Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

সেই ন্যানো-কথা তুলেই খোঁচা দিলেন জেটলিরা

মোদীর মঞ্চে দ্বিতীয় দিনেও মমতার নাম! চনমনে গুজরাতের আসরে যা অবশ্য বাঙালি সাংবাদিকের বুক গর্বে ফোলায়নি। কখনও ন্যানো তাড়ানো নেত্রী হিসেবে, কখনও বা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির বদলে জনপ্রিয়তার রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরাদের দলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ উঠতেই সোমবারের দুপুরে মহাত্মা মন্দিরের প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়েছে হাততালিতে।

মোদীর প্রধান সারথি। ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। সোমবার গাঁধীনগরে। ছবি: পিটিআই

মোদীর প্রধান সারথি। ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। সোমবার গাঁধীনগরে। ছবি: পিটিআই

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
গাঁধীনগর শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

মোদীর মঞ্চে দ্বিতীয় দিনেও মমতার নাম!

চনমনে গুজরাতের আসরে যা অবশ্য বাঙালি সাংবাদিকের বুক গর্বে ফোলায়নি। কখনও ন্যানো তাড়ানো নেত্রী হিসেবে, কখনও বা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির বদলে জনপ্রিয়তার রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরাদের দলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ উঠতেই সোমবারের দুপুরে মহাত্মা মন্দিরের প্রেক্ষাগৃহ ফেটে পড়েছে হাততালিতে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, একটা সময় হাততালি থামিয়ে দিয়ে কেন্দ্রের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমকে বলতে হয়, “ভুল বুঝবেন না। উপলব্ধি হয়েছে বলেই তো আজ পশ্চিমবঙ্গে শিল্প সম্মেলন করতে হচ্ছে।” আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মন্তব্য, “রাজস্থান, হরিয়ানার নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে সস্তা জনপ্রিয়তার রাজনীতি করেও ভোটে কিন্তু জেতা যায় না। তাই দেশের আর্থিক বিকাশে সহযোগী হোন।”

সপ্তাহ খানেক আগেই বেঙ্গল গ্লোবাল সামিটের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, সিঙ্গুর নিয়ে তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন। নীতিগত অবস্থান থেকে যে তিনি সরে আসবেন না, তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “টাটারা ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দিয়ে কারখানা করুক। কেউ আপত্তি করবে না।”

এ দিন ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাতে’র দ্বিতীয় দিনে বসেছিল ‘ইনভেস্ট ইন ইন্ডিয়া সামিট-২০১৫’। ভারতের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের সামনে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিলেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম। তাঁর বক্তব্য, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আর উন্নয়নের জন্য রাজ্যগুলির প্রতিযোগিতা প্রশস্ত করবে দেশের বিকাশের পথ। কেন্দ্র এই নীতি নিয়েই এগোচ্ছে। এর অন্যতম সাফল্য হিসেবে তিনি উদাহরণ দিয়ে পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে রাজ্যগুলির সহমত হওয়ার কথা জানান। সেই সঙ্গে তিনি জানান, এর পিছু পিছুই আসবে উন্নয়নের জন্য রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এ নিয়ে রাজস্থানের শ্রম সংস্কার ও শ্রম আইনকে মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, ছত্তীসগঢ় কী ভাবে মডেল করছে, তা-ও জানান তিনি।

এই সব উদাহরণের মধ্যেই অরবিন্দের প্রেজেন্টেশনে ভেসে ওঠে একটি স্লাইড। তাতে এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রুদ্ধ মুখ। মাঝে ন্যানো গাড়ি আর অন্য দিকে নরেন্দ্র মোদীর হাসিমুখের ছবি। অরবিন্দ বলেন, “রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক উন্নয়নের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ন্যানো প্রকল্প। এক জন পারে না, অন্য জন করে দেখায়।” কথা শেষ হতেই হাততালির ঝড় প্রেক্ষাগৃহে।

বিড়ম্বনায় পড়ে যান অরবিন্দ। বলে ওঠেন, “না না, হাততালি দেবেন না। এর পরে আরও একটি পর্যায় আছে। ন্যানো বিতারণপর্বের ফলে একটি রাজ্যের উপর (পড়ুন পশ্চিমবঙ্গ) অসম্ভব চাপ তৈরি হয়েছে। যে রাজ্য সেটা করে দেখিয়েছে, তাদেরই চাপ! সেই জন্যই আজ তাদের শিল্প সম্মেলন করতে হচ্ছে! বিনিয়োগ টানার জন্য নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীও তাই সেই সম্মেলনে গিয়েছিলেন।”

অরবিন্দের এই খোঁচা তখন মঞ্চে বসে শুনছেন এক বাঙালি, সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। দর্শকাসনে বসে আর এক বাঙালি, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রধান অরুন্ধতী ভট্টাচার্যকেও সে কথা শুনতে হয়েছে।

কিন্তু মমতার জন্য জেটলির খোঁচা বোধ হয় ছিল এর চেয়েও তীব্র। তবে জেটলি কারও নাম করেননি। ছবিও দেখাননি। শুধু দেশের সস্তা জনপ্রিয়তার রাজনীতি করা দলের নেতা-নেত্রীরা বলেই ইঙ্গিতে কাজ সেরেছেন। জেটলি বলেন, “কেন্দ্র কয়লা ব্লক নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইন আসছে। এই নিলামের ফলে কয়লা উৎপাদনকারী রাজ্যগুলির ভাঁড়ার ভরে যাবে। যেমন পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ় ইত্যাদি। ভেবেছিলাম, এই ব্যবস্থায় অন্তত এখানকার জনপ্রতিনিধিরা আগ্রহী হবেন। কোথায় কী? বিরোধিতা শুরু হল।” পর ক্ষণেই জেটলি জানান, হরিয়ানা, রাজস্থানের সরকার ভোটের আগে নানা সস্তা জনপ্রিয়তার পথ নিয়েছিল। ভোটাররা কিন্তু উন্নয়নের জন্য নেওয়া কঠোর নীতির পক্ষেই রায় দিয়েছেন।

জেটলির ব্যাখ্যা, দেশের উন্নয়নের জন্য টাকা চাই। এবং সে জন্যই আরও বেশি সংস্কার ও বিলগ্নিকরণ দরকার। জেটলির বক্তব্য, “কিছু রাজনৈতিক দলের কাজই হয়েছে, আগামীর দিকে তাকিয়ে নেওয়া উন্নয়ন কর্মসূচির বিরোধিতা করা, আর সস্তা জনপ্রিয়তার রাস্তায় হাঁটা। এতে রাজ্যসভা না চলতে পারে, কিন্তু দেশের এগিয়ে চলা কেউ ঠেকাতে পারবে না।”

অরুণ-অরবিন্দের খোঁচা যাঁকে, তিনি কি বদলাবেন? কে জানে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE