Advertisement
E-Paper

লকডাউন ধীরে ধীরে উঠছে, বাইরে বেরতে হবে, কী কী সতর্কতা মেনে চলতেই হবে

মাস্ক, স্যানিটাইজার, বার বার হাত ধোওয়া, এ সব তো বটেই, সঙ্গে নিতে হবে আরও কিছু বাড়তি সতর্কতা। তবেই অসুখ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।

বাইরে বেরলে আরও সতর্ক হোন। মেনে চলুন কিছু নিয়ম।

বাইরে বেরলে আরও সতর্ক হোন। মেনে চলুন কিছু নিয়ম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ১৫:২৩
Share
Save

চতুর্থ দফা লকডাউনের পর শুরু হয়েছে আনলকের প্রথম পর্যায়। অফিসকাছারিও নিয়মিত ভাবে খুলে যাবে আর কয়েক দিন পর থেকেই। সুতরাং এত দিনের গৃহবন্দি দশা ঘুচতে চলেছে। কিন্তু ভয় আর সমস্যা বোধহয় সেখানেই। করোনা এখনও ছেড়ে যায়নি আমাদের। বরং আরও জাঁকিয়ে বসেছে। এই অবস্থায় বাইরে বেরতে হলে বাড়তি সতর্কতা না নিলে বিপদ নিজেরই।

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মতে, “এই মাসে খুবই সতর্কতার পরীক্ষা দিতে হবে সকলকে। দেশের অর্থনীতি ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে লকডাউন ধীরে ধীরে উঠতে শুরু করলেও করোনা কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। তাই নিজের সতর্কতা নিজেকেই নিতে হবে। মাস্ক, স্যানিটাইজার, বার বার হাত ধোওয়া, এ সব তো বটেই, সঙ্গে নিতে হবে আরও কিছু বাড়তি সতর্কতা। তবেই অসুখ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে।”

৩১ মে পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৬৩ জন। মৃত্যুও প্রায় পাঁচ হাজার ছুঁই ছুঁই। এই অবস্থায় বাইরে বেরনো নিয়ে সঙ্কটে সাধারণ মানুষও। যেমন, বেলগাছিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সেমন্তী দত্ত। ৮ তারিখ থেকে অফিস যেতে হবে জানিয়ে দিয়েছে সেমন্তীর অফিস। কিন্তু এই অবস্থায় অফিসে লোকজনের ভিড়ে কাজ করলে সংক্রমিত হওয়ার ভয় ঘিরে ধরছে তার পরিবারকেও। সেমন্তী জানালেন, “অফিস তো যেতে হবেই এক দিন না এক দিন। এ দিকে রোগ সারছে কোথায়? রোজই তো সংক্রমণ বাড়ছে! ভয় তো একটা হয়ই।”

আরও পড়ুন: বাসে-ট্রামে উঠতে হবে এ বার, এই সব সতর্কতা না মানলে বিপদ বাড়বে

তবে নিয়ম মেনে চললে ততটা ভয়ের কিছু নেই বলেই মত অমিতাভবাবুর। বাড়তি কিছু নিয়ম মানার পক্ষে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শ্যামলকান্তি সরকারও। বাইরে বেরনোর আগে কোন কোন দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে? কী কী দাওয়াই দিলেন বিশেষজ্ঞরা?

কাজ মিটলেই বাড়ি

অনেক দিন পর বাইরে বেরতে পারছেন, অফিস যাচ্ছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই চেনা মুখ, প্রিয় মুখদের সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু কাজ শেষের পর একেবারেই জমায়েতে আড্ডা নয়। ‘মাস্ক পরেই তো আড্ডা দিচ্ছি’, জাতীয় কথাও এ সব ক্ষেত্রে খাটে না। অফিস বা কাজ সেরে দ্রুত বাড়ি ফিরুন। সেলফ-কোয়রান্টিনের যে নিয়মগুলো মেনে চলছেন, সেগুলোই চালিয়ে যেতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরবেন না। চেষ্টা করুন বাজার-দোকানও খুব সংক্ষেপে আর পারলে বাড়ি থেকেই সারতে। সে ক্ষেত্রে অনলাইন পরিষেবা নিতে পারেন। সেখানেও দূরত্ব বাঁচান।

হাত ধোওয়ার অভ্যাস ছাড়বেন না

হাত ধোওয়ার যে অভ্যাস এত দিন ধরে গড়ে তুলেছেন, লকডাউন উঠে গেলেও তা বজায় রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে জামাকাপড় বদলে ফেলুন, সাবান দিয়ে খুব ভাল করে হাত-পা কচলে ধুয়ে ফেলুন। এমনকি, করোনা-আতঙ্ক পুরোপুরি মিটলেও এই অভ্যাসটা ধরে রাখতে হবে। তাতে আরও অনেক রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে পারবেন। বাড়িতে থাকলেও ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিন।

মাস্ক ছাড়া ভুলেও বাইরে নয়।

মাস্ককে বন্ধু করুন

কোনও কারণে বাড়ির বাইরে যেতে হলে মাস্ক দিয়ে ভাল ভাবে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। তাতে শুধু কোভিড নয়, বাতাসের ধুলো-ময়লা, দূষণের হাত থেকেও রক্ষা পাবেন। মাস্ক পরলেই এই অসুখ প্রায় ৬০ শতাংশ রোধ করা যায়। অফিসে সেন্ট্রাল এসি থাকলে, সেখানেও খাবার সময়টুকু ছাড়া মাস্ক সরাবেন না। মাস্ক পরেই কথাবার্তা বলুন। তাতে একেবারেই অসুবিধা হয় না। কথা স্পষ্ট শোনার জন্য দরকারে জোরে কথা বলুন, কিন্তু মাস্ক সরাবেন না।

ভিড় এড়ান

অফিস মিটিংয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসুন। এই সময় কারও সঙ্গে টিফিন ভাগ নয়। অন্তত করোনাকে দমন না করা অবধি তো নয়ই। কোনও জনবহুল এলাকা এখন আগামী কয়েক মাসের জন্য এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। দোকানবাজারে বেশি লোক জমে গেলে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করুন বা অন্য দোকানে যান। ট্রাম, বাস, মেট্রোয় খুব ভিড় থাকলে উঠবেন না। সে জন্য হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে বেরবেন। যাতে ফাঁকা পরিবহণ না পেলে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে পারেন। যদি নিজস্ব গাড়ি বা বাইক থাকে, তা হলে তাকে প্রতি দিন স্যানিটাইজ করুন। অফিসের গাড়িতে যাতায়াত করলে হাতল ও সিট স্যানিটাইজ করে বসুন। অত কিছু না পারলে অফিসে পৌঁছেই ভাল করে হাত কব্জি অবধি ধুয়ে নিন। বাড়ি পৌঁছে ভাল করে স্নান করে নিন। চোখ-মুখ-নাক থেকে যতটা সম্ভব হাত দূরে রাখুন। কোনও ভাবে হাত দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে কাজ মিটিয়ে ফের হাতে সাবান দিন।

আরও পড়ুন: করোনা তো বটেই, আরও নানা রোগ তাড়াতে তামাককে গুডবাই করুন আজই

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন

কথা কম বলুন। কথা বলার সময়েও ড্রপলেট বেরয়। সর্দি-কাশি ও কথা বলার সময় যে ড্রপলেট বেরয়, সেখান থেকেও অসুখ ছড়ায়। সর্দি-কাশি হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার সঙ্গে রাখুন। হাঁচি, কাশির সময় মুখ, নাক ঢেকে নিতে ভুলবেন না। রুমাল প্রতি দিন ব্যবহারের পর ভাল ভাবে জলে ধুয়ে ও রোদে শুকিয়ে নেবেন

রেস্তরাঁ, পাব, পার্টি এড়িয়ে চলুন

রেস্তরাঁ খুলে গেলেও আপাতত বেশ কয়েক মাস এই সব থেকে দূরে থাকতেই হবে। ভিড় বেশি হয়, এমন সব জায়গাই এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতেও বড় পার্টি, বেশি লোকজন নেমন্তন্ন করা, এই সব কিছু দিনের জন্য হলেও বন্ধ রাখতে হবে। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। একান্তই খেতে ইচ্ছে হলে এক-আধ দিন অনলাইনে অর্ডার করুন। তবে তা ভাল করে বাড়িতেই গরম করে খান। আরও কয়েক মাস বাড়ির খাবারে মন দেওয়াই ভাল।

লকডাউন উঠলেই বাইরে বেড়াতে যাবেন না

লকডাউন শেষ হলেই মুক্তি পেয়েছেন ভেবে বাইরে ক’দিনের জন্য বেড়াতে চলে যাবেন না। আপাতত আরও কয়েক মাস নিরাপদে বাড়ি বা নির্দিষ্ট এলাকার ঘেরাটোপেই থাকুন।

আরও পড়ুন: করোনা থেকে বাঁচাতে বাচ্চাদের মাস্ক পরা ও হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন

মোবাইল রোজ সাফসুতরো রাখুন।

এ সব নিয়মের বাইরেও কিছু বাড়তি সতর্কতা নিন। যেমন:

• অফিসে বেরনোর সময় একটা ফ্লাস্কে গরম জল নিয়ে যান। বারে বারে অল্প করে গরম জল পান করলে করোনা-সহ যে কোনও ড্রপলেট সংক্রমণ কিছুটা অন্তত প্রতিহত করা যায় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।

• বেরনোর সময় মুখে কয়েক কুচি আদা রাখুন। আদার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রোগ ঠেকাতে সাহায্য করবে।

• এই সময়ে বাইরে বেরতে হলে ঘড়ি ও আংটি পরবেন না। এতে হাত পরিষ্কার করতে অসুবিধা হবে।

• মোবাইল রোজ পরিষ্কার করুন। বাইরে খুব বেশি মোবাইল ঘাঁটবেন না। দরকারি কলও মেসেজের জন্য ব্যবহার করলেও বাড়ি ফিরে তাকে ভাল করে স্যানিটাইজ করুন। মোবাইলের খাপও রোজ পরিষ্কার করতে হবে।

• ব্যাগে দু’টি মাস্ক রাখুন। মুখে বাঁধা মাস্ক কোনও কারণে নষ্ট হলে বা ভিজে গেলে কাজে লাগবে।

• বাড়ি ফিরে মাস্ক নিয়মিত কাচতে হবে। সার্জিকাল মাস্ক পরলে তা এক দিনের বেশি ব্যবহার করবেন না।

• জুতোর সঙ্গে মোজা পরুন। বাড়ি ফিরে জুতো-মোজা খুলে হাতে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যান।

• জুতো সাবান দিয়ে ধোওয়া সম্ভব নয় সব সময়। এমন হলে স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে নিন। রোদে শুকোতে পারলে ভাল হয়। তা সম্ভব না হলেও বাড়ির ভিতরের বাতাসে শুকিয়ে নিন।

• বাজারের ব্যাগ তো বটেই, অফিসের ব্যাগও সাবান জল, কীটনাশক মেশানো জল বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো জলে তুলো ভিজিয়ে তা দিয়ে মুছে নিতে পারেন। বাজারের ব্যাগ অবশ্যই কেচে নেবেন।

(ছবি: শাটারস্টক)

COVID-19 Mask sanitizer coronavirus Health Tips

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}