বাইক বা গাড়ি একটা শখ, দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণ। রোজকার কাজ ছাড়াও শখের বাইক বা গাড়িটি নিয়ে লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়েন অনেকেই। সেই অভিজ্ঞতাই আরও সুন্দর ও নিরাপদ হবে যখন সময়, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট হবে আপনার গাড়ি, স্কুটি বা বাইকটি। রইল কিছু উপায়—
গাড়ির জন্য
- ড্যাশ ক্যামেরা: গাড়ির সামনে ও পিছনের সমস্ত ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ড রাখে। এআই নির্ভর হলে রাস্তার ভিড় বিচার করে চালককে গতি বাড়ানো-কমানোর পরামর্শ দেয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলে সতর্ক করে। কিছু ড্যাশ ক্যামে জিপিএস ও পার্কিং সেন্সরের সুবিধেও থাকে।
- ডোর শক অ্যাবজ়র্ভার: রাবার, সিলিকন প্যাডের তৈরি হাইড্রলিক বা গ্যাস-স্প্রিং জাতীয় ছোট ডিভাইস, যা বনেট, দরজা, বুট বা তার ফ্রেমের সঙ্গে লাগানো হয়। এতে গাড়ির দরজা ধীরে বন্ধ হয়। ডেন্ট, স্ক্র্যাচের ভয় কমে, গাড়ির ফ্রেমের ক্ষতি কম হয়।
- ড্রাইভার মনিটরিং সিস্টেম: এআই নির্ভর এই ডিভাইস চালকের চোখ, মুখভঙ্গির খেয়াল রাখে। চালক ক্লান্ত হয়ে গেলে বা ঘুমিয়ে পড়লে ভাইব্রেশন ও তীক্ষ্ণ আওয়াজ দিয়ে সতর্ক করে। রাতে বা লং ড্রাইভে সুবিধেজনক।
- স্মার্ট স্ক্রিন ও হেডস-আপ ডিসপ্লে: টাচ স্ক্রিনের সুবিধেযুক্ত এই ডিভাইসে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস... থাকায় এর সাহায্যে গাড়িতে ফোন, ম্যাপ, মিউজ়িক প্লেয়ার ব্যবহার করা যায়। এতে মিরর স্ক্রিন, নিজস্ব স্টোরেজ, স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণের সুবিধে রয়েছে। হেডস-আপ ডিসপ্লেতে গাড়ির গতি, নেভিগেশন উইন্ডশিল্ডে ভেসে ওঠে।
- স্মার্ট জিপিএস ট্র্যাকার: গাড়ির রিয়েল টাইম লোকেশন ট্র্যাক করে। এতে গাড়ি চুরি হলে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। এই ডিভাইস ড্রাইভিং হিস্ট্রি, স্পিড রিপোর্টও দেয়।
- ব্লুটুথ টায়ার প্রেশার মনিটরিং সিস্টেম: এর সাহায্যে টায়ারের উপরে কতটা চাপ পড়ছে, তার আন্দাজ চালক মোবাইলে পান। টায়ার পাংচার বা বার্স্ট হওয়ার আগে চালককে সতর্ক করে এই স্মার্ট ডিভাইস।
- স্মার্ট কভার: এআই, রিমোট কন্ট্রোল, সেন্সর, সোলার চার্জিং, অ্যান্টি-থেফট বিভিন্ন ফিচার থাকে। অটোমেটিক হুক বা স্ট্র্যাপ থাকে, যাতে ঝড়ে উড়ে না যায়। কিছু কভার মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে বাবলের মতো তৈরি হয়ে গাড়িকে সুরক্ষা দেয়, কিছু আবার ছাতার মতো খুলে গাড়িকে ছায়া দেয়। এ ছাড়াও, মাল্টি-ডিভাইস চার্জার লাগাতে পারেন, তা দিয়ে ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জ করা যায়। গাড়িতে স্মার্ট জাম্প স্টার্টার রাখতে পারেন, গাড়ির ব্যাটারি ডেড হয়ে গেলে তা কাজে দেয়। ড্যাশ বোর্ডে লাগাতে পারেন অ্যান্টি-স্লিপ ম্যাট, ম্যাগনেটিক চার্জিংয়ের সুবিধেযুক্ত মোবাইল হোল্ডার। ব্লাইন্ড স্পট মনিটর, এআই ড্রাইভিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিভাইসও লাগাতে পারেন। এআই গাড়ির স্টিয়ারিং, ব্রেক, গতি নিয়ন্ত্রণ করে। লেন সেন্টারিং, টার্নিংয়েও সাহায্য করে।
বাইক বা স্কুটির জন্য
গাড়ির মতো বাইক, স্কুটির জন্যও এমন কিছু স্মার্ট ডিভাইস রয়েছে—
- স্মার্ট বাইক লাইট: দৃশ্যমানতা অনুযায়ী অটোমেটিক ব্রাইটনেস বদলায়। ব্রেক করলে বা গতি বাড়লে আলোর রং বদল হয়। পিছন থেকে গাড়ি এলে সিগনাল দেয়।
- জিপিএস বাইক কম্পিউটার: লাইভ লোকেশন, ম্যাপ, গন্তব্যের দূরত্বের সঙ্গে চালকের হার্ট রেট দেখায়। ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায়, বাইক চুরি হলে এই ডিভাইসের সাহায্যে তৎক্ষণাৎ ইঞ্জিন বন্ধ করা যায়।
- স্মার্ট লক: ব্লুটুথের সঙ্গে কানেক্টেড হওয়ায় ফোনের সাহায্যে খোলা-বন্ধ করা যায়। চালক নির্দিষ্ট দূরত্বে সরে গেলে বাইক আপনা থেকেই লক হয়ে যায়। বাইক চুরি হলে ফোনে নোটিফিকেশন আসে, অ্যালার্ম বাজে।
- স্মার্ট টার্ন সিগনাল: হ্যান্ডেলে এই সিগনাল থাকে, যা ওয়াটারপ্রুফ। টার্ন নিলে লাইট স্বয়ংক্রিয় ভাবে জ্বলে ওঠে, রাতের রাস্তায় যা বিশেষ সুবিধে দেয়। ভয়েস কম্যান্ডিংয়ের সুবিধে রয়েছে।
এ ছাড়া, স্মার্ট হেলমেট ব্যবহার করতে পারেন। গাড়ির কিছু ডিভাইসও দু’চাকায় ব্যবহার করা যায়। বাইকের স্মার্ট কভারে বিল্ট-ইন চেন, প্যাডলক থাকে। রোদে বাইক যাতে গরম না হয়ে যায়, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা থাকে।
কার ডেকরেশনের দোকানে বা অনলাইনে এ সব ডিভাইস সহজলভ্য। সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন দামে পাওয়া যায় এই ডিভাইসগুলি। তবে কেনার আগে তা যাচাই করে নেওয়া দরকার।