মশাবাহিত রোগ নিবারণে আশপাশের পুরসভাগুলোর কোনও পরিকাঠামো নেই। আর তারই ফল ভুগছে কলকাতা শহর। নয়াদিল্লিতে গিয়ে এ কথা জানিয়ে ওই সব পুরসভার পরিকাঠামো উন্নয়নে ‘ন্যাশনাল আর্বান হেল্থ মিশন’-এর কাছে আর্জি জানিয়ে এলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ।
ওই মিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করবেন তাঁরা। পুরসভা ওই বৈঠকের ব্যবস্থা করবে বলে অতীনবাবু জানিয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে বলেন, “ভেক্টর কন্ট্রোল কেন, কলকাতা ছাড়া অন্য পুরসভাগুলোতে স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনও পরিকাঠামোই নেই।” এ ব্যাপারে ন্যাশনাল আর্বান হেল্থ মিশনের সহায়তা প্রয়োজন বলে স্বাস্থ্যসচিব জানান। সরকারি ভাবে তার জন্য যোগাযোগও করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনভিবিডিসিপি)-এর ডাকে গত ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির নির্মাণ ভবনে পতঙ্গবাহী রোগ নিবারণ বিষয়ক এক আলোচনাসভা হয়। ওই প্রকল্পে অভিজ্ঞতার নিরিখে সেখানে ডাকা হয়েছিল কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরকেও।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে কলকাতায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ চরম আকার নেয়। ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন বহু মানুষ। মশা দমন ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের গাফিলতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। ওই ঘটনায় বিচলিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বছরের শুরু থেকেই মশা নিবারণের কাজে নামতে নির্দেশ দেন রাজ্য ও পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অফিসারদের। সেই মতো ২০১৩ সালের শুরু থেকেই কাজ শুরু করে কলকাতা পুর-প্রশাসন। পতঙ্গবাহী রোগ নিবারণে ‘কোমর বেঁধে’ নেমে সুফলও মিলেছে বলে দাবি পুর-প্রশাসনের। এক ধাক্কায় আক্রান্তের হারও কমে যায়। সেই কাজ ২০১৪ সালেও একই ভাবে চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এ কাজে সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার মাধ্যমেই রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়েছে।
ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ায় পাশাপাশি এ বার রাজ্যের কয়েকটি জেলায় জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে (জেই) আক্রান্ত হওয়ার খবরও ভাবিয়ে তুলেছে পুর-প্রশাসনকে। ইতিমধ্যেই ওই রোগে একাধিক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে কলকাতার হাসপাতালে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য যুক্তি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই জেই আক্রান্ত রোগী কলকাতার বাইরে থেকে ওই রোগের জীবাণু নিয়ে এসে শহরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর পাশাপাশি গত ক’দিনে শহরের হাসপাতালে একাধিক রোগীর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে।
অতীনবাবুর কথায়, “আমরা কখনওই বলিনি ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া পুরোপুরি দমন করা গিয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্দেশিকা মেনে মশা নিবারণে অনেকটাই সাফল্য মিলেছে।” যদিও মশা দমনে শুধুমাত্র কলকাতায় ব্যবস্থা নিলে হবে না। কলকাতা লাগোয়া পুরসভা এলাকাগুলোতেও একই ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন অতীনবাবু। তাঁর কথায়, “প্রতিদিন বাইরে থেকে ৪০-৫০ লক্ষ মানুষ কলকাতায় আসেন। আবার ফিরে যান। তাঁদের শরীরে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার জীবাণু থাকলে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর জানতেও পারে না।” তাই কলকাতার পাশাপাশি অন্য পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলোকেও একই ভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
এ সব কথাই এ বার দিল্লিতে জানিয়ে ন্যাশনাল আর্বান হেল্থ মিশনের কাছে জানিয়ে এসেছেন অতীনবাবু। তিনি জানান, কলকাতার কাজ দেখে ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য ১০টি এলাইজা পরীক্ষার যন্ত্র দিচ্ছে ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন প্রকল্পের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা। বর্তমানে তাঁদের কাছে ওই যন্ত্র রয়েছে পাঁচটি। অতীনবাবু জানান, আর্বান হেলথ মিশনের অধিকর্তা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব জানান, রাজ্যের অন্য পুরসভাগুলোতে পতঙ্গবাহী রোগ নিবারণে পরিকাঠামো গড়তে আর্থিক সহায়তা করা হবে। অক্টোবরে এ নিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy