Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, দূরত্ব ঘোচানোর আবেদন শহরে

আছে আইন, চেষ্টা আছে কি প্রশাসনের?

আজ, ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। কিন্তু তা নিয়ে স্কুল স্তরে কোনও প্রচার নেই। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা নিজেই স্বীকার করেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অধিকার নিয়ে প্রায় কোনও প্রচারই চালানো হয় না।

সবে মিলি: ওদের জন্য দিবস আছে আলাদা করে। কিন্তু তা শুধু সচেতনতার উদ্দেশেই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সবে মিলি: ওদের জন্য দিবস আছে আলাদা করে। কিন্তু তা শুধু সচেতনতার উদ্দেশেই। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

সাধারণ শিশুদের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পার্থক্য মেটাতে পাশ হয়েছে আইন। ২০০৯-এর শিক্ষার অধিকার আইনে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সকলের সঙ্গে একই ক্লাসে বসে পড়তে পারবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। কিন্তু নিয়মের সঙ্গে কি সব ক্ষেত্রে মেলে বাস্তব চিত্র, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। সে প্রশ্নের বাইরে নয় এ শহরের সরকার ও সরকার পোষিত বহু স্কুলও।

আজ, ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। কিন্তু তা নিয়ে স্কুল স্তরে কোনও প্রচার নেই। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা নিজেই স্বীকার করেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অধিকার নিয়ে প্রায় কোনও প্রচারই চালানো হয় না। কিন্তু কলকাতার ‘স্পেশ্যাল রিসোর্স সেন্টার’ অর্থাৎ, যেখানে ওই ধরনের শিশুদের জন্য পৃথক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয়। সাধারণ শিশুরা এই সম্পর্কে অবগতই হয় না। ফলে দূরত্ব থেকেই যায়। এই দূরত্ব দূর করতেই সাধারণ স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পড়ানোর আইন হয়। কিন্তু সে কাজ সত্যি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় সর্বশিক্ষা মিশনের কর্তারাই।

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, শহরে এক হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল ও প্রায় ৫০০টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল আছে। স্কুলগুলিকে ২৩টি সার্কেলে ভাগ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি সার্কেলে তিন-চার জন করে বিশেষ প্রশিক্ষক থাকার কথা। সে অনুযায়ী শহরে প্রায় ১০০ জন প্রশিক্ষক রয়েছেন। সংখ্যার বিচারে তা পর্যাপ্ত হলেও শিশুদের আদর্শ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কর্তারা। অর্থাৎ, আইন অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কোনও ভাবনাও তৈরি হয়নি প্রশাসনিক স্তরে।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, ওই বিশেষ প্রশিক্ষকদের নিয়োগ করা হয়েছিল ২০০৮ সালে। তার পরে দশ বছর হতে চললেও কোনও নতুন প্রশিক্ষক নিয়োগ হয়নি। যে ভাবে প্রতিনিয়ত সমাজের পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে আদৌ নতুন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে
খোদ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনী। ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় জানান, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পড়াতে হলে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। প্রতিনিয়ত তার মানোন্নয়ন করতে হয়। কিন্তু দশ বছর ধরে কোনও নিয়োগই হল না। বিশেষ করে যে সমস্ত শিশুদের অটিজম রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ সংবেদনশীল হতে হয়, সেটা সাধারণ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ‘‘তাই কাগজ-কলমে নানা কথা বলা হলেও আসলে উপেক্ষিতই থেকে যায় এই শিশুরা। খুব গুরুত্ব দিয়ে ভালবেসে এই শিশুদের হাত ধরা উচিত। তার জন্য প্রথমে সচেতনতার প্রয়োজন। সেটাই তো হচ্ছে না,’’ মন্তব্য তাঁর।

বিশেষ শিশুদের মূল স্রোতে ফেরাতে চাই

• সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে একই স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা

• বিশেষ প্রশিক্ষককে দিয়ে প্রশিক্ষণ

• স্কুলের সাইনবোর্ডে প্রাপ্য সুবিধেগুলি লিখে ঝুলিয়ে রাখতে হবে

• প্রয়োজনে স্কুলে ‘স্পেশ্যাল রিসোর্স সেন্টার’

খামতি

• সাধারণ পড়ুয়াদের মধ্যে ওই শিশুদের নিয়ে সচেতনতা নেই

• দশ বছর ধরে কোনও বিশেষ প্রশিক্ষক নিয়োগ হয়নি

• নতুন পদ্ধতির অভাব

• শিক্ষকদের ওই শিশুদের বিষয়ে সংবেদনশীল হওয়ার কোনও গাইড লাইন নেই

দফতরের আর এক কর্তা জানান, বিশেষ শিশুদের প্রশিক্ষকেরাও যথেষ্ট পরিমাণে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন। তবে তা যথেষ্ট নয়। সাধারণ শিশু ও অভিভাবকদের মধ্যে যে সচেতনতার অভাব রয়েছে, সে কথাও মনে করাচ্ছেন কর্তারা।

সম্প্রতি জোকার একটি স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিশুকে ইঙ্গিত করে জল চাওয়ার অপরাধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যার ভিত্তিতে ওই দুই শিক্ষিকাকে গ্রেফতারও করা হয়। তখনই সামনে আসে এই সমস্ত শিশুদের বিষয়ে সচেতনতার অভাবের প্রসঙ্গটি।
তার পরেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সাধারণ স্কুলে সাইনবোর্ডে উল্লখ করতে হবে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রাপ্য সুবিধার কথা। সঙ্গে সচেতনতা ছড়াতে হবে, যাতে এই শিশুদের কাছে টেনে নিতে শেখে শিক্ষক ও সহপাঠীরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE