২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মা-মুক্ত করে তোলার প্রয়াস করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সেই উদ্দেশ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী টিবি মুক্ত ভারত অভিযান’ শুরু হয়। কত দ্রুত যক্ষ্মা চিহ্নিত করে তার চিকিৎসা শুরু করা যাবে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে শুরু করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। যক্ষ্মা নির্ণয় করার পদ্ধতি জটিল, খরচসাপেক্ষ এবং তা অনেক সময়েই নির্ভুল হয় না। এই সব খামতি দূর করার জন্যই নতুন এক যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে। গবেষকদের দাবি, এই যন্ত্রটিতে রোগীর নমুনা থেকে ডিএনএ আলাদা করে তার নিখুঁত বিশ্লেষণ করা যাবে। এবং এর খরচও নাকি থাকবে সাধ্যের মধ্যেই।
হুয়েল লাইফসায়েন্সেস যক্ষ্মা চিহ্নিত করার যন্ত্রটি তৈরি করেছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরে সেটিতে অনুমোদন দিয়েছে আইসিএমআর ও কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থা (সিডিএসসিও)। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, যন্ত্রটি কাজ করবে আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেন রিয়্যাকশন) পদ্ধতিতে। পুরনো পদ্ধতির চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুত রোগ নির্ণয় কতে পারবে এই যন্ত্র।
আরও পড়ুন:
যক্ষ্মা চিহ্নিত করতে রক্ত পরীক্ষা, স্কিন টেস্ট-সহ আরও নানা পদ্ধতি প্রচলিত ছিল এত দিন। সেগুলিতে রোগীর শরীর থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ আলাদা করে পরীক্ষা করার সময়ে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নষ্ট হয়ে যেত। বাতাসের সংস্পর্শে আসা মাত্রই নমুনা সংক্রমিতও হত। কিন্তু নতুন যন্ত্রটিতে তা হবে না বলেই দাবি গবেষকদের। নমুনা যন্ত্রের ভিতর ঢোকানোর পরে আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে তা ডিএনএ বা জিনগত উপাদানের বিশ্লেষণ করে সঠিক ভাবে জানাতে পারবে যে, টিউবারকিউলোসিসের জীবাণু আছে কি না। কেবল তা-ই নয়, জীবাণু রোগীর শরীরে কতটা ছড়িয়ে পড়েছে তা-ও নির্ভুল ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। কোভিডের সময়েও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতেই রোগীর শরীর থেকে নেওয়া নমুনার জিনগত পরীক্ষা করা হত। তাতে নির্ভুল রিপোর্টও আসত। যক্ষ্মা চিহ্নিত করতেও তাই সেই পদ্ধতিরই প্রয়োগ করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যক্ষ্মা আক্রান্তের নিরিখে ভারতের স্থান ছিল বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে এ দেশে যক্ষ্মা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার হারও সন্তোষজনক। ২০২০-২১ সালে যত মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার ৬০ শতাংশের বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে সমীক্ষায় জানা যায়। সে কারণেই রোগটি নির্মূল করতে আরটি-পিসিআর যন্ত্রটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দেশের বাজারে নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।