস হয়ে গেলে মাঝারি গতিতে৷ দিনে অন্তত আধঘণ্টা হাঁটুন৷ শরীর তৈরি না থাকলে প্রথম দিকে মিনিট পনেরো হাঁটলেও চলবে৷ সম্ভব হলে দিনে দু’বার হাঁটুন৷ হাঁটার জন্য কিছু নিয়ম মানুন।
একই গতিতে একটানা হাঁটুন৷ সকালের দিকে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে পারলে ভাল৷ সকালে সময় না পেলে বিকেলে বা সন্ধেয় হাঁটুন। শীতের ভোরের কুয়াশা ও ধুলো–ধোঁয়ার মিশ্রণ স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়৷ কাজেই একটু রোদ উঠলে বেরন৷ বিকেলে হাঁটলে চেষ্টা করুন আলোকিত ও পরিচিত রাস্তায় হাঁটতে৷ যে গতিতে হাঁটলে শীতকালে অল্প ঘাম হয়, শ্বাসের হার ও নাড়ির গতি বাড়ে, একটু হাঁপিয়ে যান সেই গতিতে হাঁটুন৷ যদি খুব হাঁপিয়ে যান, বেশি ঘাম হয়, সারাদিন ক্লান্ত–অবসন্ন লাগে, বুঝবেন বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে৷ তখনই ব্যায়াম কমাতে হবে৷ আলাদা করে হাঁটার সময় না পেলে অফিস বা বাজার–হাট সেরে ফেরার সময় আধঘণ্টার মতো পথ হেঁটে আসতে পারেন৷ হাঁটুতে সমস্যা না থাকলে লিফ্টের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন৷ কাছাকাছি কোথাও যেতে হলে হেঁটে বা সাইকেলে যান৷ ঘরে নিজের কাজ নিজে করতে পারলে ভাল৷ মাঝেমধ্যে ঘর–বাড়ি বা গাড়ি ধোয়ামোছা করতে পারেন৷ নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে দিনে ২০–৩০ মিনিট জগিং করতে পারেন৷ দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার, ট্রেডমিল করা যেতে পারে সবই৷
আরও পড়ুন: সচেতনতার অভাব, এখনও দূষিত জল থেকে ছড়াচ্ছে নানা অসুখ
ইসকিমিক হৃদরোগের সাবধানতা
কত দূর হাঁটলে বুকে ব্যথা হয় না, তা বুঝে ততটুকু হাঁটুন৷ বিশ্রাম নিন৷ আবার হাঁটুন৷ আবার বিশ্রাম নিন৷ কিছু দিন পর হার্ট আগের চেয়ে বেশি ধকল নিতে পারবে৷ গতির ব্যাপারেও এক নিয়ম৷ যে গতিতে হাঁটলে কষ্ট হয় না, সেই গতিতে হাঁটুন৷ সময়ের সঙ্গে গতি বাড়বে৷ ক’ধাপ সিঁড়ি ওঠার পর বুকে চাপ ধরে তা বুঝে উঠুন ধীরেসুস্থে৷ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে স্ট্রেচিং, যোগা, মেডিটেশন করতে পারেন৷ এতে যে শুধু মানসিক উদ্বেগ কমে ও শরীরের নমনীয়তা বাড়ে এমন নয়, হৃদরোগের প্রকোপও কম থাকে৷
এর বাইরে কোনও ব্যায়াম করতে চাইলে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ মতো ট্রেডমিল টেস্ট করে নিন ও তাঁর পরামর্শ মেনে চলুন।
ধীরে ধীরে একতলা সিঁড়ি ওঠানামা করতে পারেন অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরেও।
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বাইপাস বা হার্ট অ্যাটাকের পরের সাবধানতা
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর প্রথম ১–২ সপ্তাহ সাইক্লিং বা পায়ের অন্য ব্যায়াম, ভারী জিনিস তোলা বা ঠেলা বারণ৷ হাঁটাচলা করতে পারেন৷ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে বন্ধ পথ খুলে দিলে ও হার্ট ঠিকঠাক পাম্প করলে বয়স ও ফিটনেস অনুযায়ী যা যা ব্যায়াম করা যায়, সব করতে পারেন৷ তবে ডাক্তারের মতামত নিয়ে৷
বাইপাস সার্জারির পর এক–দেড় মাস ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যায়াম করুন৷ যেমন, ঘরে হালকা পায়চারি করা, বাড়ির সামনে অল্প হাঁটা, একতলা সিঁড়ি ওঠানামা করা, বাইরে একটু–আধটু বেরনো৷ এ ভাবে এগতে এগতে একটা সময় আসবে যখন অফিস, মর্নিংওয়াক সবই করতে পারবেন৷ হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ঠিক থাকলে জিম, সাঁতার, ট্রেকিংও করা যায়৷
হার্ট অ্যাটাকের পর মাস খানেক গ্রেডেড এক্সারসাইজ করার পর ব্যায়ামের অনুমতি দেওয়া হয়৷ ট্রেডমিল টেস্ট করে অবস্থা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার৷ তবে হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেলে কিছু বিধিনিষেধ থাকে৷
আরও পড়ুন: অসুস্থ হলে বা আহত হলে প্রাথমিক পরিচর্যাগুলি কী
হার্ট ভাল ভাবে পাম্প করতে না পারলে কী করবেন
বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হালকা যোগা, স্ট্রেচিং ও শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন৷ তবে খুব সাবধানে৷ ভারী জিনিস তোলা, ঠেলা বা পরিশ্রমের কাজ করবেন না৷ সকালে বা বিকেলে হাঁটুন৷ রক্ত সঞ্চালন বেড়ে হার্টের সমস্যা কমতে শুরু করবে৷
(শুরু হয়েছে আমাদের নতুন বিভাগ 'HELLO DOCTOR'। এ বারের বিষয় ‘ব্রণর সমস্যা’। এ বিষয়ে আপনার প্রশ্ন পাঠান query@abpdigital.in এই মেল আইডি তে। উত্তর দেবেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy