সাংবাদিক বৈঠকে শশী তারুর। শুক্রবার গুরুভাইয়ুরে। ছবি: পিটিআই।
সুনন্দা-মৃত্যুতে পুলিশ খুনের মামলা দায়ের করার তিন দিনের মাথায় মুখ খুললেন কংগ্রেস সাংসদ ও প্রাক্তন মন্ত্রী শশী তারুর। স্ত্রীর মৃত্যুর তদন্ত ঘিরে যা চলছে, তাতে মোটেই খুশি নন তিনি। সংবাদমাধ্যমের প্রতি শশীর বার্তা: তাঁর চুপ থাকার মধ্যে কোনও নেতিবাচক ইঙ্গিত যেন না খোঁজা নয়। দু’সপ্তাহ চিকিৎসার পরে ত্রিশূরের ক্লিনিক থেকে ছাড়া পেয়ে আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে শশী জানিয়েছেন, এই তদন্তে কোনও রাজনৈতিক চাপ না থাকাই বাঞ্ছনীয়। তাঁর মন্তব্য, কোনও পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়ে তদন্ত এগোনো উচিত নয়। যদিও আজ তাঁর পরিচারকের বক্তব্য নয়া বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। তাঁর দাবি, সুনন্দা মৃত্যুর দিন শশীকে ফোনে বলেছিলেন, “আপ খতম হো গয়ে!”
কেরলের সাংসদ গত কাল দিল্লি পুলিশ কমিশনার বি এস বাসিকে আরও একটি চিঠি দিয়েছেন। তদন্ত নিয়ে তাঁর যা যা উদ্বেগ রয়েছে, তা লিখেছেন তিনি। এ দিন বলেন, নতুন করে যে সব তথ্য প্রকাশ্যে আসছে, তাতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে। শশীর অভিযোগ, স্ত্রীকে হারানোর পরে শোক পালনের জন্য ঠিকমতো সময়টুকুও দেওয়া হয়নি তাঁকে। কিন্তু তিনি গত বছরের শুরুতে ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে এক প্রকার নীরব হয়েই ছিলেন। তার পরেও তিনি দেখেছেন, “বিষয়টি নিয়ে অযাচিত ভাবে কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে।” তাই তাঁর অনুরোধ, সংবাদমাধ্যম গোটা বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখুক।
শশী যা-ই বলুন, দিল্লিতে তাঁর পরিচারক নারায়ণ সিংহ পুলিশের কাছে জেরার পরে এমন কিছু তথ্য দিয়েছেন, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে আর এক প্রস্ত জল্পনা। গত কাল প্রায় পাঁচ ঘণ্টার জেরায় নারায়ণ জানিয়েছেন, মৃত্যুর বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সুনন্দা-শশীর চার বছরের দাম্পত্যে তীব্র অশান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। বেশির ভাগ সময়টাই তাঁরা ঝগড়া করতেন। ঝগড়ার পরে সাধারণত সঞ্জয় নামে এক পারিবারিক বন্ধুর বাড়ি চলে যেতেন সুনন্দা। মৃত্যুর দু’দিন আগে দিল্লির পাঁচতারা হোটেলে উঠেছিলেন তারুর দম্পতি। মৃত্যুর দিন সকালেও তাঁদের ঝগড়া চলেছে বলে দাবি নারায়ণের।
১৭ জানুয়ারি অর্থাৎ সুনন্দার মৃত্যুর দিনটিতেও নারায়ণ মালকিনের সঙ্গে হোটেলে ছিলেন। তাঁকে পরে সুনন্দা নির্দেশ দেন, তারুরের সরকারি আবাস থেকে একটি সাদা পোশাক নিয়ে আসতে। সেটাই নাকি ওই রাতে সাংবাদিক বৈঠকে পরবেন বলে ঠিক করেছিলেন সুনন্দা। নারায়ণের বক্তব্য অনুযায়ী, সুনন্দা সে দিন তারুরকে ফোন করে বলেছিলেন: “আপ খতম হো গয়ে” (তোমার জারিজুরি শেষ)। কারণ সুনন্দা সংবাদমাধ্যমে অনেক কথা ফাঁস করে দিতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণ। কী কথা, সে সব অবশ্য বলতে পারেননি তিনি। তা ছাড়া, পরিচারকের বয়ান অনুযায়ী, মৃত্যুর দু’দিন আগে কোনও এক ‘সুনীল সাহেবে’র সঙ্গে দেখা হয়েছিল মালকিনের। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির পুরো নাম সুনীল ত্রক্রু। ইনিও সুনন্দাদের পারিবারিক বন্ধু। এক মাস আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাঁকে। পুলিশে জেনেছে, তিরুঅনন্তপুরম থেকে চিকিৎসার পরে ১৫ জানুয়ারি দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে আনতে গিয়েছিলেন সুনীল। তিনিই সুনন্দাকে রাজধানীর পাঁচতারা হোটেলে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তার পরের দিনও হোটেলে শশী-সুনন্দার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। সুনীলের বক্তব্য, “সুনন্দার সঙ্গে শেষ বার যখন দেখা হয়েছিল, তাঁকে খুবই দুর্বল বলে মনে হয়েছিল।”
নারায়ণ আবার জানিয়েছেন, সুনন্দাকে কিছু মেসেজ কপি করে টুইট করতে সাহায্য করেছিলেন সুনীল। পাক সাংবাদিক মেহর তরারের সঙ্গে শশীর সম্পর্ক ঘিরে মেহর-সুনন্দার মধ্যে বাকবিতণ্ডা টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে। সুনীলের সঙ্গে টুইটারের ওই মেসেজগুলির কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। মেহরকেও ইমেলে প্রশ্ন পাঠিয়ে জেরার কথা ভাবছে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy