কংগ্রেসের অন্দরে আওয়াজ উঠেছে, পঞ্জাবই পথ। সেখানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহকে প্রার্থী করার পরে রাজ্য কংগ্রেসের অবস্থাটা রাতারাতি বদলে গিয়েছে বলে দাবি করছেন দলের অনেকে। আর তার ভিত্তিতেই কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ এ বার বারাণসী কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে একজন ঠিকঠাক ওজনদার প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানাতে শুরু করলেন। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের কিছু নেতা এখন এ প্রশ্নও তুলছেন, বারাণসী থেকে স্বয়ং রাহুল গাঁধী বা গাঁধী পরিবারের অন্য কেউ কেন ভোটে লড়ছেন না? যদিও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলার মুরোদ কারও নেই! কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই বলছেন, গাঁধী পরিবার তেমন ঝুঁকি নিলে বা মোদীর বিরুদ্ধে প্রকৃত শক্তিশালী কোনও নেতাকে প্রার্থী করা হলে শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, সর্বভারতীয় স্তরে বিতর্কের মুখটাই রাতারাতি ঘুরে যেতে পারে!
কংগ্রেসের মধ্যে এই দাবি নিয়ে এ প্রশ্ন করা হলে রাহুল শিবিরের নেতারা কোনও মন্তব্য করতেই রাজি নন। শুধু দলের তরফে মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “বারাণসী কেন্দ্রে শীঘ্রই প্রার্থী ঘোষণা করে দেবে দল। আর বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।”
কংগ্রেস মুখপাত্ররা অবশ্য এ কথা গত কয়েক দিন ধরেই বলছেন। তাতে দলে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বই কমছে না। তবে সেই অসহিষ্ণুতাকেও লঘু করে দেখিয়ে দলের এক সাধারণ সম্পাদক আজ বলেন, “এখনও দেরি হয়নি। বরং অমৃতসরের মতোই বারাণসীতেও শেষ রাতে ওস্তাদের মার দেওয়ার সুযোগ এখনও রাহুলের সামনে রয়েছে।” কী ভাবে? দলের ওয়ার্কিং কমিটির ওই সদস্যের কথায়, “এক মাস আগে পর্যন্ত পঞ্জাবে কংগ্রেসকে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখছিলেন না রাজনৈতিক পণ্ডিতরা। মনে করছিলেন, কংগ্রেস দু’টির বেশি আসন পাবে না। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী তথা লুধিয়ানার বর্তমান সাংসদ মণীশ তিওয়ারি ভোটে না লড়ার কথা জানিয়ে দেওয়ায় আরও নেতিবাচক বার্তা যায় কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে। স্থানীয় মানুষও মনে করতে শুরু করেন কংগ্রেস আগেই হেরে বসে আছে।
কিন্তু রাহুলের উদ্যোগে অম্বিকা সোনি ও অমরেন্দ্র সিংহকে প্রার্থী করার পরেই পঞ্জাবে কংগ্রেসের অনুকূলে হাওয়া ঘুরতে শুরু করেছে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি। পঞ্জাবে কংগ্রেসের ৮ জন সাংসদ রয়েছেন। ভোটের আগে শেষ জনমত সমীক্ষায় এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনও এখন জানাচ্ছে যে, সেখানে এ বার ৬টি আসন পেতে পারে কংগ্রেস।
পঞ্জাবের উদাহরণ দিয়েই কংগ্রেসের এই নেতারা বারাণসীর প্রসঙ্গ টানছেন। তাঁদের মতে, মোদীর বিরুদ্ধে যদি লড়াইয়ের বার্তা দিতেই হয়, তা হলে দিগ্বিজয় সিংহ বা জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতাকে প্রার্থী করে তা করা যাবে না। কেন না এই সব নেতাদের মোদী-বিরোধী মন্তব্য ক্লিশে হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া দিগ্বিজয় সিংহকে অনেকেই এখন আর ‘সিরিয়াস’ নেতা বলে গুরুত্ব দেন না বলে মত তাঁদের। প্রশ্ন হল, তা হলে বারাণসীতে প্রার্থী হিসেবে কাকে চান কংগ্রেসের এই নেতারা?
কংগ্রেসের এই নেতাদের মতে, রাহুল নিজে প্রার্থী হলেই বা ক্ষতি কী? রাহুল এই ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখালে উত্তরপ্রদেশে ভোটের খেলাটাই বদলে যাবে বলে মত তাঁদের। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্য আজ জানান, রাহুলের যে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা নেই, তা নয়। দু’বছর আগে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের সময় রাহুল নিজেই চেয়েছিলেন যে আনুষ্ঠানিক ভাবে না হলেও পরোক্ষে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে। তাঁর মত ছিল, তিনি সেই ঝুঁকি নিলে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের অনুকূলে হাওয়া ঘুরতে পারে। কিন্তু দলের বর্ষীয়ানরা তখন তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন। এ বারও তাঁরাই রাহুলের ঝুঁকি নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এই সব প্রবীণ নেতার বক্তব্য, মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার পর গাঁধী পরিবারের কেউ যদি হেরে যান, তা হলে তাঁদের যাবতীয় আক্রমণ বরাবরের জন্য ভোঁতা হয়ে যাবে। কারণ, ভবিষ্যতে তা নিয়ে বারবার খোঁটা দেবেন মোদী।
যা শুনে দলের এক তুলনামূলক নবীন নেতা বলছেন, রাহুল নিজে ঝুঁকি না নিলেও প্রিয়ঙ্কা বঢড়াকে সেখানে প্রার্থী করা যেতেই পারে। সেটা হলেও বারাণসীতে মোদীর লড়াই কঠিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস কর্মীরা তাতে লড়াইয়ের জন্য অক্সিজেন পাবেন।
বারাণসীর মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে যেমন সাতপাঁচ অঙ্ক কষা চলছে, তেমনই অবস্থা হয়েছিল বিজেপিতেও। রাহুল-সনিয়ার বিরুদ্ধে জুতসই প্রার্থী দেওয়ার জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে পেশী ফোলাচ্ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। রায়বরেলীতে সনিয়ার বিরুদ্ধে উমা ভারতীকে প্রার্থী হতে বলেছিলেন মোদী-রাজনাথরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সনিয়ার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অজয় অগ্রবালকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর রাহুলের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী স্মৃতি ইরানি। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে এই সব প্রার্থীরা মোটেই ওজনদার নন। এ নিয়ে সরব অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টিও। যুযুধান দুই দলের শীর্ষ স্তরে আঁতাত নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা।
বিজেপির হাল দেখে কংগ্রেসের একাংশের মধ্যেও এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, তা হলে কি মোদীর বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাকেই টিকিট দেবেন রাহুল? প্রসঙ্গত, বারাণসী থেকে মোদীর নাম ঘোষণার আগে সেখানে প্রার্থী হিসেবে দু’জন স্থানীয় নেতার কথা ভেবেছিলেন রাহুল। তাঁদের একজন স্থানীয় বিধায়ক অজয় রাই, অন্যজন প্রাক্তন সাংসদ রাজেশ মিশ্র। কিন্তু প্রশ্ন হল, মোদীর বিরুদ্ধে এই নেতাদের কাউকে প্রার্থী করা হলে কি তিনি ওজনদার বলে বিবেচিত হবেন? কংগ্রেসের একাধিক নেতা বলছেন, স্থানীয় নেতা হিসেবে হয়তো এই দু’জন কিছুটা ভোট কাটবেন। কিন্তু মজবুত প্রার্থী হিসেবে অন্তত জাতীয় স্তরে বিবেচিত হবেন না এবং সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবেন না। বরং তাঁদের নিয়ে বেশি মাতামাতি করতে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে যাবে। এই অবস্থায় এই নেতাদের বক্তব্য, দল যখন একবার মজবুত প্রার্থী দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে, তখন তা করে দেখানো জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy