আমার মনে হয় কেউ যেন টেলিপ্যাথির মাধ্যমে আমার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে। কলেজে সেকেন্ড ইয়ার থেকে এই সমস্যা শুরু হয়। ডাক্তারের কাছে সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি স্কিৎজোফ্রিনিয়া-র রোগী বলে গাদা গাদা ওষুধ দেন। কিন্তু আমি এটা মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অত্যন্ত মানসিক চাপে মাঝেমধ্যে স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলি। খালি মনে হয় আড়াল থেকে কেউ আমাকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে আবার আত্মহত্যার প্ররোচনাও দেয়। তখন ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এর ফলে আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনও কাজই গুছিয়ে করতে পারছি না। আমার কী করা উচিত?
স্কিত্জোফ্রিনিয়া সম্পর্কে কোনও ধারণা আছে কি তোমার? এটি মূলত নিজের চিন্তাধারা এবং অনুভূতির অসংলগ্নতার অসুখ। মুডি ‘ডিলিউশন’ এবং হ্যালুসিনেশন এই স্কিৎজোফ্রিনিয়া রোগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
ডিলিউশন হল চিন্তাধারার সমস্যা, যেখানে কোনও একটি বধ্যমূল ধারণা মাথার মধ্যে এমন ভাবে গেঁথে যায় যে এই বিশ্বাসের পরিপন্থী কোনও যুক্তিই তখন খাটে না। এর বিভিন্ন রকমফের আছে। কখনও মনে হতে পারে যে লোকে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। আবার কখনও মনে হয় যে লোকে আমায় নিয়ে আলোচনা করছে বা নানা রকম চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এই যে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে দৈহিক সম্পর্ক, এটা ডিলিউশন-এরই অন্তর্গত।
হ্যালুসিনেশন বা অডিটরি হ্যালুসিনেশন হলে, বাইরে থেকে কানের মধ্যে শব্দ বা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে যখন এগুলির কোনও বাহ্যিক উৎস নেই। এরও নানা রকম প্রকাশ হতে পারে। মনে হতে পারে, এক বা একাধিক মানুষ তোমাকে নিয়ে সারা ক্ষণ কথা বলে বা সমালোচনা করে চলেছে। আবার এও মনে হতে পারে, তোমার এই মুহূর্তে কী করা উচিত বা উচিত নয়, সেই নিয়ে আদেশ কিংবা উপদেশ দিয়ে চলেছে কেউ (কমান্ড হ্যালুসিনেশন)।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন পাঁচ ইন্দ্রিয়ের অন্য চার ইন্দ্রিয় অর্থাৎ চোখ, নাক, জিভ বা ত্বকের মাধ্যমেও প্রকাশ হতে পারে। তবে স্কিৎজোফ্রিনিয়ার ক্ষেত্রে অডিটরি হ্যালুসিনেশন-ই সব থেকে বেশি দেখা যায়। এই যে তুমি লিখেছ তোমাকে আড়াল থেকে কেউ উত্ত্যক্ত করছে, অথচ তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ না। এটাই অডিটরি হ্যালুসিনেশন। আর এই যে আত্মহত্যার প্ররোচনা, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এটি কমান্ড হ্যালুসিনেশন-এর অন্তর্ভুক্ত। এবং এর মাত্রা বেড়ে গেলে কিন্তু কোনও অবাঞ্ছিত বিপদ ঘটে যেতে পারে, যেটা তুমি মোটেও চাও না।
স্কিৎজোফ্রিনিয়া-র সৃষ্টি মস্তিষ্কের গঠন এবং রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার কিছু গোলমালে। জিন ঘটিত কারণে (অর্থাৎ বংশে যদি কারও এই অসুখ থাকে) এই রোগ হওয়ার প্রবণতা থাকে। পারিপার্শ্বিক চাপে এই লক্ষণগুলি প্রকট হয়।
এর চিকিৎসার প্রধান স্তম্ভ কিন্তু ওষুধ। এই রোগের যে ধাপে তুমি আছ, তাতে ওষুধ না খেয়ে উপায় নেই। মনে রেখো, পৃথিবীতে এমন কোনও ওষুধ নেই যার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আশার কথা এই যে, আমাদের হাতে কিন্তু এই রোগের চিকিৎসার অনেক ওষুধ আছে এবং অনেক সময় একটি ওষুধেই কাজ হতে পারে।
আমরা চিকিৎসকরা ওষুধ দেওয়ার আগে দুটো জিনিস মাথায় রাখি। এক, কার্যকারিতা আর দুই, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এই দুটো ব্যালেন্স করে ওষুধ দিতে হয়। ওষুধ কিন্তু দীর্ঘ দিন প্রয়োগ করতে হয় যাতে রোগটা নিরাময়ের পর আর ফিরে না আসে। চিঠিতে লিখেছ যে চেষ্টা সত্ত্বেও তুমি জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ খুঁজে পাচ্ছ না। তোমার এই চেষ্টার এক বড় সঙ্গী হচ্ছে ওষুধ। তাই অবিলম্বে এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ শুরু করো এবং অবশ্যই পড়াশোনা, মেলামেশা এবং সামাজিক অন্যান্য কাজকর্মে আগের ভূমিকায় ফিরে এসো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy