—প্রতীকী ছবি।
চলতি বছর যারা ডেঙ্গি আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই বিভিন্ন অঙ্গ বিকল বা ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ হয়ে যাচ্ছে। এ বছর ডেঙ্গির এই প্রবণতা নিয়ে চিন্তিত শহরের চিকিৎসক মহল। তাঁদের মতে, ডেঙ্গি এ বার প্রথমে রোগীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল করে দিচ্ছে। তার প্রভাব গিয়ে পড়ছে অন্যান্য অঙ্গে। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অনেক সময়ে দীর্ঘদিন থাকতে হচ্ছে ভেল্টিলেশনে।
বাগুইআটির বাসিন্দা প্রণব রায় যেমন সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন ২১ অক্টোবর। তিন দিনের মধ্যে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। এর পরেই চিকিৎসকেরা পরিবারকে জানান, প্রণবের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডায়ালিসিস প্রয়োজন। সেই সঙ্গে লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত। প্রণবের স্ত্রী মৈত্রেয়ী বসু বলেন, ‘‘আমার স্বামী ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’-এর দিকে যাচ্ছেন। দু’সপ্তাহ ধরে ভেন্টিলেশনে। পরিস্থিতি কবে ভাল হয়, সেই দিকে তাকিয়ে।’’ প্রণবের মতো এ বার অনেক রোগীরই অবস্থা গুরুতর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কেন?
চিকিৎসক অরুণাশু তালুকদার বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এই বছর ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কম। কিন্তু আক্রান্ত রোগীর ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ হওয়ার হওয়ার ঘটনা ঘটছে। ডেঙ্গির ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তিত ডেঙ্গি ভাইরাস রোগীর শরীরে বাসা বেঁধে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করছে।’’ অরুণাংশুবাবুর মতে, এক বার ডেঙ্গি হওয়ার পরে সেই রোগীর আবার যদি ডেঙ্গি হয়, তা হলে সেই রোগীর ‘মাল্টি অরগান ফেলিওর’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অরুণাংশুবাবুর মতে, ‘‘হয়তো ওই রোগী ডেঙ্গ ওয়ান ভাইরাস দ্বারা আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বার হয়তো উনি ডেঙ্গ টু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলেন। এঁদেরও ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, গত বছর বা তার আগে ডেঙ্গি হয়েছিল, এ বছর আবার হয়েছে, এমন বেশ কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের কারও কারও ‘মাল্টি অর্গান ফেলিওর’ হয়েছে। চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীও অরুণাংশুবাবুর সঙ্গে সহমত হয়ে বলেন, ‘‘ডেঙ্গি ভাইরাসের চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে। এ থেকেই জটিলতা বাড়ছে।’’ অমিতাভবাবুর মতে, ‘‘নতুন চরিত্রের ভাইরাস হয়তো প্রথমে লিভারের ক্ষতি করল। তার পর অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হল।’’
কী ভাবে? অমিতাভবাবু জানান, লিভার থেকে এক ধরনের প্রোটিন তৈরি হয়। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই প্রোটিন তৈরি হওয়া বন্ধ হয়। ফলে রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে জল জমতে থাকে। জল জমে ফুসফুসেও। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এ বার যাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে, তাঁদের অনেকেরই জ্বরের সঙ্গে পেট খারাপও হচ্ছে। এটা কিন্তু ডেঙ্গি ভাইরাসের কোনও অঙ্গকে আক্রমণ করারই লক্ষণ। অমিতাভাবুর মতে, ‘‘জ্বর হলে তিন দিন অপেক্ষা করে রক্ত পরীক্ষা নয়, প্রথম দিনই রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy