ভোটের মুখে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা যখন নানা ভাবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, তখন আসরে নামলেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ স্বয়ং। আগামিকাল থেকে দেশজুড়ে মোদীর প্রচার শুরুর ঠিক এক দিন আগে রাজনাথ আজ বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর হাত শক্ত করার পাশাপাশি কড়া বার্তা দিলেন সুষমা-সহ দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের।
যশোবন্ত সিংহ রাজস্থানের বাড়মের কেন্দ্র থেকে লড়তে চেয়েও টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহী হওয়ার পরে সুষমা বলেছিলেন, দলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। কিন্তু রাজনাথ আজ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজস্থানের সব আসন নিয়েই নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। রাজনাথের মতে, যশোবন্তকে প্রার্থী না করার পিছনে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ছিল। তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প ভাবনাও ছিল দলের। বিজেপি সভাপতির কথায়, “ওঁকে প্রার্থী না করার জন্য আমি দুঃখ এবং আক্ষেপ প্রকাশ করেছি।” যশোবন্তকে নিয়ে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি আডবাণী-ঘনিষ্ঠ গুজরাতের নেতা হারিন পাঠকের সঙ্গে দেখা করে আজ তাঁরও ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা করেন রাজনাথ। হারিনকে গুজরাত থেকে দাঁড়ানোর প্রশ্নে মোদীই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। যা নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। রাজনাথ চাইছেন, আগামিকাল মোদীর চূড়ান্ত পর্বের প্রচার শুরু হওয়ার আগে নরমে-গরমে যাবতীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ মিটিয়ে দিতে। তাই দুপুরে মোদীর প্রচার কর্মসূচি অরুণ জেটলিকে দিয়ে ঘোষণা করানোর পরে রাতে নিজেই বার্তা দিলেন বিক্ষুব্ধদের।
কাল থেকেই মোদীর শেষ লগ্নের প্রচার শুরু হচ্ছে। সে জন্য আজ প্রচারের নতুন গানও তৈরি হয়েছে। আগামিকাল জম্মু, বুলন্দশহর এবং দিল্লিতে সভা করবেন মোদী। তার আগে রাজনাথের এই কড়া বার্তার পরে দলের অনেকেই মনে করেন, আডবাণী, সুষমারা আসলে ভোটের ফলপ্রকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। যদি মোদীর নেতৃত্বে দল ১৬০টির বেশি আসন না পায়, তা হলে সরকার গড়ার জন্য শরিক নির্ভরতা বাড়বেই। এবং তখনই মোদীকে সরিয়ে অন্যদের সামনে আনার চেষ্টা শুরু হবে। কিন্তু মোদী-বিরোধীদের সেই ভাবনায় আজ জল ঢেলে রাজনাথ জানিয়ে দেন, মোদীকে সরানোর কোনও প্রশ্নই উঠছে না। শরিকদের নিয়ে বিজেপি যে সরকার গড়বে, তার প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদীই।
কিছু দিন আগেই কর্নাটকের বিতর্কিত শ্রীরামুলুকে দলে নেওয়া নিয়ে টুইট করে দু’বার নিজের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুষমা। রাজনাথ আজ সেটিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি বিদ্রোহী যশোবন্ত যে ভাবে সুষমার বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে মোদী, রাজনাথ, জেটলিদের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন, তা বন্ধ করার চেষ্টা করেছেন। ঘটনাচক্রে সুষমা এ দিনও নিজের কেন্দ্র বিদিশায় এক জনসভায় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের তারিফ করলেও এক বারের জন্য দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মোদীর নাম নেননি। যা নিয়ে দলের অন্দরে গুঞ্জন উঠেছে।
এরই মধ্যে রাজনাথের বার্তা আসার আগেই আজ সকালে আডবাণী নিজের ব্লগে কিছু মন্তব্য করেছেন, যাকে মোদীর প্রতি পরোক্ষ খোঁচা বলেই মনে করছেন অনেকে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রশংসা করে আডবাণী ব্লগে লিখেছেন, এত কৃতিত্ব সত্ত্বেও বাজপেয়ীর মধ্যে কোনও দিন অহং বোধ বা ঔদ্ধত্যের ছিটেফোঁটা দেখেননি তিনি। গোটা ব্লগে কোথাও মোদীর নাম নেই। বরং সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহের সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি শিবিরের অনেকেই বলছেন, আসলে বাজপেয়ীর প্রশংসার মোড়কে মোদীরই সমালোচনা করেছেন এই প্রবীণ নেতা। তাঁদের মতে, বাজপেয়ীর মধ্যে অহং বোধ বা ঔদ্ধত্যের ছিঁটেফোটা যদি না-ই থাকে, তা হলে সেই প্রসঙ্গ এ ভাবে আচমকা তোলার দরকারই বা কী ছিল? আসলে আডবাণী বোঝাতে চেয়েছেন, বাজপেয়ীর মধ্যে না থাকলেও তাঁর উত্তরসূরি হয়ে উঠতে চাওয়া মোদীর মধ্যে অহং বোধ প্রবল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy