Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
covid-19

করোনা সেরে গিয়েছে মানে কি সত্যিই সুস্থ হলাম?

কোভিডের কোনও ওষুধ নেই। ফলে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের অ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না।

মাস্ক পরা ও শরীরের তাপমাত্রার স্ক্রিনিং করোনা প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার।

মাস্ক পরা ও শরীরের তাপমাত্রার স্ক্রিনিং করোনা প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ১৭:০০
Share: Save:

ফিরে ফিরে আসছে কোভিড-১৯। সেরে গেলেও নিষ্কৃতি নেই। চিনে সুস্থ হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশের শরীরে নতুন করে রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫০ জন নতুন করে আক্রান্ত। ইরানেও একই খবর। এমনকিআমাদের দেশেও এক ছবি। হিমাচল প্রদেশের উনা জেলার এক বাসিন্দা সুস্থ হয়ে বাড়ি যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফের উপসর্গ নিয়ে হাজির হয়েছেন। ফলে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের কপালে যেমন চিন্তার ভাঁজ, প্রবল অস্বস্তি ও আতঙ্কে আমরাও।একাধিকবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও কেন এত তড়িঘড়ি ফের রোগে পড়া!

রোগ কেন ফিরছে?

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন, “মূলত দু’টি কারণে এ রকম হতে পারে, হয় রোগটা রিল্যাপস করল, নয়তো ভাইরাস নিজেকে পাল্টে নতুন মূর্তিতে দেখা দিল। একটা উদাহরণ দিই। ধরুন, কারও ম্যালেরিয়া হয়েছে। চিকিৎসায় সেরে গেলেন। আবার কিছু দিন পর রোগে পড়লেন। তাঁকে কিন্তু নতুন করে মশা কামড়ায়নি। তা হলে রোগ হল কী করে? রোগের মূল আসলে শরীরেই লুকিয়ে ছিল। ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে পরজীবী লিভারে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। রোগ সেরে যাওয়ার মোটামুটি ৩-৬ মাস বাদে সুযোগ বুঝে আবার রক্তে চলে এসে রোগের সৃষ্টি করে। অর্থাৎ রোগ রিল্যাপস করে। ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় ক্ষেত্রে ঘটনাটা একটু অন্য ভাবে ঘটে। চিকিৎসা চলাকালীন যখন ওষুধে জীবাণুতে লড়াই শুরু হয়, জীবাণুরা চেষ্টা করে নিজেদের পাল্টে, অর্থাৎ মিউটেট করে ওষুধকে হারাতে। কিছু জীবাণু তা করেও ফেলে কখনও। ফলে রক্তে এরা বেঁচে থাকে। প্রথম বার রোগ সারার ২-৩ সপ্তাহ পর আবার ফিরে আসে রুদ্রমূর্তিতে।"

তাঁর মতে, কোভিডের কোনও ওষুধ নেই। ফলে ভাইরাস শরীরে ঢুকলে তার সঙ্গে লড়াই করে শরীরের অ্যান্টিবডি। প্রথম লড়াইয়ে ভাইরাস দমে গেলেও নিঃশেষ হয় না। তখন হয়তো ভাইরাস ও অ্যান্টিবডি থেকে যায় পাশাপাশি। সমানে সমানে যতদিন থাকে, সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় তখন, যখন সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। মাথাচাড়া দেয় ভাইরাস। রোগ রিল্যাপস করে। আর যদি অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়তে লড়তে ভাইরাস নিজেকে পাল্টে ফেলে অর্থাৎ মিউটেট করে যায়, তাহলে যারা নিজেদের পাল্টাতে পারল না তারা মরে রোগ তখনকার মতো সারলেও, পরিবর্তিত ভাইরাসগুলি আবার সময়ের সঙ্গে বংশবৃদ্ধি করে এবং আবার রোগ হিসেবে ফিরে আসে।

আরও পড়ুন: করোনার স্ট্রেস ঠেকাতে মদ্যপান? কী বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?

রিপোর্ট নেগেটিভ আসামাত্র মেলামেশা বা বাইরে কাজকর্ম করা ঠিক নয়।

আরও পড়ুন: মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার আর কত দিন? লকডাউনের এ সব অভ্যাস কি অসুখ ঠেকাবে?

কেন রোগ ফিরছে তা ধরার কোনও রাস্তা নেই?

“আছে, তবে ভবিষ্যতের গর্ভে।” জানালেন অমিতাভবাবু। তাঁর কথায়, রোগীর শরীর থেকে ভাইরাস নিয়ে তার জিন স্টাডি করতে হবে। জেনেটিক ম্যাপিং যাকে বলে। প্রথম বার রোগে পড়ার পর জিনের চরিত্র যা ছিল, দ্বিতীয় বার রোগের সময় তা পাল্টে গেলে বুঝতে হবে, ভাইরাস মিউটেট করার জন্য রোগ হচ্ছে। আর এক থাকা মানে সম্ভবত বিপত্তি ঘটেছে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ার জন্য।

কাদের রোগ ফিরবে, কাদের নয়?

অমিতাভবাবুর মতে, পাঁচ মাসের পুরনো ভাইরাস সম্বন্ধে অত নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না। তবে মনে হয়, যাঁদের সংক্রমণ একটু হালকা ধাঁচের হয় ও উপসর্গ হতে হতে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে যায়, তাঁদের দ্বিতীয় বার রোগে পড়ার আশঙ্কা কম। কারণ, ওই অত দিন ধরে ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে লড়তে প্রচুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তারাই কাজ করে রক্ষাকবচ হিসেবে। তবে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন বয়স্ক মানুষেরা, তাঁরা এই সুবিধে পান না সব সময়।

করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও বার বার পরীক্ষা নিশ্চিত করবে শরীরে ভাইরাসের অনুপস্থিতি।ছবি: পিটিআই।

রোগ সেরে যাওয়ার পর, একাধিকবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার কত দিন পর কাজে যাওয়া যাবে?

অমিতাভবাবু বলেন, “সেরে যাওয়ার দু’টি রূপ।১) ক্লিনিকাল সেরে যাওয়া, অর্থাৎ উপসর্গ কমে গেল, রোগী তরতাজা হয়ে গেলেন, ২) ভাইরোলজিকাল কিওর, অর্থাৎ শরীরে ভাইরাস নির্মূল হল। শরীর যতক্ষণ না ভাইরাসমুক্ত হচ্ছে, একটা আশঙ্কা থেকেই যায় যে আপনি আবার রোগে পড়তে পারেন বা রোগ ছড়াতে পারেন অন্যের মধ্যে।তবে আবার বলছি, নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় এখনও আসেনি।’’

তাঁর অভিমত, আসলে সমস্যা হচ্ছে ওষুধ নেই বলে। অ্যান্টিবডির সঙ্গে লড়াইয়ে ভাইরাসের মাত্রা কমে, কিন্তু সব সময় পুরো নির্মূল হয় না। আরটিপিসিআর পরীক্ষা করলে জানা যায় শরীরে ভাইরাস আছে কি নেই, কিন্তু এই পরীক্ষা তত সেনসিটিভ নয় যে শেষ কথা বলবে। কাজেই রিপোর্ট নেগেটিভ আসামাত্র মেলামেশা বা বাইরে কাজকর্ম করা ঠিক নয়। অন্তত দু’-তিন মাস কড়া নজরদারিতে থাকতে হবে। ঘন ঘন টেস্ট করতে হবে। তবে বলা যাবে তিনি পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে কবে নাগাদ ফিরতে পারবেন। তার আগে পর্যন্ত মাস্ক পরে থাকা, হাত ধোওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার কোনও বিকল্প নেই।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid-19 Coronavirus Novel Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy