প্রশ্ন: কলেজে পড়ি। কিন্তু এই কলেজে পড়ার ইচ্ছে আমার ছিল না। চেয়েছিলাম কলকাতায় ভাল কলেজে পড়তে। কিন্তু নানা কারণে আমাকে স্থানীয় একটি সরকারি কলেজে পড়তে হচ্ছে। মা-বাবা বলেছিলেন, তাঁদের অত সামর্থ্য নেই, আমাকে কলকাতার ভাল কলেজে পড়ানোর মতো। তা ছাড়া, আমি নাকি এমন রেজাল্ট করিনি যাতে ওখানে গিয়ে পড়তে পারি। প্রসঙ্গত, আমি বোর্ডের পরীক্ষায় ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম। ভীষণ অবসাদে ভুগছি। যখন আমার বন্ধুরা তাদের পছন্দের কলেজে পড়ার নানা অভিজ্ঞতা আলোচনা করে, তখন ভীষণ খারাপ লাগে। মনে হয়, আমার দ্বারা আর কিছু হবে না। কী করব আমি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর দিলেন
সৌরজিৎ দাস
তোমার চিঠির বয়ান পড়ে মনে হচ্ছে তুমি হীনম্মন্যতায় ভুগছ। তার অনেকগুলো কারণ। এক, তুমি তোমার পছন্দের কোনও কলেজে পড়তে পারোনি; দুই, তোমার বন্ধুরা তাদের পছন্দের কলেজে পড়ছে; তিন, তুমি বোর্ডের পরীক্ষায় যে নম্বর পেয়েছে, সেটা তোমার বাবা-মায়ের মতে এমন কিছু ভাল নয়; আর চার, তুমি নিজেও সম্ভবত বাবা-মায়ের এই ধারণাটাই সত্যি বলে মনে করছ। বোর্ডের পরীক্ষায় তুমি ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলে। সেটা মোটেই কম নম্বর নয়। হতেই পারে ওই নম্বর তোমার বাবা-মায়ের প্রত্যাশামতো হয়নি, বা তোমারও। কিন্তু যে নম্বরটা পেয়েছ, তাতে হীনম্মন্যতা আসা বা অবসাদে ভোগার মতো কিছু হয়নি।
তা ছাড়া, নিজের পছন্দের কলেজে পড়তে পারোনি বলে যে তোমার জীবনটাই ফুরিয়ে গেল, এমনটা ভাবছ কেন? বুঝতে পারছি বোর্ডের পরীক্ষার রেজাল্ট এবং ভাল কলেজে ভর্তি না হতে পারার কারণে তোমার আত্মসম্মানে একটা ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু তুমি বোধ হয় কোনও দিন ভেবে দেখোনি যে এই পরিস্থিতি তোমার সামনে একটি সুবর্ণ সুযোগও তৈরি করে দিয়েছে। এই সুযোগে নিজের কলেজের ভাল ছাত্র হওয়ার চেষ্টা করো। পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার চেষ্টা করার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে গভীর ভাবে জানা শুরু করো। দেখবে, তখন সবাই তোমাকে সম্মানের চোখে দেখছে। পরীক্ষা আর নম্বরকেই লক্ষ্য না করে বরং বিষয়টা নিয়ে ভাল করে জানার লক্ষ্যে এগোও।
স্নাতক স্তরের পরে তুমি নিশ্চয়ই আরও পড়বে। তখন কলকাতায় চলে আসতেই পারো। তুমি যে বিষয় নিয়ে পড়ছ সেই বিষয়ে কলকাতায় অথবা অন্য কোনও শহরে ভাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে খোঁজখবরও নিতে পারো এখন থেকে। যদি বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে, তা হলে তোমাকে জিআরই, টোয়েফল বা আইইএলটিএস-এর মতো পরীক্ষা দিতে হবে। তোমার ভবিষ্যৎ কতখানি তোমার পছন্দসই হবে, তা কিন্তু তোমার উপরেই নির্ভর করছে। তাই সমস্ত মন খারাপ ঝেড়ে ফেলে, নিজের ভবিষ্যৎ তৈরির ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করো। নিজের কেরিয়ার কী ভাবে গড়বে, তার এক ছক তৈরি করে ফেলো। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে শুরু করো, তোমার বিষয় সংক্রান্ত পড়াশোনা, উচ্চশিক্ষা, চাকরিবাকরির রোডম্যাপ তৈরি করো। যা হয়ে গিয়েছে, সেই নিয়ে অযথা ভাবনাচিন্তা করে সময় নষ্ট না করে আগামী সময়টা নিয়ে ঠিকমতো পরিকল্পনা করো।
শেষে, তোমার বাবা-মায়ের কথায় আসি। তাঁরা তোমাকে তাঁদের অসামর্থ্যের কথা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে তোমারও উচিত তাঁদের দিকটা বিচার করা। তুমি কিন্তু ভাগ্যবান। এমন অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে আছে, যাদের কলেজে পড়ার সুযোগটুকুও থাকে না। কিন্তু শুধু আর্থিক সমস্যার জন্যই কি বাবা-মা উদ্বিগ্ন, না কি অন্য কোনও কারণও আছে? সেটা একমাত্র তুমিই বার করতে পারবে। খোলাখুলি বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলো। তাঁদের মনোভাব জানার চেষ্টা করো। তাঁদের ভাল করে বোঝাও যে তুমি জীবনে কী করতে চাও, আর তা করতে গেলে তাঁদের সাহাস্য ও সমর্থন তোমার কাছে খুবই জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy