মোদীর সঙ্গে অচ্যুতানন্দন ও উমেন চান্ডি। ছবি: মুখ্যমন্ত্রীর দফতর।
এক জন থাকেন ক্লিফ হাউসে। আর এক জন ক্যান্টনমেন্ট হাউসে। দুই ঠিকানা থেকে দু’জনের গাড়ি ভোরে এসে থামল বিমানবন্দরে। তার পর সাড়ে চার ঘণ্টার উড়ানে একসঙ্গে। দিল্লি নেমে প্রায় হাত ধরাধরি করে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। সেখান থেকে যৌথ দৌত্য রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছেও। হাতে যৌথ স্বাক্ষরিত দাবিপত্র।
কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসা ইস্তক মোদী বলেছেন, রাজনীতি থাকুক রাজনীতির জায়গায়। উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রের সহযোগিতার নীতিতে তার কোনও আঁচড় না পড়াই বাঞ্ছনীয়। রাজনীতির প্রতিযোগিতা সরিয়ে রেখে রাজ্যের জন্য কেন্দ্রের সাহায্য চাইতে একসঙ্গে দিল্লিতে দরবার করে সেই নীতিরই সফল রূপায়ণ ঘটিয়ে দেখালেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি এবং বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন। মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের। বিরোধী দলনেতা সিপিএমের। দু’জনের মধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে অহি-নকুল লড়াই! সোলার কেলেঙ্কারিতে বিরোধী দলনেতা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন, সিবিআই তদন্ত চেয়ে দিল্লিতে চিঠিও লিখেছেন। কিন্তু কেরলের উন্নয়নের প্রশ্নে সেই দু’জনেরই পথ এক বিন্দুতে মিলে গেল মঙ্গলবার! তাঁরা দু’জনে গেলেন এমন প্রধানমন্ত্রীর কাছে, যাঁর দল বিজেপির দক্ষিণী উত্থান চিন্তায় রেখেছে চান্ডির কংগ্রেস এবং ভি এসের সিপিএমকে!
বিজেপি তো বটেই, কংগ্রেস এবং সিপিএম নেতারাও এক বাক্যে বলছেন সংসদীয় গণতন্ত্রে এমনই হওয়া উচিত। সাংবিধানিক রীতি মেনে কেন্দ্র-রাজ্য আদানপ্রদানই সেখানে সুস্থ প্রক্রিয়া। মোদী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে যেমন রাজ্যের উন্নয়নের প্রশ্নে আলোচনা হত কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলের। কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন রাজ্যের প্রয়োজনে। দেশের একমাত্র বাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও আগরতলায় মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা দিল্লিতে মোদীর কাছে গিয়েছেন। এ বার কংগ্রেস-সিপিএমের যৌথ দরবারের ঘটনা ঘটল। সেই সঙ্গেই ফের সামনে এল পুরনো প্রশ্ন এ রাজ্যের জন্যও কি এমন হতে পারে না?
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী চান্ডি বলছেন, “আমি খুব খুশি যে, বিরোধী দলনেতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের সমস্যা ও উন্নয়নের প্রশ্ন নিয়ে কেন্দ্রের কাছে যেতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেছি। রেলমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও সদর্থক আলোচনা হয়েছে।” মুখ্যমন্ত্রী আরও জানাচ্ছেন, মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের প্রসঙ্গে মোদীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তাঁরা। কংগ্রেস ও সিপিএম সূত্রের খবর, মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের জলের উচ্চতা ১৩৬ থেকে ১৪২ ফুট পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য তামিলনাড়ুকে সম্প্রতি অনুমতি দিয়েছে আদালত। জলের উচ্চতা বাড়লে তাঁদের রাজ্যের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এই আশঙ্কা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দৌড়েছিলেন।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি (যিনি সূর্যবাবুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন) বলছেন, “সংসদীয় গণতন্ত্রে এটাই তো হওয়া স্বাভাবিক! রাজ্যের জন্য অভিন্ন বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতেই পারেন।” ইয়েচুরির মতে, পশ্চিমবঙ্গে এ জিনিস দেখা যাচ্ছে না, কারণ মুখ্যমন্ত্রী আপন খেয়ালে চলতে ভালবাসেন! বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কেন্দ্র যেখানে রাজ্যের প্রতি সহযোগিতার কথা বারবার বলছে, তৃণমূলের সরকার সেখানে এ রাজ্য থেকেই নির্বাচিত সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসার সময় পাচ্ছে না!
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলছেন, “কেরলের নেতারা রাজ্যটাকে ভালবাসেন, আমাদের এখানে কেউ ভালবাসে না! নানা দাবি নিয়ে এখানে বিরোধীরা আন্দোলন করেন। কিন্তু রাজ্যের দাবি আদায়ে সরব হন না!” আবার কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “আমরা সব সময় একসঙ্গে কেন্দ্রের কাছে সওয়াল করতে চেয়েছি। এখানে তো মুখ্যমন্ত্রী জেলায় গেলে অন্য দলের বিধায়কদের পর্যন্ত ডাকেন না!”
সত্যিই দূরের কথা! চান্ডি-ভি এসদের বিমান একসঙ্গে দিল্লির মাটি ছুঁতে পারে। বাংলা তরজায় আছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy