অমৃত ফল আমের বাহারে মন ভোলে না এমন মানুষ বোধ হয় কমই রয়েছেন।
প্রতি দিন চড়চড়িয়ে বাড়ছে রোদের পারদ। ঘেমেনেয়ে নাজেহাল জীবনে যদি ফূর্তি বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবে তা আছে একমাত্র এই বস্তুটিতেই। কাঁচা হোক বা পাকা, বাঙালির পাতে আপাতত কয়েক মাস রোজ উঠবেন তিনি। কিন্তু তারই সঙ্গে রোজ মনে ঘুরঘুর করবে দুশ্চিন্তা। রোজ রোজ আম খাচ্ছি, মোটা হব না তো? সুগার লেভেল ঠিক থাকবে তো?
আমাদের মনে আম নিয়ে এমন হরেক ভুল ধারণা রয়েছে। অথচ গোলাপখাস, ল্যাংড়া, হিমসাগর এ সবকে চিন্তার দোহাই দিয়ে বাদ দিই কী ভাবে। ঠিক কতটা আম খাওয়া উচিত? আমের যাবতীয় উপকার-অপকারগুলি জেনে নিলে সহজেই চিন্চামুক্ত হবেন।
ডায়াবিটিস আক্রান্ত মানুষ কি আম খেতে পারে?
পুষ্টিবিদ মালবিকা দত্ত জানাচ্ছেন, আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০ এর বেশি। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কার্বোহাইড্রেটের সূচক। যত কম গ্লাইসেমিক রেটের খাবার খাওয়া হবে ততই শরীরের ভাল। ডায়াবিটিসের রোগী আম খেতে পারেন না, এ কথা ভুল। তবে ভরপেট খাওয়ার পরে দুপুরে বা রাতে আম খেলে তাঁর রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে বুদ্ধি করে আম খেতে হবে। যে দিন সকালে ব্রেকফাস্টে আম খাওয়া হচ্ছে, সেদিন দুপুরে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। দেখতে হবে শরীরে জমা অতিরিক্ত ক্যালরি যেন ঝরিয়ে ফেলা যায়।
আরও পড়ুন: মারণ এইচআইভির লক্ষণগুলি জানেন? সতর্ক হোন প্রথম থেকে
পাকা মিষ্টি আম একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম খেতে পারেন। মানে প্রতিদিন একটি ছোট আম বা অর্ধেক মাঝারি আম খাওয়া যাবে।
আম খেলে কি ওজন বাড়ে?
আরও পড়ুন: কারণে-অকারণে রক্তক্ষরণের শিকার হতে পারেন হিমোফিলিয়ায়, জেনে নিন কী করবেন
একটি সাধারণ হিমসাগর বা ল্যাংড়া আমের খোসা ও আঁটি ছাড়িয়ে নিলে প্রায় ২০০ গ্রাম অবশিষ্ট থাকে। এতে ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় ১৫০। শর্করা ৩৩.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ২.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৫০০০ মাইক্রোগ্রামের উপর। আঁশ আছে প্রচুর, ৭ গ্রামের বেশি। পটাশিয়াম ১৯৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩০২ মিলিগ্রাম।
যে দিন সকালে ব্রেকফাস্টে আম খাওয়া হচ্ছে, সেদিন দুপুরে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে।
এই ব্যাপারেও সেই একই কথা বলছেন মালবিকা দেবী। খাবারে পরে আম খেলে শরীরে অতিরিক্ত শর্করা যোগ হয়। যাঁরা ক্যালোরি মেপে খাবার খান, তারা আমকে পাতে রাখতে খামোকা ভয় পাবেন না।
আমের অন্যান্য গুণ
• আমের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোলন-সহ প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্তন ক্যানসার ও লিউকিমিয়ার ক্ষেত্রেও আমের উপকার লক্ষণীয়। এতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইমও থাকে।
• ত্বকের যত্নেও অনেক উপকারি এই ফলটি। ভিতর ও বাইরে থেকে ত্বককে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের রোমের গোড়া পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে আম।
• আম চোখের জন্যও উপকারী। মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘এ’-এর চাহিদার প্রায় পঁচিশ শতাংশের যোগান দিতে পারে। ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে। আমে পাওয়া যায় টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড ও সাইট্রিক অ্যাসিড যা শরীরে অ্যালকালাই বা ক্ষার ধরে রাখতে সহায়তা করে। আমে রয়েছে এনজাইম, যা শরীরের প্রোটিন অণুগুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এ ছাড়াও আমে রয়েছে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনয়েডস যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে রাখবে সুস্থ ও সবল।
কাজেই, জমিয়ে আম খান। শুধু রাশটা টানুন সময় মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy