অগ্নিকাণ্ডে ছাই ‘জয় জয় শিব শঙ্কর’ গান খ্যাত শিবমন্দির। ছবি: সংগৃহীত।
জম্মু ও কাশ্মীরের গুলমার্গের মহারানি মন্দিরে বুধবার ভয়াবহ আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে পুরো মন্দিরটাই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, দমকল ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। তত ক্ষণে অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়ে অনেকখানি। কেবল গুলমার্গের বাসিন্দারাই নয়, এই মন্দির দেখতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্তেরা এসে ভিড় জমান।
মহারানি মন্দিরটি মোহিনীশ্বর শিবালয় নামেও পরিচিত। এই মন্দির গুলমার্গের অন্যতম আকর্ষণ। শীতে তুষারঢাকা চূড়া এবং গরমের সময় সবুজ তৃণভূমি দ্বারা বেষ্টিত এই মন্দিরের সৌন্দর্য ছিল নজরকাড়া। মন্দিরটি মহারাজা হরি সিংহের স্ত্রী রানি মোহিনী বাই সিসোদিয়া ২০ শতকের গোড়ার দিকে তৈরি করেছিলেন। এখানে নিয়মিত শিব-পার্বতীর পুজো করা হত। কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, গোলাম মহম্মদ শেখ নামে এক মুসলমান এই মন্দিরের দায়িত্ব নেন। তিনি প্রায় ২৩ বছর ধরে এই মন্দিরের দেখাশোনা করেছিলেন। এই মন্দিরে কোনও পুরোহিত না থাকায় তিনি সম্পূর্ণ পুজোর পদ্ধতিও শিখেছিলেন। পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে শিবের সেবা করতেন তিনি। গোলাম মহম্মদ শেখকে ওখানকার স্থানীয় মানুষ ‘পণ্ডিতজি’ নামে চেনেন।
মন্দিরে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মন্দিরের এখনকার পুরোহিত পুরুষোত্তম শর্মা বলেছেন যে মন্দিরে শর্ট সার্কিটের কারণেই আগুন লেগেছিল এবং প্রবল হাওয়ার কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের কাঠের কাঠামোতে আগুন ধরে যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটে।
মন্দিরটি পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর, মন্দির সম্পর্কিত অনেক গল্প স্থানীয় মানুষের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই মন্দিরটি ১৯১৫ সালে নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই মন্দিরটি গুলমার্গ ও আশপাশের এলাকার বহু মানুষের বিশ্বাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থেকেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মন্দিরটি মহারানি মন্দির নামে পরিচিতি লাভ করে। এই মন্দিরটির মূল কাঠামো তৈরি হয়েছিল মূলত কাঠ এবং পাথর দিয়ে। বড় বড় রঙিন জানালা-সহ বারান্দা— মন্দিরের রূপটাই ছিল অসাধারণ। এই মন্দিরটিতে এক প্রান্ত থেকে সারা গুলমার্গের ঝলক দেখা যেত।
গুলমার্গে ঘুরতে গেলে এই মন্দির ছিল পর্যটকদের কাছে অন্যতম সেরা আকর্ষণ। এই মন্দিরটিতে অনেক সিনেমার শুটিংও হয়েছে। ‘আপ কি কসম’-এর ‘জয় জয় শিব শঙ্কর’ গানে রাজেশ খান্না ও মুমতাজের নাচের শুটিং হয়েছিল এই মন্দিরের ঠিক সামনে। এ ছাড়াও ‘আন্দাজ’ এবং ‘কাশ্মীর কি কলি'’ ছবিতেও এই মন্দিরের ঝলক দেখা গিয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই যাঁরা গুলমার্গ ঘুরতে যাচ্ছেন, তাঁরা মহারানি মন্দিরের এই শোভা চাক্ষুষ করতে পারবেন না। মন্দির পুননির্মাণের কাজ কবে শুরু হবে সে বিষয় এখনও কোনও তথ্য মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy