ছোট ছোট বিষয়ে ভুলে যাওয়া মানেই যে ভবিষ্যতে স্মৃতিনাশ বা ডিমেনশিয়া হবে তা কিন্তু নয়। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা সদ্য ঘটা ঘটনা মনে না পড়ার মতো লক্ষণ, অন্য মনোরোগের কারণও হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলেন, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ বড় ছাতার মতো। এর নীচে আশ্রয় নেয় মনের আরও নানা অসুখ। শুরুটা ভুলে যাওয়া দিয়ে হলেও, আরও নানা উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। সেই সব উপসর্গ কিন্তু মুখে বা হাবভাবে প্রকাশ পায় তা নয়, বেশিটাই নাকি ধরা পড়ে চোখে। একজন ব্যক্তি ভবিষ্যতে স্মৃতিনাশের শিকার হবেন কি না, তা নাকি তাঁর চোখ দেখে বলে দেওয়া সম্ভব। এমনটাই দাবি করেছেন ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা।
‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ৮৬২৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা ও পুরুষকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। প্রত্যেকেরই একটি সহজ চক্ষু পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককেই একটি ত্রিভুজের মধ্যে ফুটে ওঠা নানা রঙের কয়েকটি বিন্দু শনাক্ত করতে দেওয়া হয়। দেখা যায়, যাঁরা ত্রিভুজ ও বিন্দুগুলি সে ভাবে দেখতেই পাননি বা নানা রঙের বিন্দু আলাদা করে শনাক্ত করতে পারেননি, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫৩৭ জন পরবর্তী সময়ে স্মৃতিনাশের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কয়েক জনের অ্যালঝাইমার্সও হয়েছে।
আরও পড়ুন:
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, স্মৃতিনাশ এক দিনে হয় না। ঠিক যেমন শরীরের দেহকোষগুলির ক্ষয় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একই হারে হয় না। কারও ক্ষেত্রে তা হয় দ্রুত হারে। কারও ক্ষেত্রে তা কম। তেমনই মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় এক দিনে হয় না। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে যা যা বদল হয় তার নিখুঁত ছবি অনেক আগেই ধরা পড়ে চোখে। সাধারণত যে কোনও অসুস্থতার লক্ষণ মুখে বা চেহারায় ধরা পড়ে। কিন্তু স্মৃতিনাশের ক্ষেত্রে তা হয় না। এক জন ব্যক্তি ১০ বছর বা ১২ বছর পরে স্মৃতিনাশের মতো রোগে আক্রান্ত হবেন কি না, তা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু বিশেষ কিছু চক্ষু পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে। চোখের মণির নড়াচড়া, দৃষ্টিশক্তি দেখে বলা যাবে, স্নায়বিক রোগ বাসা বাঁধছে কি না।
বহু জনের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ডিমেনশিয়া রোগীদের চোখের নড়াচড়া, চোখের পাতা ফেলার ধরন, তাঁরা কী কী দেখছেন এবং যা দেখছেন তার অর্থ বুঝতে পারছেন কি না, এই সবই কিন্তু অনেকটাই আলাদা। আসলে ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের স্নায়ুতে এক রকম টক্সিন জমা হতে থাকে। এই টক্সিনের কারণেই স্নায়ুতে কিছু বদল আসে। এই বদলটা চোখ দেখেই ধরা সম্ভব। আগামী দিনে এই গবেষণা স্মৃতিনাশের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি সারাতে কাজে আসবে বলেই দাবি করেছেন তাঁরা।