Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

নাম ভাঁড়িয়ে কিডনি দানের শুনানিতে, গ্রেফতার

একই ব্যক্তি। শুধু বদলে যেত নাম। একাধিকবার বিভিন্ন মহিলার স্বামী সেজে কিডনি দানের শুনানিতে হাজির হয়ে কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন খড়্গপুরের ভবানীপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস। খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে কিডনি দানের একাধিক শুনানিতে তাঁকে দেখে মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সন্দেহ হয়। সোমবার শুনানিতে বিশ্বজিতকে হাতেনাতে ধরেন মহকুমাশাসক। পরে খড়্গপুর টাউন থানার আইসি দীপক সরকারের হাতে বছর তিরিশের ওই যুবককে তুলে দেন সঞ্জয়বাবু।

ধৃত যুবক বিশ্বজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।

ধৃত যুবক বিশ্বজিৎ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৭
Share: Save:

একই ব্যক্তি। শুধু বদলে যেত নাম।

একাধিকবার বিভিন্ন মহিলার স্বামী সেজে কিডনি দানের শুনানিতে হাজির হয়ে কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন খড়্গপুরের ভবানীপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস। খড়্গপুরের মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে কিডনি দানের একাধিক শুনানিতে তাঁকে দেখে মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সন্দেহ হয়। সোমবার শুনানিতে বিশ্বজিতকে হাতেনাতে ধরেন মহকুমাশাসক। পরে খড়্গপুর টাউন থানার আইসি দীপক সরকারের হাতে বছর তিরিশের ওই যুবককে তুলে দেন সঞ্জয়বাবু।

এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী মহকুমাশাসক নিজের কার্যালয়ে কিডনি দানের শুনানিতে বসেছিলেন। হাজির ছিলেন গ্রহীতা খড়্গপুরের পোর্টারখলি রেল কলোনির মিনা পারেখ। কিডনি দাতা হিসেবে ছিলেন সবিতা দে। তাঁর বাড়ি শহরের ভবানীপুরের পারিজাত সঙ্ঘের কাছে। সবিতাদেবীর অভিভাবক হিসেবে তাঁর স্বামীর পরিচয় দিয়ে এসেছিলেন বিশ্বজিৎ। তবে এ দিন তিনি নিজেকে বিমল দে হিসেবে পরিচয় দেন। শুনানিতে বিচারকের আসনে মহকুমাশাসক ছাড়াও ছিলেন অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল। শুনানি চলাকালীন সবিতাদেবীর স্বামীকে আগেও শুনানিতে দেখেছেন বলে সন্দেহ হয় বিচারকমণ্ডলীর। এর পরেই পুরনো ফাইল ঘেঁটে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।

স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, কারএ কিডনি প্রয়োজন হলে তিনি কোনও দাতার থেকে তা নিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন নিষিদ্ধ। দাতা ও গ্রহীতা দু’পক্ষকেই স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন করতে হয়। তারপর শুনানিতে উভয় পক্ষকে অভিভাবক-সহ উপস্থিত থাকতে হয়।

মহকুমাশাসকের দফতর সূত্রে খবর, গত ফেব্রুয়ারিতে এক শুনানিতে ওই যুবক নিজেকে বিশ্বজিৎ দাস বলেই পরিচয় দিয়েছিলেন। সে বার তিনি স্ত্রী সুলেখা দাসের কিডনি দান করতে চান বলে জানিয়েছিলেন। এরপর ফের সোমবার শুনানিতে বিশ্বজিৎ নিজেকে বিমল দে হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্ত্রী সবিতা দে’র কিডনি দান করতে চান বলে জানান। মহকুমাশাসক-সহ শুনানির বিচারকমণ্ডলীর বিশ্বজিৎ দাসকে দেখে চেনা মনে হয়। তাঁরা আগের শুনানির ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। বিশ্বজিৎ পরে জানান, অভাবের কারণেই এই কাজে জড়িয়েছেন। যদিও এর পিছনে বড় কোনও চক্র জড়িয়ে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বিশ্বজিতকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “আগেও ওই ব্যক্তি অন্য একটি কিডনি দানের শুনানিতে অন্য একজনের স্বামী পরিচয় দিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে আমাদের সন্দেহ হওয়ায় আমরা আগের ছবি মিলিয়ে দেখি। এর পরেই ওকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।”

যদিও বিশ্বজিতের পরিবারের দাবি, এর পিছনে আরও অনেকে রয়েছে। বিশ্বজিতের সঙ্গে কলকাতার সঞ্জু রাও নামে এক ব্যক্তির পরিচয় হয়। সঞ্জু আপাতত খড়্গপুরের গিরিময়দানের কাছে থাকেন বলেই ধৃতকে জানিয়েছিলেন। তিনিই সবিতা দে-র সঙ্গে বিশ্বজিতের যোগাযোগ করান। বিশ্বজিতকে সঞ্জুই সবিতাদেবীর স্বামী বিমল দে হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে রাজি করান। ধৃতের পরিবার এও স্বীকার করেছে যে, এই কারবারে অর্থ লেনদেন হত। ধৃতের স্ত্রী সুলেখা দাস বলেন, “মাস কয়েক আগে সত্যিই আমার টাকা প্রয়োজন ছিল। তাই আমি কিডনি দিতে চেয়েছিলাম। সঞ্জু রাও নামে এক ব্যক্তি কলকাতার এক লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তখন ৪ লাখ টাকায় কিডনি দেওয়ার কথা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা না হওয়ায় আমি কিডনি দিইনি।”

এ দিন গ্রেফতারের পরে বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুনানির সময় আমার স্ত্রীর কিডনি দানের জন্য আমিই গিয়েছিলাম। তবে এ বার সবিতা দে-র স্বামী সাজার জন্য আমাকে সামান্য টাকার লোভ দেখিয়েছিল সঞ্জু রাও। তিনি এ দিন শুনানির সময়েও ছিলেন। কিন্তু আমি ধরা পড়ার পরেই সঞ্জু ফোন বন্ধ করে রেখেছে।” পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে আরও বড় কোনও চক্র জড়িয়ে রয়েছে কিনা, তদন্তে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE