পশুরাজের মন বোঝা। সে বড় সোজা কথা নয়। আম আদমির সাধ্যের অতীত। হয়তো কিছুটা পারেন পশু প্রশিক্ষকেরা। কিন্তু ভোটের আগে সেই কাজটাও করে ফেলেছেন বলে দাবি স্বঘোষিত সিংহহৃদয় রাজনীতিকদের।
বেশ ফাঁপরে পড়ে গিয়েছিলেন অখিলেশ। উত্তরপ্রদেশের এটাওয়াতে তিন হাজার একর এলাকায় সিংহ-সাফারি শুরু হবে। কিন্তু একে উত্তরপ্রদেশে সিংহ বাড়ন্ত। চিড়িয়াখানায় যারা আছে তারা কেমন রুগ্ণ-বুড়োটে। যাদব দুর্গ বলে পরিচিত এটাওয়াতে ঘুরবে বয়স্ক পশুরাজ! মানতে পারেননি অখিলেশ। দশটি তরুণ, টগবগে সিংহের খোঁজে দূত যায় গোটা দেশে। মধ্যপ্রদেশ সিংহ দিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু রাজনীতিতে অহি-নকুল সম্পর্ক হলেও সিংহ দিতে এগিয়ে আসে নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত। একটা-দু’টো নয়, মোদীর সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত এক সঙ্গে গোটা ছয়েক সিংহ পাড়ি দেয় পশ্চিম থেকে উত্তর ভারতে।
কিন্তু সেই সিংহই আজ আবার নতুন করে অখিলেশ ও মুলায়মকে ফাঁপরে ফেলে দেবে তা হয়তো ভাবেননি সমাজবাদী পিতা-পুত্র। মোদীর সঙ্গে রাজনৈতিক শত্রুতা রয়েছে। তাই তিনি শাসক দলকে আক্রমণ করবেন তা জানাই ছিল সপা শিবিরের। কিন্তু আজ উত্তরপ্রদেশে বরেলীর জনসভায় মোদীর হাতিয়ার যে সিংহ হতে পারে, তা কল্পনা করতে পারেননি সপা নেতারা। শুধু প্রসঙ্গ টেনেই থামেননি মোদী। এক সময়ের আখড়ায় পালোয়ানি করা মুলায়মকে এখন কার্যত ক্ষমতাহীন বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী সিংহ চেয়েছিলেন। আমরা দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সেই সিংহের চলনবলন দেখে হয়ত শক্তি সংগ্রহ করতে পারবেন সপা নেতারা। কিন্তু দেখছি শাসক নেতারা সিংহগুলিকে সামলাতেই পারছেন না। ওদেরকে খাঁচায় বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।’
অবহেলার অভিযোগ করেই ক্ষান্ত থাকেননি গুজরাতের ‘শের’। সপা প্রধান মুলায়ম, তাঁর পুত্র ও পুত্রবধূ এমনকী মুলায়মের ভাইকে গুজরাতের গির অরণ্যে সপরিবার ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, “সপরিবার আসুন। দেখুন আমাদের রাজ্যে সিংহেরা কেমন স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়।” নিজেকে সিংহের সঙ্গে তুলনা করে মোদীর ব্যাখ্যা, “এক সিংহহৃদয়ের সঙ্গে কী ভাবে থাকতে হয় তা ভালই জানে গুজরাতের সিংহেরা।”
একে তো উপহার দিয়ে কটাক্ষ করা। আবার গোটা যাদব পরিবারকে অপমান। বিশেষ করে মুলায়মকে। ক্ষেপে লাল সপা শিবির। প্রথমে সিংহ নিয়ে মোদী অযথা রাজনীতি করে প্রচারে থাকতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেন অখিলেশ। কিন্তু আক্রমণ জুতসই হয়নি বুঝতে পেরেই ফের নতুন করে এক প্রস্ত আঘাত হানেন তিনি। মোদীর সিংহ যে নামেই সিংহ, তর্জন-গর্জনে নয় তা বুঝিয়ে অখিলেশের বক্তব্য, “একটা সিংহের নামকরণও করেছি। নাম রেখেছি হায়না।”
জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদীর ঘোর বিরোধী বলেই পরিচিত সপা শিবির। লোকসভার প্রচারে মোদী গুজরাত মডেল তুলে ধরে ওই রাজ্যের উন্নয়নের চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। আজ সিংহের ছুতোয় অখিলেশ সেই দাবির অসারতাকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন মোদী বা বিজেপি শিবির যতই দাবি করুক গুজরাতের মানুষ মোটেই ভাল নেই। অখিলেশের কথায়, ‘আসার পর লখনউ চিড়িয়াখানায় আমি সিংহগুলিকে দেখতে গেলে ওরা আমায় গর্জন করে স্বাগত জানায়। এবং বেরনোর সময় একই ভাবে গর্জন করে বোঝাতে চায়, গুজরাত থেকে এখানে নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ।’
এত কাণ্ড যে সিংহগুলিকে ঘিরে তারা এখন কোথায় রয়েছে তা আজ খোলসা করেছেন অখিলেশ নিজেই। ‘সিংহগুলি এখন লখনউয়ের চিড়িয়াখানাতে রয়েছে। সাফারির কাজ শেষ হলেই সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে।’ আর সিংহ নিয়ে এই বিতর্ক দেখে এক সপা নেতা হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘তাও তো এটা হাতি নিয়ে বিতর্ক নয়। মায়াবতীর দলের প্রতীকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠলে তো এতক্ষণে গজ-কচ্ছপের লড়াই শুরু হয়ে যেত।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy