Advertisement
E-Paper

বিছানাতেই ব্যায়াম শুরু

সকালে কাজের গতি আসবে শারীরচর্চায়। কী কী করবেন রইল তার হদিস।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৯
Share
Save

সকালে ঘুম থেকে উঠে ঝিমিয়ে থাকলে হবে? হাত-পা চালিয়ে কাজও তো করতে হবে! উঠতে-বসতে এ ধরনের কথা আশপাশে অনেককেই বলতে শোনা যায়। কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠেই কি তরতরিয়ে কাজ করা যায়! আবার রাতভর ঘুম ভাল হলেও, সকালে ওঠার সময়ে গা-হাত-পায়ে অসহ্য ব্যথাও হয় অনেকেরই। সঙ্গী হয় মাসল ক্র্যাম্প, পা ঝিনঝিন, পিঠ-কোমর-ঘাড়ে ব্যথা… আরও অনেক কিছুই। নতুন কিছু কিন্তু নয়, এ ধরনের সমস্যা অনেকেরই হয়। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মাঝেমধ্যে এমনটা হতেই পারে। কিন্তু নিয়মিত এমন সমস্যা স্বাভাবিক নয়। ফিটনেস প্রশিক্ষক সৌমেন দাস বলছেন, এ ধরনের সমস্যাকে বলা হয় ‘মর্নিং মোবিলিটি প্রবলেম’।

সৌমেন বলছেন, অল্প বয়সে মর্নিং মোবিলিটির সমস্যা হতে পারে। তবে চল্লিশের পর থেকেই এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। এ সময় অনেকেরই স্পাইনাল কর্ডের নীচের দিকে ব্যথা হয়। সঙ্গে হাঁটু, পা, থাইয়ের ব্যথায় কাবু থাকেন অনেকে। রাতে ঘুমানোর কারণে দীর্ঘ সময় পেশিগুলি রিল্যাক্সড থাকে। ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ে সমস্যা বেশি হয়। এ সমস্যার থেকে সমাধান কঠিন কিছু নয়। নিয়মিত বিছানায় মাত্র দশ মিনিটের সহজ কিছু ব্যায়ামই এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কী করতে হবে?

  • প্রথম আসন করুন ঘুম ভাঙার পর বিছানায় শুয়েই। শুরু করতে পারেন স্ট্রেচিং দিয়ে। দীর্ঘক্ষণ শুয়ে থাকার ফলে পেশি তার স্বাভাবিক নমনীয়তা হারায়। তা ফিরিয়ে আনতে হাত দুটো মাথার উপরের দিকে রেখে চিৎ হয়ে একদম সরলরেখায় শুয়ে পড়ুন। হাত দুটোকে একে অপরের সঙ্গে লক করে নিন। এ বার পা-সহ পুরো শরীর টানটান করুন। পায়ের আঙুলগুলোও নীচের দিকে টেনে ধরুন। এই অবস্থায় ১৬ গুনুন। তিন-চার সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে ফের করুন। অন্তত দশবার করুন এই ব্যায়াম।
  • এ বার চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় হাত দুটো শরীরের দু’পাশে ছড়িয়ে এমন ভাবে রাখুন, যেন তা শরীরের সঙ্গে সমকোণে থাকে। বাম পা সোজা রেখে ডান পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করুন। এ বার ডান পা শরীরের বাঁ দিকে নিয়ে গিয়ে এমন ভাবে টুইস্ট করুন যেন ডান হাঁটু খাট ছোঁয়। এই অবস্থায় পনেরো গুনুন। ফের একই পদ্ধতি অন্য পায়ে করুন। মোট ছয় সেট করুন এই ব্যায়াম।
  • পরের ধাপে ফের সরলরেখায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো রাখুন শরীরের দুই পাশে। বাঁ পা সোজা রেখে ডান পা তুলে দিন উপরের দিকে এমন ভাবে, যাতে শরীরের সঙ্গে তা সমকোণ তৈরি করে। শরীর-সহ পা শক্ত রাখুন। এ বার দুই হাত দিয়ে পা টেনে ধরুন বুকের দিকে। এই অবস্থায় পনেরো গুনুন। ছেড়ে দিয়ে একই পদ্ধতিতে অন্য পায়ে করুন ব্যায়ামটি। মোট দশ বার করবেন এই ব্যায়াম।
  • এ বার বালাসন। শিশুর হামাগুড়ি দেওয়ার ভঙ্গিতে বসুন খাটের উপর। পশ্চাদ্দেশ পায়ের পাতার উপর রেখে, হাত দুটো মাথার উপরের সোজা তুলুন। এ বার শরীর সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে কপাল ঠেকান বিছানায়, সাষ্টাঙ্গে প্রণামের ভঙ্গিতে হাত রাখুন হাঁটুর সঙ্গে সোজা। এই অবস্থায় দশ অবধি গুনুন। খেয়াল রাখবেন পায়ের পাতার উপর থেকে শরীর যেন না ওঠে এবং কনুই যেন ভাঁজ না হয়। রোজ চার থেকে পাঁচ সেট করুন এই ব্যায়াম।
  • সঙ্গে করুন মার্জারাসন-বিটিলাসন বা ক্যাট-কাউ ভঙ্গি। এর জন্য প্রথমে চার হাতে পায়ে ভর দিয়ে বসুন। হাতের পাতা ও হাঁটুকে সমান্তরালে রাখুন। এ বার প্রথমে মাথা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে পিঠ উঁচু করুন। কুড়ি সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে মাথা যতটা সম্ভব উপরের দিকে তুলুন। সে সময় পেটকে নামিয়ে আনুন মাটির কাছাকাছি। খেয়াল রাখবেন হাত যেন কনুই থেকে ভাঁজ না হয়।

মনে রাখবেন, ব্যায়াম সেরেই তড়িঘড়ি খাট থেকে নেমে পড়বেন না। বরং ধীরেসুস্থে খাটের ধারে খানিক পা ঝুলিয়ে বসুন। গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা প্রথমে ক্লকওয়াইজ় পাঁচ বার, পরে অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ় পাঁচ বার ঘোরান।

সৌমেন বলছেন, “মর্নিং মোবিলিটি বাড়াতে মূলত এই পাঁচ থেকে ছ’টি ব্যায়ামই যথেষ্ট। এতে আলস্য কেটে গিয়ে কাজে গতিশীলতা যেমন বাড়বে, তেমনই কম থাকবে শরীরের নানা যন্ত্রণাসমূহও। সকালে ঘুম থেকে উঠে জিমে যান অনেকেই। প্রশিক্ষকদের মতে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কিন্তু মর্নিং মোবিলিটি বাড়ানোর এই ব্যায়াম ভাল। জিমে গিয়ে শারীরিক কসরতের সময় এতে সুবিধেই হয়। পাশাপাশি কেটে যায় মানসিক অবসাদও।”

তবে কেবল চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নয়, শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি, রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাব, অতিরিক্ত ওজন কিংবা ভুল ভঙ্গিমায় শোয়া ইত্যাদি নানা কারণে অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের নানা অংশে ব্যথা হতে পারে। সৌমেনের মতে, সকল বয়সের মানুষের পক্ষেই তাই এই ধরনের ব্যায়াম দিয়ে দিন শুরু করা ভাল। তবে দীর্ঘ দিন এই ধরনের শারীরচর্চার পরেও যদি ব্যথা না কমে, উপকার না পাওয়া যায়, তবে কিন্তু অবশ্যই শরীরে অন্য কোনও রোগের বাসা বাধার সম্ভাবনা থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত জরুরি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Exercises Health Tips Fitness Fitness Tips

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}