Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Kolkata’s Cristmas

কলকাতার ক্রিসমাস মানে কি কেবলই পার্ক স্ট্রিট? মফস্‌সলের এক বাঙালি খ্রিস্টানের গল্পে যিশুপুজোও হয় বাঙালির ঘরে

স্বর্গীয় শান্তির সুরকে বুকে নিয়ে রাত জাগে কলকাতা। রাত জাগে শিমুরালি, চাকদহ, কৃষ্ণনগর, কালিম্পং, দার্জিলিং। গির্জা থেকে গির্জায় গম্ভীর দ্যোতনায় বেজে ওঠে অর্গ্যান। খ্রিস্টমাস যে ভাবে আসে বঙ্গযাপনে…

Bengal’s Christmas, a journey through different times and spaces

এ শহরে বরফ পড়ে না। তবু ক্রিসমাস আসে তার পূর্ণ জৌলুস নিয়েই। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১২
Share: Save:

“… হাওয়া আসছে কয়েক শ বছর থেমে থেমে/ কুয়াশারা সরে এলো, কে যেন নামছে, চুপ, খড়ে, বেথেল্‌হেমে…” — ‘ক্রিসমাস’/ ‘ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’/ জয় গোস্বামী।

এ শহর বেথেলহেম নয়। এখানে শীতের রাতে আস্তাবলে আশ্রয় নেওয়া কোনও দম্পতি আলোকপুরুষের জন্ম দেননি। ক্রান্তীয় দেশের এই শহর বরফ পড়তেও দেখেনি, স্লেজগাড়ি দেখেনি, বলগা হরিণের শিং দেখেনি, সান্তাক্লজ়ের উড়ন্ত দাড়িও দেখেনি। এ শহরের গলি থেকে রাজপথ, পৌষের হিমে ঠান্ডা ট্রামলাইন, অ্যাসফল্ট, ফুটপাথ, বস্তি, বহুতল, বাংলো কিংবা তার চৌহদ্দি ছাড়িয়ে মফস্‌সল, গাঁ-গঞ্জ, ভাটি-উজানের নদী— কেউ দেখেনি পাইন-ফারের অরণ্যের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলা পোলার এক্সপ্রেস। তবু কেন জানা নেই, ফি বছর ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পার হতে না হতেই উত্তুরে হাওয়ার সুখী-সুখী শীত গায়ে মেখে কেমন অচেনা হয়ে যায় চারপাশ। এখনও এই একদা-উপনিবেশের শহরে মাথা তুলে দাঁড়ায় ঝালর-ঝোলর ঋজুসবুজ গাছ। তার মাথার উপর তারা। তার পাতার ডগায় কারা যেন ঝুলিয়ে রাখে উপহারের বাক্স, রঙিন বল, তুষারপানা পেঁজা তুলোর টুকরো। শপিং মলে ছেয়ে যাওয়া শহরের ঠিক বুকের মাঝখানটিতে বুড়ো থুত্থুড়ে হয়ে যাওয়া লাল দেওয়ালের বাজারটির ভিতরে তখন সদ্য বেক করা কেকের গন্ধে, রঙিন শিকল, ঝালর, ঋজুসবুজ গাছ আর সান্তার মূর্তিতে মাতোয়ারা এক অন্য জগৎ। কানের কাছটিতে কয়েকশো বছর ধরে থেমে থেমে আসা হাওয়া বলে ওঠে— “মেরি ক্রিসমাস! মেরি ক্রিসমাস!!”

কলকাতার ক্রিসমাস যাপন যেমনটি, তেমনটি কি ভারতের আর কোনও শহরে ঘটে? ভিন্‌শহর থেকে আসা স্বজনেরা ক্রিসমাসের কলকাতা দেখলে খানিক হকচকিয়ে যান। ঠিক কেন এই শহর এক বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের উৎসবকে আপন করে নিয়ে তাতে মাখিয়ে দিল বাঙালিয়ানার প্রলেপ, তা আগন্তুকদের বোঝানো কঠিন। এই শহরের ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্রে ঢুকে থাকা আরও অনেক শহরের কথা মনে করিয়ে দিতে পারে এই সময়টিই। মনে পড়ে যেতে পারে রিপন স্ট্রিট, বো ব্যারাক থেকে সেন্ট পলস কলেজের সংলগ্ন খ্রিস্টান কম্পাউন্ডের কথা, পার্ক স্ট্রিটের বিপুল ভিড় এড়িয়ে ইলিয়ট রোড বা কড়েয়ার মতো পাড়ায় রাস্তা জুড়ে টাঙানো কাগজ-শেকল আর তারা চমকানো সন্ধ্যার কথা।

Bengal’s Christmas, a journey through different times and spaces

বাঙালি বাড়ির ক্রিসমাস। খ্রিস্টগাছ আর আলো।

ইংরেজরা তাঁদের শাসনকালের গোড়ার পর্বে নেটিভদের দুর্গোৎসবে বাইনাচ দেখতে গেলেও নিজেদের খ্রিস্টোৎসবে যে নেটিভদের আপ্যায়ন করতেন না, তা অনুমান করা যায়। তার পরেও কেন এই শহর একান্ত আপন করে নিল, সেই অঙ্ক বোঝা কিন্তু অতখানি সহজ নয়। উত্তর-উপনিবেশবাদীরা হয়তো এর মধ্যে দাসত্বের ‘সিম্পটম’ দেখতে পাবেন, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় যাকে বলে ‘রক্তের দাগ’। কিন্তু চেন্নাই বা মুম্বই শহরেও তো ইংরেজদের দাপুটে সাহেবিয়ানার ফোয়ারা কম ছিল না। সেখানেও কি এতখানি আহ্লাদে যিশুপুজো উদ্‌যাপিত হয়? না কি বাংলার জলে-হাওয়ায়, শাক্ত-বৈষ্ণবের উদার কোলে দিব্যি বসে পড়েন সেই জ্যোতির্ময় পুরুষটিও? আজ থেকে কয়েক দশক আগেও যে কোনও মেলায় মাটির রবি ঠাকুর, গণেশ ঠাকুরের পাশটিতে ক্রসবিদ্ধ যুবকটির মূর্তিও পাওয়া যেত, এখনও হয়তো যায়। কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণিতে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া মাটির কাজের সমারোহে তো তিনি রয়েছেনই। কখনও ক্রসে, কখনও বা মা মেরির কোলে, কখনও বাবার কাঁধে। সে অঞ্চলে বাঙালি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এক বড় অংশের বাস। কিন্তু তাঁরাই কি এই সব মূর্তির একমাত্র খরিদ্দার? মনে তো হয় না। কেমন করে, কোন জাদুতে যিশু খ্রিস্ট যে বাঙালির দেবলোকের পাকাপোক্ত বাসিন্দা হয়ে গেলেন, তার হিসাব নেওয়া দুরূহ।

জন্মাষ্টমীর পরের দিন তালের বড়া যেমন ‘মাস্ট’ হয়ে রয়েছে বাংলার আবহমানে, তেমনই ক্রিসমাসের কেক। কলকাতা, মফস্‌সল, গ্রামগঞ্জে প্রায় যিশুপ্রসাদের মর্যাদায় কেকোৎসব। ব্র্যান্ডেড বেকারির রিচ ফ্রুট থেকে পাড়ার পাউরুটির কারখানা থেকে বেরোনো লাল-হলুদ ‘চিমকাগজ’-এ জড়ানো কেক। ফুটপাথ থেকে পাঁচতারা, মধ্যবিত্তের দাওয়া থেকে রাতজাগা ডিস্কোথেক, কেকপ্রসাদে ধন্য সব্বাই। নিউ মার্কেটের নাহুম’স-এ যাঁরা লাইন দিতে পারেননি, তাঁরা খানিক এগিয়ে অন্য বেকারির কেকেই খুঁজে নিয়েছেন ক্রিসমাসের চেনা গন্ধটিকে। কেউ আবার বো ব্যারাকের বাসিন্দাদের নিজেদের হাতে বেক করা কেকের সন্ধানে। পাড়ার মোড়ের দোকানটিতেও দীপাবলির বাজির মতো, দোলের রঙের মতো সাজানো কেক। উত্তর কলকাতার বড়দিন অনুষঙ্গ ছিল একদা বড়ুয়াদের বাটিকেক। তাকে কি আজও খুঁজে পাওয়া যায়? রিচ ফ্রুট, রোস্টেড আমন্ড উইথ রেজি়ন বা ওয়াইনের মৃদু সুরভিমাখা কেকের বৈচিত্র তাকে ঢেকে ফেললেও, তার স্মৃতিও কি ঢাকা পড়ে গিয়েছে?

কলকাতার ক্রিসমাস-লীলার কেন্দ্রভূমি আজ পার্ক স্ট্রিট। সরকারি পৃষ্ঠপোষণায় সেখানে কার্নিভালের আমেজ। অ্যালেন পার্কে ‘ক্যারল’। এটুকু আমেজ পেতেই শহর ভেঙে পড়ে সেখানে। অন্য দিকে ‘মিডনাইট মাস’ সারার পর একে একে খুলে যায় শহরের ছোট-বড় গির্জার দরজা। এক পাশে ‘ক্রিব’ (যিশুর জন্মবৃত্তান্তের মডেল রূপ) আর সারা গায়ে আলোর মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে জাঁকালো সেন্ট পল্‌স ক্যাথিড্রাল থেকে নেহাতই ঘরোয়া বেথেল উপাসনালয় (বাংলায় লেখা)। সন্ধ্যা গড়াতে না গড়াতেই পার্ক স্ট্রিটে মানুষের ঢল। নামী রেস্তরাঁগুলিতে যাঁরা আসন পেলেন, তাঁরা চাইলে ইংরেজ আমলে গিয়ে ডার্বির লটারি খেলে আসতে পারেন, জয় অনিবার্য। আর যাঁরা পেলেন না, তাঁরা উৎসবকে টেনে নিয়ে গেলেন অন্যত্র। সাহেবি ডিনার না হলেই বা কী! বিরিয়ানি-চাঁপের জন্য খোলা রয়েছে পার্ক সার্কাস, মল্লিক বাজার।

Bengal’s Christmas, a journey through different times and spacesBengal’s Christmas, a journey through different times and spaces

কেক, কলকল আর রোস্ট কুকি।

এ তো গেল বারো-ইয়ারি বৃত্তান্ত। কিন্তু এই উৎসব যাঁদের, সেই বাঙালি খ্রিস্টানদের কেমন কাটে দিনটি? কথা হচ্ছিল শিয়ালদহের সুরি লেনের বাসিন্দা জেমস মণ্ডলের সঙ্গে। রিয়্যাল এস্টেট ক্ষেত্রের কর্মী জেমস ক্যাথলিক। বাড়ি থেকে কিছু দূরের হাঁটাপথে সন্ত যোহনের গির্জা বা সেন্ট জন’স চার্চে ‘মিডনাইট মাস’-এ যোগ দেন সপরিবার। তার আগে বেশ কয়েক দিন ধরে চলে প্রস্তুতি। আগে থাকতেন ঠাকুরপুকুরে, তারও আগে ছেলেবেলা কেটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর কাছে ফুলবাড়ি গ্রামে। জেমসের ঠাকুরদার ঠাকুরদা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ফুলবাড়িতে প্রায় সবাই খ্রিস্টান। সেখানে আজও বসে ক্রিসমাসের মেলা। সময়-সুযোগ পেলে সেখান থেকে ঘুরে আসেন জেমসও। এক সময়ে দেশের বাড়িতে ৩০-৪০ জনের পাত পড়ত ক্রিসমাসের দিনে। এখন অবশ্য গ্রামেও অণু-পরিবারের হাওয়া। তবে কলকাতার বাড়িতে ক্রিসমাস বেশ জমিয়েই পালন করেন জেমস।

বড়দিনের আগে বেশ কিছু দিন ধরেই চলে ক্রিসমাসের কেনাকাটা। বিশেষ করে কেকের মশলা (মূলত ড্রাই ফ্রুটসের ব্যাপারে জেমস বেশ খুঁতখুঁতে)। কিনে আনার পর সেই সব মশলাকে ভাল করে শুকোতেও হয়। তার পর সেগুলি নিয়ে বাড়ির কাছের এক বেকারি থেকে বেক করে আনার পর্ব। বাড়িতে আবার জেমস-ঘরনি তৈরি করেন রোস্ট কুকি। ফুলের মতো দেখতে সেই কুকিদের। সুজি, ময়দা, নারকেল দিয়ে তৈরি হয় সেটি। আর তৈরি হয় ‘কলকল’। ময়দা, নারকেল, সাদা তিল আর চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি পদ। এই সব লোভনীয় খাবার কিন্তু পড়শিদের জন্যও। বড়দিনের সকালেই বিতরণ শুরু। তার আগেই অবশ্য সারা হয়ে গিয়েছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’ সাজানোর পর্ব। তাঁদের বাড়িতেও তৈরি হয় ‘ক্রিব’। খ্রিস্টের জন্মের সেই চিরন্তন দৃশ্যটি প্রতি বছরই ফুটিয়ে তোলেন জেমস আর তাঁর পরিবার।

Bengal’s Christmas, a journey through different times and spaces

‘ক্রিব’। ঘরের এক কোণেই বেথলেহেম।

বড়দিনের বিশেষ খাওয়ার ব্যাপারে জেমস একেবারেই আর পাঁচজন বাঙালির মতোই। বিরিয়ানি আর গাজরের হালুয়ার কথা উল্লেখ করলেন ক্রিসমাসের স্পেশ্যাল মেনু হিসাবে। বোঝাই গেল, বাংলাব্যাপী বিরিয়ানি বিপ্লবে নিজেকে সঁপে দিয়েছে ক্রিসমাসও। অবশ্য, যস্মিন দেশে যাদাচার। পদ মুখ্য নয়, উদ্‌যাপনের আনন্দটুকুই তো উৎসবের প্রাণভোমরা।

দিনকাল বদলে গিয়েছে। এক সময় ‘ক্রিসমাস ইভ’ থেকেই আকাশবাণী কলকাতার ‘ক্যালকাটা বি’ চ্যানেলে ভারী কণ্ঠস্বর উপচে উঠত জিম্ রিভসের। ‘জিঙ্গল বেল্‌স জিঙ্গল বেল্‌স জিঙ্গল অল দ্য ওয়ে’। অধুনালুপ্ত এফএম রেনবো-র ‘আজ রাতে’ অনুষ্ঠানে দু’ঘণ্টা জুড়ে খ্রিস্টকথা আর ক্যারলের উদ্‌যাপনের স্মৃতি আজও হয়তো কেউ কেউ মনে রেখেছেন। আকাশবাণী ভবনের পাশ্চাত্য সঙ্গীতের লাইব্রেরি থেকে বার করে আনা হত এমন সব রেকর্ডকে, যারা এই একটি দিনের জন্যই বাজত। বেজে উঠতেন পেরি কোমো, এলভিস প্রেসলি অথবা ক্রিস্টি লেন। দুপুরের ‘মিউজিক্যাল ব্যান্ডবক্স’-এ ক্রিস্টি লেনের চিরনবীন গান ‘ওয়ান ডে অ্যাট আ টাইম সুইট জেসাস’ কি আজ নিছক স্মৃতি মাত্র? হবেও বা! প্রযুক্তি বদলেছে। নবীন প্রজন্মের কাছে ক্রিসমাস স্পটিফাই বা প্রাইম মিউজ়িকের দৌলতে যখন-তখন লভ্য। রজার হুইটেকারের ব্যারিটোনের সুতো আঁকড়ে বেজে ওঠেন অকালপ্রয়াত জর্জ মাইকেল তাঁর ‘লাস্ট ক্রিসমাস’ নিয়ে। প্রেজেন্টার রত্না সেন, রঞ্জন মিত্রেরা আজ কেউই নেই সেই পাথরের বাড়িতে। তবু ক্রিসমাস আছে। চল্লিশ পেরোনো পশ্চিমি গানের রসিক বাঙালির মনের এক কোণে রয়ে গিয়েছে ‘লিটল ড্রামার বয়’ অথবা ‘সান্তা ক্লজ় ইজ কামিং টু দ্য টাউন’। একটু কান পাতলেই হয়তো ছুঁয়ে ফেলা যায় সেই সব সুরকে।

‘সাইলেন্ট নাইট, হোলি নাইট/ অল ইজ় কাম, অল ইজ় কোয়ায়েট/ রাউন্ড ইয়োন ভার্জিন মাদার অ্যান্ড চাইল্ড/ হোলি ইনফ্যান্ট সো টেন্ডার অ্যান্ড মাইল্ড/ স্লিপ ইন হেভেনলি পিস…’

স্বর্গীয় শান্তির সেই সুরকে বুকে নিয়ে রাত জাগে কলকাতা। রাত জাগে শিমুরালি, চাকদহ, কৃষ্ণনগর, কালিম্পং, দার্জিলিং। গির্জা থেকে গির্জায় গম্ভীর দ্যোতনায় বেজে ওঠে অর্গ্যান। ‘আভে মারিয়া’। খ্রিস্টকীর্তনের আসর বসে কোথাও নিখাদ বাংলায় ‘ধরো লও রে ঈশ্বরের প্রেম/ যিশু ডাকেন আয়’… আউল-বাউলের বাংলা, কৃত্তিবাস-কাশীরামের বাংলা, রামপ্রসাদ-লালনের বাংলা তত ক্ষণে মাতোয়ারা।

হাওয়া বয়। কয়েকশো বছর ধরে থেমে থেমে হাওয়া বয়, ভাগীরথী তীরে এমন হাওয়ার রাতে দাঁড়ালে হয়তো আঠারো শতকের পালজাহাজটিকে দেখা যাবে, যার ডেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উইলিয়াম কেরি অথবা একটু নির্জন গলি পার হতে গিয়ে দেখা মিলতে পারে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহনের অথবা মধুকবি এসে নিঃশ্বাসের শব্দে বলে যেতেই পারেন— ‘তিষ্ঠ ক্ষণকাল’। হাওয়া থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। পার্ক স্ট্রিটের রোশনাই থেকে দূরে, গির্জার বাজনার থেকে দূরে, ক্যারলের উদ্ভাস থেকে দূরে ফুটপাথ আলো করে হয়তো ঘুমোচ্ছে সদ্য জন্ম নেওয়া কলকাতার যিশু। যে অমোঘ তারাটিকে দেখে মানবপুত্রের জন্মের কথা জানতে পেরেছিলেন প্রাচ্যের তিন বিজ্ঞজন, সেই তারাটি তত ক্ষণে আলো ফেলেছে সেই সদ্যোজাতের ঘুমন্ত মুখটিতে। শহর জুড়ে উড়ে বেড়ায় কেক থেকে খসে পড়া চিমকাগজ। কেকের ভারী গন্ধ ম্লান হয়ে আসে। একটু একটু করে উষা স্পর্শ করে ফুটপাতের কোণ। আবার হাওয়া বয়। অনাগত শত শত বছরের দিকে বয়ে যায় সেই হাওয়া। যাওয়ার পথে জন লেনন আর ইয়োকো ওনোর কণ্ঠ ধার নিয়ে বলে যায়— ‘সো দিস ইজ় ক্রিসমাস/ অ্যান্ড হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান?/ অ্যানাদার ইয়ার ওভার/ অ্যান্ড আ নিউ ওয়ান জাস্ট বিগ্যান’।

হাওয়া বয়ে যায় অনন্তের দিকে।

ছবি: জেমস মণ্ডলের সৌজন্যে।

অন্য বিষয়গুলি:

Christmas 2024 ChristMas Day Christmas Celebration Church
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy