সুনন্দা-হত্যা নিয়ে তিন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দিল্লি পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। গত বছর জানুয়ারিতে মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সুনন্দার সঙ্গে এই সাংবাদিকদের কথা হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। সুনন্দা-শশীর পরিচিত লোকজনের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে সুনন্দা যা কথা বলেছিলেন, তা জেনে ১৭ জানুয়ারির গোটা ছবিটা বুঝতে চাইছে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্রে খবর, ওই সাংবাদিকদের মধ্যে দু’জন মহিলা এবং এক জন পুরুষ। এঁদের কাছে সিটের প্রশ্ন ছিল: আইপিএল বিতর্ক বা শশী তারুরের সঙ্গে পাক সাংবাদিক মেহর তরারের সম্পর্ক নিয়ে সুনন্দা তাঁদের কিছু বলেছিলেন কিনা। ওই রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করার ইচ্ছে ছিল সুনন্দার। এই তথ্য পুলিশ বিভিন্ন সূত্রে জেনেছে। তাই সাংবাদিকদেরও সে প্রসঙ্গে ফের প্রশ্ন করা হয়েছে। এই সাংবাদিকরা প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন, মেহরের সঙ্গে শশীর কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহ ছিল সুনন্দার। তাঁরা কী ভাবে এই তথ্য পেয়েছিলেন, জানতে চেয়েছে সিট। সাংবাদিকরা গত বছর আরও জানান, সুনন্দা তাঁদের বলেছিলেন, “আইপিএল বিতর্কের জেরে শশীর জন্য আমাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।’’ এই ব্যাপারেও তিন সাংবাদিকের কাছে বিশদে জানতে চেয়েছে সিট।
পুলিশ সূত্রে দাবি, আরও কয়েক জন সাংবাদিককে ডাকা হতে পারে। সুনন্দার সঙ্গে মৃত্যুর আগে যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার বি এস বাস্সি বলেছেন, “ঘটনাপ্রবাহ বুঝতে সাংবাদিকদের ডাকা হচ্ছে। যাঁরা বলছেন, শেষ মুহূর্তে কথা হয়েছিল সুনন্দার সঙ্গে, তাঁদের অনেকেই তদন্তে সাহায্য করতে পারেন।”
সাংবাদিক ছাড়াও তেজ শরাফ নামে এক প্রবীণ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করতে চায় পুলিশ। তারুরদের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু গত কাল এক টিভি চ্যানেলে দাবি করেছেন, সুনন্দার মৃত্যুর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শরাফের গোয়ার বাড়িতে শশী সপরিবার গিয়েছিলেন। সেখানে সুনন্দাকে মুঠো মুঠো ওষুধ খেতে দেখেছিলেন শরাফ। তাঁর দাবি, গোয়ায় বেড়ানোর সময়ে এক বার সমুদ্রসৈকতে এবং এক বার নৌকোয় অচেতন হয়ে পড়তে দেখেছিলেন সুনন্দাকে। শরাফের কথায়, “উনি ঠিক করে খাচ্ছিলেন না। ঘুমোতেও পারছিলেন না ঠিকমতো। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত মনে হয়েছিল ওঁকে।” যার জেরে উল্টোপাল্টা কথা বলছিলেন সুনন্দা, জানান শরাফ। জর্জ বুশ বা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নাকি সুনন্দাকে পরামর্শদাতা হিসেবে ব্যবহার করছেন সুনন্দার মুখে এমন উদ্ভট কথা শুনেছেন শরাফ।
গাদাগাদা ওষুধ খেতে দেখে শরাফ তাঁকে প্রশ্নও করেছিলেন। সুনন্দার উত্তর ছিল, “ঠিকমতো ঘুম হয় না। কত বছর যে ঘুমোই না। তাই অ্যালপ্রাক্স আর নানা রকম পেনকিলার খেতে হয়।” যা শুনে শরাফ তাঁকে সাবধান করেন।
চূড়ান্ত মেডিক্যাল রিপোর্টে সুনন্দার লুপাস (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উল্টো প্রতিক্রিয়ার ফলে বাইরের জীবাণুকে ধ্বংস করার বদলে শরীর যখন নিজেরই সুস্থ কোষগুলো ধ্বংস করে) ছিল এমন প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু শরাফের বক্তব্য, “দু’বছর আগে সুনন্দা লুপাসের কথা বলেছিলেন। আমার ছেলে তাঁকে এ ব্যাপারে এক জন ভাল চিকিৎসকেরও খোঁজ দেন। কিন্তু সুনন্দা তা নিয়ে আর উৎসাহ দেখাননি।”
কিন্তু তদন্ত এত দূর এগিয়ে যাওয়ার পরে কেন মুখ খুললেন শরাফ? তাঁর মন্তব্য, “গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন মানুষকে অনেক কিছু বলতে শুনেছি। খারাপ লেগেছে। তাই যতটুকু জানি, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy