সমসাময়িক বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং এ-পারে ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি’র আবহে মৌলবাদের বিরোধিতায় ফের সরব হল সিপিএম। সেই সঙ্গেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও সমাজতান্ত্রিক মহলে পালিত হওয়া ‘রেড বুক ডে’-তে আয়োজিত কর্মসূচি থেকে তারা মতাদর্শগত চেতনা এবং বাঙালি জাতিসত্তার চর্চাতেও জোর দিয়েছে তারা।
ন্যাশনাল বুক এজেন্সি (এনবিএ) শুক্রবার কলেজ স্কোয়ারে একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছিল। তারই অঙ্গ হিসেবে মহাবোধি সোসাইটি হলে আয়োজিত ‘ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময়’ বিষয়ের আলোচনা-সভায় যোগ দিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেই সঙ্গেই তিনি বলেছেন, “অনেক ভাষা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ভাষাকে কেন্দ্র করে যখন আন্দোলন হয়, তখন বুঝতে হবে, তার নেপথ্যে থাকে ফল্গুধারার মতো চিন্তা-ভাবনা। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে।” সভায় বক্তৃতা করেছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন-যাত্রার একশো বছর উপলক্ষে তাঁরই লেখার (‘জাপান-যাত্রী’ বই থেকে) একাংশ পাঠ করেছেন এনবিএ-র অধিকর্তা অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী।

ভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে প্রদীপ ভট্টাচার্য ও অন্য কংগ্রেস নেতারা। —নিজস্ব চিত্র।
‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’ প্রকাশের দিন উপলক্ষে পালিত ‘রেড বুক ডে’-র তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে সমাজ-চেতনায় জোর দিয়েছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তার পরেই তিনি বলেছেন, “মৌলবাদের ফলে বাংলাদেশে বিপদ ঘটছে। বাঙালি জাতিসত্তা, ভাষা, সংস্কৃতির বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এখানে বাজেট অধিবেশন শেষে জীবন-জীবিকার প্রশ্নটা দূরে চলে গেল। কে বেশি হিন্দু, আর কে শিল্পোদ্যোগীদের নিয়ে গর্ব করতে পারেন, এই আখ্যান তৈরি করা হচ্ছে!”

মৌলবাদ রোখার ডাক দিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারির মিছিল। —নিজস্ব চিত্র।
মৌলবাদ, আধিপত্যবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই মুজফ্ফর আহ্মদের একটি লেখা ও বঙ্গীয় আইনসভায় ১৯৪৬-এ জ্যোতি বসুর একটি বক্তৃতা-সহ প্রচারপত্র প্রকাশ করেছে। তা নিয়ে ২১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রচার কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে। পাশাপাশি, কলেজ স্ট্রিট চত্বরেই রাজ্যের সব স্কুলে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাংলা ভাষা-শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা-সহ পাঁচটি দাবিতে গণ-সই সংগ্রহ করেছে ছাত্র পরিষদ। কংগ্রেসের রাজ্য দফতর বিধান ভবনে এবং উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেস আয়োজিত কর্মসূচিতে ভাষা-শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। বঙ্গ-জীবনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)