সঙ্ঘের মন রেখেই নিজের নতুন টিম ঘোষণা করে দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। লালকেল্লায় নরেন্দ্র মোদীর প্রথম বক্তৃতার এক দিন পরেই। মোদী-জমানায় বিজেপির উপরে নিজেদের রাশ আলগা করতে চাইছে না সঙ্ঘ। সে কথা মাথায় রেখেই যে তাদের মন রাখার চেষ্টা করা হয়েছে, তা বেশ স্পষ্ট। অমিতের টিমে সব থেকে উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি বরুণ গাঁধী, আর প্রবেশ বি এস ইয়েদুরাপ্পার।
প্রত্যাশিত ভাবেই বাংলা থেকে কোনও মুখ নেই অমিত শাহের টিমে। পশ্চিমবঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে চাইলেও কাকে মুখ করা হবে, তা নিয়ে এখনও ধন্ধে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের তরফে বরুণ গাঁধী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে। তিনিই এখন অনুপস্থিত অমিত শাহের টিমে। বরুণের সঙ্গে রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন সিদ্ধার্থ নাথ সিংহ। তাঁকে দলের সম্পাদক করা হয়েছে। সঙ্ঘের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত সাত জনকে দলের জাতীয় পদাধিকারী মনোনীত করেছেন অমিত। তার মধ্যে পাঁচ জনকে সরাসরি সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে গোটা দেশকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে এক-এক জনকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। এ ভাবে সঙ্ঘের মন রাখা চেষ্টা করলেও বিজেপি সূত্রের মতে, এখনও আসল পরীক্ষা উত্তীর্ণ হননি অমিত। কারণ, এখনও বিজেপির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ঘোষণা হয়নি। দলে একটি প্রস্তাব রয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশীর মতো প্রবীণ নেতাদের একটি পরামর্শদাতা কমিটিতে নিয়ে তাঁদের সংসদীয় বোর্ডের বাইরে রাখা হোক। কিন্তু তা করতে গেলেই বিতর্ক দানা বাধবে। ফলে সেটি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। গড়া হয়নি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটি ও কার্যনির্বাহী কমিটিও। অমিতের টিমে অনেক ত্রুটিও দেখছেন দলের অনেকে। জাতীয় পদাধিকারী হয়েছেন ৬ জন মহিলা। দলের নিয়ম অনুসারে আরও ৭ জনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু শূন্যপদ রয়েছে মাত্র ৬টি। দলের অনেকের তাই ধারণা, মোদী যখন মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করবেন, সেই সময় এই টিম থেকেই আরও কয়েক জন মন্ত্রী হতে পারেন।
ইয়েদুরাপ্পাকে সামিল করা নিয়ে বিরোধী দলগুলি সরব হতে শুরু করেছে। দুর্নীতির অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর পদ খুইয়েছিলেন তিনি। এমনকী, বিদ্রোহ করে দলের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধেও নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু মোদী-অমিত জুটির উত্থানের পরে তাঁর এই দায়িত্ব পাওয়াটা একেবারে অপ্রত্যাশিত ছিন না। তবে বরুণকে বাদ দেওয়ায় দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলের ঘোষিত অবস্থান হল, মেনকা গাঁধী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ায় সংগঠনে পদ দেওয়া হয়নি বরুণকে। কিন্তু মেনকা যে ভাবে সম্প্রতি ছেলেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার কথা বলেছেন, তাতে দলের নেতারা ক্ষুব্ধ। মন্ত্রী মেনকা যে ভাবে তাঁর মন্ত্রকের বিষয়ে অন্য মন্ত্রকের সঙ্গে বিবাদে জড়াচ্ছেন তাতে খুশি নন প্রধানমন্ত্রীও। এ ছাড়া, গত লোকসভা ভোটে বরুণ নিজের কেন্দ্রের বাইরে দলের কাজ করেননি। উল্টে রাহুল গাঁধীর প্রশস্তি করে দলের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন।
মোদীর ঘনিষ্ঠ অমিতকে সভাপতি করার পর থেকেই মোহন ভাগবত চাইছেন সঙ্ঘের ব্যক্তিরা যেন প্রাধান্য পান দলে। অমিতও সেই মোতাবেক রাম মাধব, মুরলীধর রাওকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। রামলালকে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করে তাঁর অধীনে আরও চার জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভি শতীশ, সৌদান সিংহ, শিব প্রকাশ এবং বি এল সন্তোষ। এঁরা সকলেই সঙ্ঘের লোক। অমিত-শিবিরের এক নেতার মতে, মোদী-অমিত জুটি সঙ্ঘের সঙ্গে কোনও রকম বিবাদে যেতে চাইছেন না। প্রাক্তন সরসঙ্ঘচালক সুদর্শনের সঙ্গে অটলবিহারী বাজপেয়ীর যে বিবাদ বাধত, মোদী-অমিত শাহ জুটি সেই পথে কখনওই হাঁটতে চান না। দু’জনেই জানেন, কী ভাবে সরকার ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় রেখে এগোতে হবে। ফলে সঙ্ঘের মনরক্ষা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত দল পরিচালনার রাশ অমিতের হাতেই থাকবে। ফলে তাঁরা জানেন, কী করে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়। সুকৌশলে সেই পথই ধরছেন তাঁরা।
সরকারের পাশাপাশি সংগঠনের শীর্ষ স্তরেও প্রতিনিধি থাকছে ঝাড়খণ্ডের। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হয়েছেন জামশেদপুর (পূর্ব)-র বিধায়ক রঘুবর দাস। অতীতে তিনি রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। মোদী-মন্ত্রিসভায় ইতিমধ্যেই প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন লোহারডাগার সাংসদ সুদর্শন ভগত। এ বার রঘুবর দাস জায়গা পেলেন দলের কেন্দ্রীয় সংগঠনে। অসমের মঙ্গলদৈয়ের সাংসদ রমেন ডেকা হয়েছেন দলের রাষ্ট্রীয় সম্পাদক। এই রাজ্য আগামী বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসকে গদিচ্যুত করার ভার পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া থেকে ম্যাট্রিক পাশ করা বিজেপি নেতা। এ দিন অসম প্রদেশ বিজেপি সভাপতির পদ ছাড়লেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য। সিদ্ধার্থবাবু পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর হন গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সাব-জুনিয়র পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গ হকি দলের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy