জন্মদিনে আডবাণীকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন মোদী। ছবি: পিটিআই
টিভি সিরিয়ালের ভাষায়, একে বোধহয় বলা চলে ‘ইমোশনাল অত্যাচার।’
সরকার পরিচালনা থেকে দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এই মুহূর্তে লালকৃষ্ণ আডবাণীর রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যও নন তিনি এখন। মুরলীমনোহর জোশীর সঙ্গে আডবাণীকেও করে দেওয়া হয়েছে ‘পথ প্রদর্শকমণ্ডলী’-র সদস্য। কিন্তু আজ প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রীর ৮৭তম জন্মদিনে পৃথ্বীরাজ রোডের বাসভবনে হাজির হলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী।
সাতসকালে মোদী ফোন করে আডবাণীকে জানান, বেনারস থেকে দিল্লি বিমানবন্দরে নেমেই সোজা পৌঁছে যাবেন তাঁর বাড়িতে। সকাল-সকাল টুইট করেও মোদী জানিয়েছেন, ‘আডবাণী না থাকলে দল আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না।’ মোদী আসার আগেই আডবাণীর কাছে সাতসকালে হাজির হয়ে যান রাজনাথ সিংহ। ভোপাল থেকে উড়ে আসেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। দুই নেতাই জানতেন না প্রধানমন্ত্রীও আসছেন! সে খবর শুনেই তাঁরা দ্রুত পাট গুটিয়ে বিদায় নিতে চান। কিন্তু আডবাণী তাঁদের থেকে যেতে বলেন। ফলে মোদী যখন আসেন তখন বিজেপির ওই দুই শীর্ষ নেতাও সেখানে হাজির। অরুণ জেটলি না এলেও সকালেই আডবাণীর সঙ্গে তাঁর ছবি দিয়ে ফেসবুকে বার্তা দিয়েছেন। সেই ছবির শিরোনামে আডবাণীর প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতাও ব্যক্ত করেছেন।
কার্যত রাজনৈতিক সন্ন্যাসে পাঠিয়ে দেওয়া মানুষটির প্রতি এই ব্যাপক আবেগ প্রদর্শনের ফলে ৩০, পৃথ্বীরাজ রোড আজ হয়ে ওঠে দিল্লির রাজনীতির এক অসাধারণ মিলনমঞ্চ। বিজেপির অন্য মন্ত্রী-নেতাদের মনে ধন্দ ছিল আডবাণীর জন্মদিনে অতীতে যে ভাবে তাঁরা যেতেন, সে ভাবে আজ যাওয়া উচিত কি না। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রী চলে আসায় সেই ধন্দ কেটে যায়। দিল্লি বিজেপির এক নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার পর এখন যদি না যাই, তা হলে বরং পাল্টা প্রশ্ন উঠবে কেন গেলাম না!” ফলে মোদীর সফরের পরই আডবাণীর বাড়িতে শুরু হয়ে যায় দর্শনার্থীর মিছিল। শিল্পপতি থেকে নেতা রাত পর্যন্ত ঢল নামে জনতার। সুনীল মিত্তাল তো এসেই বললেন, “দু’বার আসার চেষ্টা করে ফিরে যেতে হয়েছে। প্রথম বার প্রধানমন্ত্রীর জন্য, আর দ্বিতীয় বার কোনও রাজ্যপালের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী রাস্তা আটকে দিয়েছিল।” সুষমা স্বরাজ দিল্লিতে ছিলেন না। ফোন করে আডবাণীকে জানালেন, “রাতে দিল্লি পৌঁছেই আপনার বাড়ি যাচ্ছি!” ফোন করেছিলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। আরএসএস নেতারা অনেকেই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। ফোন করেছিলেন মোহন ভাগবতও।
অনেক দিন পর আডবাণীর বাড়ি আজ কর্মমুখর। কন্যা প্রতিভা সকলের তদারকি করছেন। পুত্র জয়ন্ত, পুত্রবধু গীতিকা তাঁদের শিশুকন্যাকে নিয়ে দেখা করতে আসেন। আজকাল তাঁরা দিল্লির অন্যত্র থাকেন। অনেক দিন পর পারিবারিক চিত্র দেখা গেল বাসভবনে। কিন্তু এ সবের মধ্যে বিষাদের ছোঁয়াও রয়েছে। অতীতের মতো এখন আর শারীরিক ভাবে সুস্থ নন আডবাণীর স্ত্রী কমলাদেবী। একদা গৃহকর্ত্রী হিসাবে এ ধরনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। নৈশভোজ হত, গানবাজনার আসর বসত। আর এখন সেই মানুষটি স্মৃতিভ্রংশের শিকার। হুইল চেয়ারে বসে রয়েছেন। বস্তুত আডবাণী ও কন্যা প্রতিভাকে ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারেন না। চিকিত্সকেরা অবশ্য বলছেন, আগের চেয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মনস্তত্ত্ব কর্মীরা মস্তিষ্কের নানা ধরনের ব্যায়াম করাচ্ছেন নিয়মিত। এক থেকে একশো লিখতে দিচ্ছেন। চেনা নামগুলিকে বারবার লেখাচ্ছেন। বাবা-মায়ের জন্য এখন প্রতিভা নিজের অফিসের কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। সংসার পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। সকালেই অবশ্য কমলাদেবী আডবাণীকে
বলেন, “আজ আমার মন ভাল নেই।” আডবাণী প্রশ্ন করেন, কেন? কমলা বলেন, “সকাল থেকে আজ তোমাকে দেখতে পাইনি।” উত্তরে আডবাণী জানান, “আসলে আজ জন্মদিন তো। তাই অনেক লোক দেখা করতে এসেছিল।” সন্ধ্যায় তাই প্রতিভা কিছু পরিচিত মানুষের মধ্যে নিয়ে আসেন মাকে। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তিনি, আর মাঝে মাঝে হাসছিলেন। দিনের শেষে বললেন আডবাণী, “আমার জন্মদিনে এত মানুষ এসেছে দেখে কমলার বিষণ্ণতা কেটে গিয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy