এমবিএ যারা পড়তে আসে তাদের অধিকাংশেরই ইংরেজিতে কথা বলতে অসুবিধে হয় না। কিন্তু সমস্যা হয় লেখার ক্ষেত্রে। যে কোনও সংস্থায় ম্যানেজারদের হামেশাই রিপোর্ট লিখতে বা প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। সেখানে বাক্যগঠন বা বানান ভুল কিংবা ব্যাকরণগত সমস্যা কেরিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই সমস্যার মোকাবিলা করতেই বেশ কিছু বছর ধরে আইআইএমগুলি-সহ অনেক ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানই ‘রিট্ন এবিলিটি টেস্ট’ বা ‘WAT’ পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রার্থীর কোনও বিষয়কে যুক্তি দিয়ে বিচার করার ক্ষমতা আছে কি না, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে কি না আর সে নির্ভুল ইংরেজি লিখতে পারে কি না— WAT-এর মাধ্যমে সেগুলোই যাচাই করতে চান ইন্টারভিউয়াররা।
যে কোনও প্রতিষ্ঠানেই রিট্ন এবিলিটি টেস্ট-এর জন্য মোটামুটি ১৫-২৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এর মধ্যে যে কেউ কোনও বিষয়ে মোটামুটি ২৫০-৩০০ শব্দ লিখতে পারবে। WAT-এ নানা ধরনের বিষয় থাকতে পারে। বিষয় জানার পর প্রথম তিন থেকে পাঁচ মিনিটে এর ওপর যা যা মাথায় আসছে পয়েন্ট আকারে লিখে ফেলো। এর পর লেখাটা তিনটে অনুচ্ছেদে ভাগ করে নাও। প্রথম অনুচ্ছেদে বিষয়টা কী, কেন এই সময়ের প্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা কেন সেটা নিয়ে আলোচনা করছি, তিন-চারটে বাক্যের মধ্যে বলে দাও (৩০-৪০ শব্দ)। পরের অনুচ্ছেদে দশ-বারো বাক্যে (১০০-১৫০ শব্দ) বিষয়টির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে লেখো। যে দৃষ্টিকোণ থেকেই আলোচনা করো না কেন, তার সঙ্গে এক বা একাধিক উদাহরণও দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর, শেষ অনুচ্ছেদে চার-পাঁচ লাইনের মধ্যে নিজের মতামত দিয়ে লেখাটা গুটিয়ে ফেলো। মনে রাখতে হবে পুরো লেখাটিতে বিষয়টি যেন এক থাকে।
টাইম কলকাতা-র ভার্বাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রশিক্ষক শ্রেষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়ের মতে, WAT-এ বেশি আলঙ্কারিক ভাষা লেখার প্রয়োজন নেই। হাতের লেখা যতটা পারবে পরিষ্কার রাখো। কোথাও কোনও ভুল কিছু লিখে ফেললে, সেটাকে একটা লাইন দিয়ে কেটে পাশে লিখো। বানান ভুল সম্পর্কে সাবধান থাকতে হবে। সময়ের মধ্যে লিখে, পরে এক বার দেখে নিলে ভালো হয়।
সাধারণত গ্রুপ ডিসকাশন বা জিডি রাউন্ডে একসঙ্গে আট থেকে পনেরো জনকে একটা ঘরে ডেকে রাউন্ড টেব্ল-এর মতো বসানো হয়। ইন্টারভিউ প্যানেলিস্টরা জিডি-র বিষয় বেছে দিলে শুরুতে দু’চার মিনিট দেওয়া হয় বিষয়টা নিয়ে ভাববার জন্য। তার পর দশ থেকে কুড়ি মিনিট চলে আলোচনা পর্ব। আলোচনা হয় ইংরেজিতে। এখানে তুমি কত ভাল ইংরেজিতে কথা বলতে পারো, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু সেখানে কমিউনিকেশনের যে কোনও ভূমিকা নেই, তা কিন্তু নয়। প্যানেলিস্টরা মূলত দেখতে চান, কোনও বিষয়কে যুক্তি সহকারে বিচার করার ক্ষমতা তোমার কতখানি। তার জন্য তোমার দু’একটা উচ্চারণ এ দিক-ও দিক হতে পারে, কোথাও ব্যাকরণগত ভুল থাকতে পারে। সেগুলি অতটা নজর করা হয় না। তবে কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকার জায়গা জিডি নয়। এগুলো ছাড়াও জিডি-তে দেখা হয়, তোমার গ্রুপ বিহেভিয়র কী রকম। মানে, তুমি কতটা অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছ। অন্যদের সবাইকে নিয়ে চলতে পারছ কি না। অনেক সময় এই ধরনের জিডি-তে রীতিমতো চেঁচামেচি, ঝগড়াঝাঁটি হয়। সেখানে কেউ যদি অন্যদের সামলে আলোচনাটাকে নির্দিষ্ট দিকে ফিরিয়ে আনতে পারে, তা হলে leadership quality-র জন্য তাকে আলাদা নম্বর দেওয়া হয়। যদিও এটা একান্তই পরিস্থিতিসাপেক্ষ।
জিডিতে বিষয়টা জানার পরে দু’চার মিনিট নিজের মতো করে বেশ কিছু পয়েন্ট নোট করে নাও। তবে শুরুতে দেওয়া আলোচনার মূল বিষয়টা কিন্তু অবশ্যই লিখে রাখবে। জিডি শুরু হলে সুযোগমতো নিজের পয়েন্টগুলো বলবে। হতেই পারে তোমার কথার মাঝে অন্যরা কথা বলবে। তাতে ঘাবড়িও না। চেঁচামেচি না করে শান্ত ভাবে যুক্তি দিয়ে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করো। যে কোনও বিষয়ের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক, দুটো দিকই থাকে। সেই দুটো দিক নিয়েই তোমাকে কথা বলতে হবে। এমন হতেই পারে যে জিডি-র শেষে কোনও একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনো গেল না। তাতে অসুবিধে নেই।
টাইম কলকাতা-র ভার্বাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রশিক্ষক প্রজ্ঞান রায়ের মতে, জিডি-তে কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখলে ভাল। প্রথমত, সোজা হয়ে বসে কথা বলবে। বেশি হাত নেড়েচেড়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। নিজে তো বলবেই, সঙ্গে অন্যদেরও বলার সুযোগ দেবে। এবং তাদের কথা মন দিয়ে শুনবে।
বি স্কুলের পিআই প্রক্রিয়ায় সাধারণত তিন ধরনের প্রশ্ন থাকে— ১) পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধীয়, ২) প্রার্থীর গ্র্যাজুয়েশন এবং যদি সে কোথাও কাজ করে থাকে সেই সম্পর্কে আর ৩) জেনারেল নলেজ। ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত কয়েকটি প্রচলিত প্রশ্ন হল— নিজের সম্পর্কে বলো, তোমার ব্যক্তিত্বের ভাল ও খারাপ দিকগুলি কী কী, আগামী পাঁচ-দশ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চাও, কেন এমবিএ করতে চাও ইত্যাদি। প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে ইন্টারভিউ প্যানেল দেখে নিতে চায় তুমি নিজেকে নিয়ে ভেবেছ কি না, তোমার ভাবনার দিশা স্পষ্ট ও যুক্তিপূর্ণ কি না, তোমার এমবিএ পড়ার সত্যিই সত্যিই ইচ্ছে আছে কি না। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দেওয়ার জন্য সেল্ফ ইন্ট্রোস্পেকশন খুবই জরুরি। অর্থাৎ, নিজেকে নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করো। তোমাকে ভাবতে হবে তোমার জীবনে কী কী আছে বা ঘটেছে, যেগুলি তোমার এক জন ভাল ম্যানেজমেন্ট–ছাত্র হওয়ার ভিতটা গড়ে দিয়েছে। তা হলেই আগামী পাঁচ বছরে তুমি কোথায় পৌঁছতে চাও এবং এমবিএ কী ভাবে তোমাকে সেই জায়গায় পৌঁছতে সাহায্য করবে, এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। এ বার এগুলো গুছিয়ে সোজা ভাষায় কোথাও লিখে রাখো।
যাদের কাজের অভিজ্ঞতা নেই, তাদের গ্র্যাজুয়েশনের পড়াশোনা থেকেই প্রশ্ন করা হয়। তার মানে এই নয় যে যাদের কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের এই সব প্রশ্ন করা হবে না। তাই যারা চাকরি করছ, তাদেরও নিজেদের গ্র্যাজুয়েশনের পড়াশোনার বেসিক্স জেনে রাখা দরকার। প্রয়োজনে এক বার ঝালিয়ে নাও। তোমার যদি প্রিয় বিষয় কিছু থাকে সেই বিষয়ে জেনে রাখো। আজকের দুনিয়ায় সেই নিয়ে যদি কোথাও কিছু হয় সেগুলো খেয়াল করো। কাজের ক্ষেত্রে নিজের কাজ এবং সেই কাজ কী ভাবে তোমার সংস্থাকে প্রভাবিত করছে, তা নিয়ে ভেবে রেখো। এ ছাড়া সংস্থার বার্ষিক আয় ও লাভ, মূল উৎপাদন, ক্রেতা সংখ্যা, প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা— এ সব তথ্যও জানতে হয়।
আইআইএসডব্লুবিএম-এর অধ্যাপক সন্দীপ ঘোষের মতে, সাধারণ জ্ঞান বা জেনারেল নলেজ-এর তো বাঁধাধরা কোনও সিলেবাস হয় না। দেশ-বিদেশে বর্তমানে কী ঘটছে সেটা জেনে রাখতে ভুলো না। এর জন্য নিয়মিত এক বা একাধিক ইংরেজি সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন পড়ো। প্রশ্ন করা হতে পারে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তুমি যুক্ত। যেমন, তোমার স্কুল, কলেজ, শহর, প্রদেশ, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, প্রিয় লেখক, বই, অভিনেতা, ছায়াছবি, ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে। অনেক জায়গায় জিডি-ওয়্যাট’এ তুমি যে উত্তর লিখেছ, সেখান থেকেও প্রশ্ন করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy