মঙ্গলবার আগরতলায় শান্তির বাজার এলাকার জনসভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
পথের মাঝে হঠাৎ দেখা। দেখা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়া বলাটাই একদম ঠিকঠাক। এক জন কনভয় থামিয়ে ছিলেন রাস্তার ধারে, জল আর বিস্কুট কিনবেন বলে। তাঁকে দেখতে পেয়ে মুহূর্তে গাড়ি ঘিরে ধরেছিল জমাট জনতা। এমন সময় হু হু করে একই দিক থেকে ছুটে এল অনেকগুলি গাড়ির অন্য একটি কনভয়। ব্ল্যাক ক্যাট কম্যান্ডোরা হাঁ হাঁ করে পথের ভিড় হটাতে হটাতে ভিভিআইপিকে নিয়ে চোখের নিমেষে বেরিয়ে গেলেন। কনভয়টি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। পথের পাশে দাঁড়ানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভিড়ের উদ্দেশে বললেন, “ওই দেখুন, আপনাদের চিফ মিনিস্টার যাচ্ছেন।” যুবক বিক্রম দেবনাথ ভিড়ের মধ্যে থেকে জবাব দিলেন, “ও সব চাই না, আপনাকে চাই।”
আজ বিকেলে আগরতলা থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে শান্তির বাজারের সভা সেরে ফেরার পথে বিশালগড়ের লালসিং মুড়ায় এসডিজেএম অফিসের সামনে এই দৃশ্য।
নির্বাচনী সভায় মমতা আসবেন, এ কথা ত্রিপুরার মানুষ আগেই জেনেছিলেন। তবে হেলিকপ্টারের বদলে তিনি যে দু’ঘণ্টা সড়কপথে সভায় পৌঁছবেন, এটা আগে জানা ছিল না। তবুও, আজ নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পরে বিকেল সাড়ে ৪টেয় তিনি যখন শান্তির বাজার দ্বাদশ শ্রেণি বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে পৌঁছন, তখনও তা ভর্তি। এমনকী, স্কুল ড্রেস পরা মেয়েরা ছাদের মাথায় উঠে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিপিএম শাসিত ত্রিপুরায় এসে মমতা কী বলতে পারেন, তা বোঝা কঠিন নয়। বললেনও তাই। তাঁর সার কথা, “বাংলা যদি পারে, আপনারাও পারবেন।” এরই সঙ্গে ছিল বামশাসিত পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার সঙ্গে বর্তমান ‘পরিবর্তন’-এর রাজ্যের তুলনা। বোঝানোর চেষ্টা, তাঁর সরকার আড়াই বছরে পশ্চিমবঙ্গে যা করেছে, ২১ বছরে ত্রিপুরা তার সিকিভাগও করতে পারেনি। পাঁচশো বছরেও পারবে না।
রাজ্যের দুই লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রতন চক্রবর্তী ও ভৃগুরাম রিয়াং-কে দু’পাশে দাঁড় করিয়ে মমতার আহ্বান, “অনেক হয়েছে, আর নয়। দাঙ্গাবাজ বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধেছে। ওদেরকে একটি ভোটও নয়।”
এই বাঁধা গতের বাইরে তাঁর আসা-যাওয়ার পথে আর যা ছিল, তার প্রায় সবটাই ভিড় এবং ভিড়। পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও জেলায় তাঁর সফরের সময় পথে যে ছবি দেখা যায়, ত্রিপুরা যেন তার ফটোকপি। মাঝে মাঝেই প্রায় এক-আধ কিলোমিটার দীর্ঘ মানুষের সারি, গাড়ির উপরে হামলে পড়া, তাঁকে ছুঁতে চাওয়ার চেষ্টা, হিমশিম পুলিশ, ঠিক যেমনটি দেখা যায় তাঁর নিজের রাজ্যে। যেমন, সভা করে ফেরার পথে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিতে গিয়ে তিনি এতটাই ভিড়ের কবলে পড়লেন যে, মন্দির থেকে বেরিয়ে কিছু রাস্তা হেঁটে তাঁকে গাড়িতে উঠতে হল। ধাওয়া করল জনস্রোত। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত মমতা বিশ্বাস করেছেন, শুধু এই লোকসভা ভোট নয়, ২০১৮-তে ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটেও তিনি পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দিতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গে এক সময় শাসক সিপিএমের বিরুদ্ধে বিরোধীদের জোর করে দাবিয়ে রাখার অভিযোগ আকছার উঠত, যার অনেকগুলিই অমূলক ছিল না। ত্রিপুরাতে এসে মমতা দেখলেন রাস্তার দীর্ঘ এলাকা শুধুই লাল পতাকায় ছাওয়া। অন্য কোনও দলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। তাই সে প্রসঙ্গ তুলে সভায় তাঁর মন্তব্য, “আমার এ সব দেখে শাসন-নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তাই বলছি, এখানেও এরা আর বেশি দিন নেই। ওদের দিন ফুরিয়ে আসছে। আমি এই লক্ষণটা বুঝি।” যে মাঠে তাঁর সভা হল, তার প্রবেশপথেই শুধু লাল পতাকার ভিড়। সভা তৃণমূলের, কিন্তু সেই দলের পতাকা নামমাত্র। সবই লালে ঢাকা। এক তৃণমূল কর্মী জানালেন, মমতা হেলিপ্যাডে নেমে সভায় আসবেন বলে খবর থাকায় রাস্তায় সবটাই লাল পতাকার দখলে চলে গিয়েছে। তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্য, “মমতাকে এত ভয়!”
ত্রিপুরায় দলের দায়িত্বে আসা পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে মমতা অবশ্য নির্দেশ দিয়ে যান, “এই রাজ্যের সব বুথ স্পর্শকাতর, এ কথা অবিলম্বে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। আর দেখতে হবে, সব বুথে যেন তৃণমূলের এজেন্ট থাকেন। কেউ যেন ভয় পেয়ে উঠে না যান।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy