খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা জরুরি। প্রতীকী ছবি।
শরীর সুস্থ রাখার জন্য এবং কর্মক্ষম থাকার জন্য সব সময়েই প্রয়োজন ঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। সঙ্গে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন খেলাধুলো করা। তবে কেবল শখের খেলাধুলো নয়, একজন দক্ষ ও সফল খেলোয়াড় হয়ে উঠতে কিন্তু সাধারণ মানুষের চেয়ে একেবারে অন্যরকম ডায়েট অনুসরণ করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বশে রাখতে হবে ওজনকে। স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট বিজয়া ব্রহ্মচারীর কথায়, “সম্ভাব্য আঘাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে কিংবা ক্লান্তি, অবসাদ কাটাতে সাহায্য করবে নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়াই।”
কী কী খাবেন?
ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ভারোত্তোলন, বক্সিং কিংবা সাঁতার যা-ই করুন, আগে দরকার শরীরে প্রয়োজনীয় পেশি তৈরি করা। সাধারণ মানুষের তুলনায় খেলোয়াড়দের মেটাবলিক রেট বেশি হয়। তার জন্যই উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত, প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট। বিজয়া ব্রহ্মচারীর মতে, “অপ্টিমাল এনার্জির জন্য ফ্যাটের প্রয়োজন হয়।” সঙ্গে পেশি তৈরিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের প্রয়োজন। যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, আয়োডিন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজন এই ভিটামিনস ও মিনারেলস। “সাধারণভাবে খেলোয়াড়দের ডায়েটের ১০০ শতাংশ ক্যালোরির মধ্যে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে, ১২ থেকে ১৫ শতাংশ আসে প্রোটিন থেকে, এবং প্রায় ৩০ শতাংশ আসে ফ্যাট থেকে। তাই নিয়মিত খেতে হবে সেই ধরনেরই খাবার,” জানালেন পুষ্টিবিদ বিজয়া। পাশাপাশি, পুষ্টিবিদ সুবর্ণা জানান, “স্পোর্টস ডায়েট তৈরির সময়ে যথাযথ পরিমাণে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের জোগানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।” পেশি তৈরি এবং শরীরের আকার ও আকৃতি বজায় রাখতে এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সাহায্য করে। সঙ্গে প্রয়োজন এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড।
ওটস, কর্নফ্লেক্স, রাগি, ডালিয়া, বার্লি ইত্যাদি নানা ধরনের সিরিয়াল জলখাবারে খেতে পারেন। খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা জরুরি, যা পাওয়া যায় পাঁউরুটি থেকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ব্রাউন ব্রেড কিংবা মাল্টিগ্রেন ব্রেড খাওয়া বেশি ভাল।
দুপুরে ও রাতের খাবারে প্রয়োজন প্রোটিনযুক্ত খাবার। খেতে পারেন কিনোয়া বা ব্রাউন রাইস। কিনোয়া প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, তা পেশি তৈরিতে সাহায্য করে। রোজকার খাবারের তালিকায় পালং শাক, ব্রকোলি, লেটুস, বাঁধাকপি, অ্যাসপারাগাস ইত্যাদি নানা ধরনের আনাজপাতি এবং আলু, মিষ্টি আলু, মাশরুম, বিভিন্ন ধরনের ডাল (বিশেষত মুগ কিংবা মুসুর ডাল) এবং নানা ধরনের বিনস (সয়াবিন, রাজমা ইত্যাদি) ঘুরিয়েফিরিয়ে রাখুন। শরীরের প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস অর্থাৎ ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, আয়রনের চাহিদা মিটে যাবে এ সব খাবার থেকেই।
মরসুমি ফল অর্থাৎ কলা, তরমুজ, আঙুর, কমলালেবু, আপেল, অ্যাভোকাডো ইত্যাদি খান। ফল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে।
দুধ, দই, ছানা, পনির খেতে পারেন। তবে শরীরকে ফিট রাখতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবহার করুন লো-ফ্যাটজাত গরুর দুধ কিংবা সয়া মিল্ক বা আমন্ড মিল্ক। প্রোটিনের পাশাপাশি পেশি ও হাড়ের জোর বাড়াতে পারে দুধ বা দুগ্ধজাত যে কোনও খাবার।
গোটা শস্যজাত খাবারের পাশাপাশি খাওয়া যেতে পারে মাছ, মাংস, ডিমও। তবে রেড মিট একেবারে না খাওয়াই ভাল। মাছের মধ্যে টুনা, স্যামন, তেলাপিয়া ইত্যাদি খান। নিরামিষাশী কিংবা ভিগানরা পনির, টোফু ইত্যাদি খান।
নিয়মিত খান কুমড়ো বীজ, ফ্ল্যাকসিডস, চিয়া সিডস ইত্যাদি। এ সব বিভিন্ন বীজে থাকে প্রচুর প্রোটিন ও মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টস। তবে মূলত তৈলবীজ হওয়ায় পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে নির্দিষ্ট পরিমাণেই খাবেন এ ধরনের বীজগুলি।
এ ছাড়াও হালকা খিদেতে বিভিন্ন ধরনের স্প্রাউটস, ড্রাই ফ্রুটস, স্যালাড ইত্যাদি খান। কাজু, আমন্ড, ওয়ালনাট নানা ধরনের বাদাম কিংবা খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত ডায়েট স্ন্যাকসও খেতে পারেন। ওয়ালনাট, আমন্ড, হেজ়েলনাট থেকে পাওয়া যায় শরীরের প্রয়োজনীয় এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড।
অবশ্য কর্তব্য
খেলতে নামার আগে কখনওই বেশি খাওয়াদাওয়া করবেন না। খাওয়ার পরে অন্তত আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা বিশ্রাম জরুরি। খেলার আগে সাধারণ কার্বোহাইড্রেট খাবার, ফলমূল (যেমন খেজুর, বাদাম) ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ক্লান্তি কাটাতে, এনার্জি বাড়াতে খেলার পরেও নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়া করা জরুরি।
পর্যাপ্ত জল
খেলাধুলোর সময়ে দেহে জলের চাহিদা পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে একবারে অতিরিক্ত জল খেলে শরীর খারাপ লাগতে পারে। সারাদিন অল্প অল্প করে জল খেয়ে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা প্রয়োজন। খেলার দু’ ঘণ্টা আগে আধ লিটার, ওয়ার্মআপের সময় ২৫০ মিলিলিটার ও খেলার সময় প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পর ১৫০ থেকে ২০০ মিলি জল খাওয়া ভাল। সাঁতারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের খেতে হবে সহজপাচ্য খাবার। সঙ্গে ওসান থার্মাল এনার্জি বজায় রাখতে বিভিন্ন ধরনের স্মুদি খান। এ ছাড়াও ডাবের জল, ফলের রস, লস্যি কিংবা বিভিন্ন স্পোর্টস এনার্জেটিক ড্রিঙ্কসও খেতে পারেন। তবে প্যাকেটজাত ফলের রস এবং যে কোনও ধরনের সফট ড্রিঙ্কস একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যাফেইনও নষ্ট করতে পারে সুষম খাদ্যাভ্যাসকে। সোডা, অ্যালকোহল কিংবা তামাকজাত পণ্য খেলোয়াড়দের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
খেয়াল রাখবেন
সাধারণ মানুষের এমনকি যারা নিয়মিত জিম করেন তাঁদের কখনওই স্পোর্টস ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়। অ্যাথলেটিক কিংবা খেলোয়াড়দের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। সাধারণ মানুষের চেয়ে তাঁদের বিএমআই ও মেটাবলিক রেটও আলাদা। ফলস্বরূপ খেলোয়াড় ছাড়া অন্য কেউ এই ধরনের ডায়েট অনুসরণ করলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
এখন ছোট থেকেই অনেক বাচ্চা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই প্রথম থেকেই তার স্বাস্থ্যকর ডায়েটের বিষয়ে অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। সাধারণ কোচ কিংবা জিম ট্রেনারের পরামর্শে নয়, বাচ্চার শারীরিক খুঁটিনাটি বিষয় বিচার করে ডায়েট বানাতে হবে স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ মেনে। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রত্যেকটি খেলায় প্রত্যেক খেলোয়াড়ের প্রয়োজন আলাদা ডায়েট। কোন খেলোয়াড়, কোন খেলার সঙ্গে যুক্ত তার উপর নির্ভর করবে তার দৈনন্দিন খাবার তালিকা। তাই এ বিষয়ে সব সময়েই উচিত বিশেষজ্ঞের মতামত মেনে চলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy