নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ ও নিতিন গডকড়ী। বুধবার গাঁধীনগরে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে। ছবি: পিটিআই।
শরিকদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে এনডিএ-র চেয়ারম্যান পদটিও নিজের হাতে রাখতে চান নরেন্দ্র মোদী।
১৯৯৮ সালে এনডিএ গঠনের সময় থেকেই অটলবিহারী বাজপেয়ী এনডিএ চেয়ারম্যান। প্রধানমন্ত্রী পদের পাশাপাশি জোটের দায়িত্বও সামলেছেন। এখন সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিলেও খাতায়-কলমে এনডিএ চেয়ারম্যান তিনিই। শুক্রবার নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে সরকার গড়ছেনই ধরে নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এ বার ওই পদ চেয়ে দাবি পেশ করেছেন মোদী।
বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য চাইছেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে মর্যাদা দিতে এনডিএ-র চেয়ারম্যান করা হোক। কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী পদের বিরোধিতা করা আডবাণী শরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্বে থাকুন, এটা মোদী চান না। তিনি দলকে বুঝিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শরিকদের সরাসরি যোগাযোগ থাকলে কাজ করতে সুবিধা হবে। এই যুক্তিতেই বাজপেয়ীকে এনডিএ-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিজেপি নেতাদের অনেকের ধারণা, দল এবং জোট এই দুয়েরই রাশ নিজের হাতে রাখতে চান মোদী। সেই কারণে রাজনাথ সিংহকে মন্ত্রিসভায় এনে অমিত শাহকে বিজেপি সভাপতি পদে বসানোর একটা প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে মোদীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে। তবে সঙ্ঘ পরিবারকে এ ব্যাপারে রাজি করানো যাবে কি না, বলা কঠিন। বিজেপি-কে পুরোপুরি মোদীর নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সঙ্ঘ পরিবারের একটা বড় অংশের আপত্তি রয়েছে।
তবে মোদী নিজের ঘুঁটি সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। লোকসভা ভোটের ফল বেরোতে এখনও দিন দুয়েক বাকি থাকলেও। আজ সন্ধ্যায় গাঁধীনগরে নিজের বাসভবনে রাজনাথ, নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলির সঙ্গে বসে মন্ত্রিসভা গঠনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। রাজনাথ বলেন, শুক্রবার ফল প্রকাশের পরে শনিবার দলের সংসদীয় বোর্ড দিল্লিতে বৈঠকে বসে মন্ত্রিসভা ও অন্যান্য পদে নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন। মোদীও সেই বৈঠকে থাকবেন। ওই দিন মোদী বারাণসীও ঘুরে আসতে পারেন।
দিল্লিতে নতুন সরকার গঠন হলে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজের মতো প্রবীণদের কী ভূমিকা হবে, তা নিয়ে অবশ্য বৈঠকে বসার আগেই আলোচনা সেরে ফেলেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ রাজনাথ ও গডকড়ী পৃথক ভাবে দেখা করেন আডবাণী ও সুষমার সঙ্গে। বিজেপি সূত্রের মতে, আডবাণীর মতো সুষমাও অতীতে মোদীর নামে আপত্তি তুলেছিলেন। তাই এই দল সরকার গড়লে এই দুই নেতার ভূমিকা কী হবে তা আগাম ঠিক করে নেওয়া জরুরি। তাঁদের কাছে লোকসভার স্পিকার, যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান বা জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের মতো কোনও সংস্থার প্রধান হওয়ার তিনটি প্রস্তাব রাখা হয়।
দলের একটি অংশের মতে, আডবাণী স্পিকার হলে সেটি যেমন একটি সাংবিধানিক পদ হবে, একই সঙ্গে সরাসরি মোদী সরকারের অধীনেও তাঁকে কাজ করতে হবে না। মোদীও চাইবেন সংগঠনে মাথা না ঘামিয়ে স্পিকারের মতো পদে আডবাণী বাঁধা থাকুন। তবে সুষমাকে অবশ্য মন্ত্রিসভায় রেখে স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ বা বিদেশের মতো কোনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে। আবার রাজনাথ সভাপতি পদ ছেড়ে মন্ত্রিসভায় গেলে স্বরাষ্ট্র অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাঁকে দেওয়া হতে পারে। প্রতিরক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে গডকড়ীরও। বুথ-ফেরত সমীক্ষা বলছে, অমৃতসরে কঠিন লড়াই লড়তে হয়েছে অরুণ জেটলিকে। প্রাথমিক ভাবে অর্থ মন্ত্রক ভাবা হচ্ছে তাঁর জন্য।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরও ঢেলে সাজতে চান মোদী। অমিত শাহকে সভাপতি করতে না পারলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী করে নিয়ে আসতে পারেন তিনি। অথবা অমিতকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব বা রাজনৈতিক উপদেষ্টার মতো কোনও পদে নিয়ে আসা হতে পারে। ইউপিএ সরকারে সনিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে সরকার ও দলের মধ্যে বোঝাপড়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন আহমেদ পটেল। বাজপেয়ীর আমলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করেছেন প্রমোদ মহাজন। মোদী চান অনুগত অমিত নতুন সরকারে সেই ভূমিকাই পালন করুন।
গোল বেঁধেছে দলের আর এক প্রবীণ নেতা মুরলীমনোহর জোশীকে নিয়ে। ভোট শেষ হওয়ার আগেই নাগপুরে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করে জোশী আর্জি জানিয়েছিলেন, নতুন সরকারে তাঁকেও যেন গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চারটি মন্ত্রকে কোনও বয়স্ক নেতাকে নিয়ে আসতে চাইছেন না মোদী।
রবিশঙ্কর প্রসাদকে আইন মন্ত্রক দেওয়া হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক বরুণ গাঁধী মন্ত্রক না পেলেও তাঁর মা মানেকা পেতে পারেন। আপাতত স্বাস্থ্য মন্ত্রকে তাঁর নাম শোনা যাচ্ছে। অমিত শাহ বলেন, “মন্ত্রিসভা গঠনের সময় নরেন্দ্র মোদী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও সব বর্গের প্রতিনিধিকে সামিল করতে চাইবেন।” সেই সূত্র ধরে সংখ্যালঘু মুখ শাহনওয়াজ হোসেন, মুক্তার আব্বাস নকভিও মন্ত্রী হতে পারেন। সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠ দার্জিলিঙের প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও জিতলে মন্ত্রী হতে পারেন।
মন্ত্রিসভা গঠনে মোদী যেমন সংঘাতের কোনও বার্তা দিতে চাইছেন না, আবার সরকার যাতে দক্ষ ভাবে কাজ করতে পারে, সেই দিকেও তিনি সমান ভাবে নজর দিতে চাইছেন। এ জন্য প্রতিষ্ঠিত পেশাদারদেরও মোদী নিয়ে আসতে চাইছেন মন্ত্রিসভায়। এমনই এক জন দিল্লি মেট্রো প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ই শ্রীধরন। কোঙ্কন রেলওয়েও তাঁর হাতে গড়া। ভোটের ফল প্রকাশের পর শরিক-নির্ভরতা বিশেষ না থাকলে রেল মন্ত্রক বিজেপি নিজের হাতেই রাখতে চাইবে। পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও অনেকগুলি মন্ত্রক গঠন করা হবে, যাতে অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাঅর্জন করা যায়। সুরেশ প্রভু বহু দিন ধরেই মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে এসেছেন। বাজপেয়ী জমানাতে মন্ত্রীও ছিলেন তিনি। তাঁকেও পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রকে আনা হতে পারে। বাজপেয়ী জমানায় ক্যাবিনেট সচিব ছিলেন প্রভাত কুমার। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী দফতরে প্রিন্সিপ্যাল সচিব করা হতে পারে। এই পদে রয়েছে অন্য দুই আমলা অশোক চাওলা ও পি কে মিশ্রর নামও।
তবে প্রাথমিক রূপরেখাটি করে রাখলেও সব নির্ভর করছে ১৬ তারিখের ফলের উপর। কারা কারা জিতে আসছেন, তার উপরেও অনেক কিছু নির্ভর করবে। দলের এক নেতার কথায়, বুথ ফেরত সমীক্ষা ফল মিলে যাবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যদি তা না হয়ে শরিক নির্ভরতা বেড়ে যায়, তা হলে আডবাণী-সুষমার মতো নেতারা আবার অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন। সেই ক্ষেত্রে এই খেলার মোড় ঘুরেও যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy