Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
জনাদেশ ’১৪

পুরনো ভাবনা ছাড়বেন কবে, প্রশ্নে কারাটেরা

গোটা দেশে মাত্র ১২টি আসন। ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’টি করে। কেরল থেকে ৮। বিপর্যয়ের জেরে জাতীয় দলের মর্যাদাই হারাতে বসেছে সিপিআই। সিপিএম-ও ব্যস্ত অঙ্ক কষতে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ভরাডুবি? সিপিএমের মধ্যেই একটা অংশ এ বার মনে করতে শুরু করেছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধী ভোটের বিভাজন কিংবা বিজেপি-র ভোট কেটে নেওয়াই বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ নয়।

শুক্রবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দফতর থেকে বেরোচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দফতর থেকে বেরোচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।

প্রসূন আচার্য ও প্রেমাংশু চৌধুরী
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০৩:৩১
Share: Save:

গোটা দেশে মাত্র ১২টি আসন। ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’টি করে। কেরল থেকে ৮। বিপর্যয়ের জেরে জাতীয় দলের মর্যাদাই হারাতে বসেছে সিপিআই। সিপিএম-ও ব্যস্ত অঙ্ক কষতে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন ভরাডুবি?

সিপিএমের মধ্যেই একটা অংশ এ বার মনে করতে শুরু করেছে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিরোধী ভোটের বিভাজন কিংবা বিজেপি-র ভোট কেটে নেওয়াই বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ নয়। বামেদের মান্ধাতার আমলের ধ্যানধারণা আঁকড়ে ধরে থাকাই তাদের প্রায় বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিচ্ছে! সিপিএম এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মজবুত করার পক্ষে সওয়াল করে। সরকারি বিনিয়োগকে এখনও বেশি গুরুত্ব দেয়। চিরাচরিত ট্রেড ইউনিয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। যার ধাক্কায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকে যায়, লাল ঝান্ডার আন্দোলনের জেরে চাকরির সুযোগ না হারাতে হয়! সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার প্রশ্ন, “আমরা যাদের জন্য আন্দোলন করি, তারা কি আদৌ আমাদের ভোটব্যাঙ্ক? পশ্চিমবঙ্গে এত দিন ধরে কলকাতা বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণের বিরোধিতায় আন্দোলন হয়েছে। বিমানবন্দর কি গরিব, সর্বহারা মানুষ ব্যবহার করে? এ সব ভেবে দেখার সময় এসেছে!”

প্রশ্ন উঠেছে বামেদের আন্তর্জাতিকতাবাদ নিয়েও। পেরুর সমস্যা বা চিনের কমিউনিস্ট পার্টি কতটা বামপন্থী, তা নিয়ে এ দেশের বামপন্থীদের মাথাব্যথা হাস্যকর, বলছেন অনেকেই।

বামেদের একাংশ মনে করছে, সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের সম্পর্কে ক্ষোভ বামেদের ভোটে রূপান্তরিত হয়নি। জাতীয় স্তরেও বামেরা যে বিকল্প নীতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের সম্ভাবনা ভাসিয়ে দিতে চাইছিলেন, তা-ও আম জনতা গ্রহণ করেনি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট শুক্রবার নিজেই সে কথা মেনে নিয়েছেন। কারাটের এই ভুল স্বীকারও কার্যত পাঁচ বছর আগের পুনরাবৃত্তি! ২০০৯ সালেও কারাটকে মানতে হয়েছিল, তাঁদের বিকল্প জোটের সরকার গঠনের ডাক মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি! আর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, এত খারাপ ফল হবে, তাঁরা বুঝতেই পারেননি।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই ভরাডুবির দায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেবেন, না পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতৃত্ব? স্বয়ং কারাটের বক্তব্য, “কারও কোনও দায়িত্ব নেওয়ারই প্রয়োজন নেই!” কারাটের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গের এই খারাপ ফল দলের সমর্থন বা ভোটের সত্যিকারের প্রতিফলন নয়। কারাটের অভিযোগ, তৃণমূল যে ভাবে রিগিং ও সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাতেই এমন ‘বিকৃত’ ফল হয়েছে। শেষ তিন দফার ভোটেই সন্ত্রাস হয়েছিল। যে দু’টি আসনে সিপিএম জিতেছে, সেখানে তার আগেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। কারাটের কথায়, “আমাদের ভোটের হার এত কমে যেতে পারে, আমি মানতে রাজি নই!” সিপিএমের দলত্যাগী নেতা প্রসেনজিৎ বসু থেকে শুরু করে বামফ্রন্টের কিছু নেতা এ দিন থেকেই ফের দাবি তুলতে শুরু করেছেন, নেতৃত্বে বদল আনলে তবে যদি নতুন কিছু চিন্তাভাবনা আসে! কিন্তু ভরাডুবির দায় নিয়ে ইস্তফা দেবেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে কলকাতায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, “দায় কোনও ব্যক্তির নয়। বামেদের সামগ্রিক কার্যাবলি জনগণ গ্রহণ করেনি।”

প্রশ্নটা অবশ্য শুধু মুখ বদল বা প্রসাধনী আরোপের নয়। জনগণ যা গ্রহণ করতে পারে, সেই পথে তাঁরা যাবেন কি না, তার কোনও আশ্বাস কারাটদের কাছ থেকে মিলছে না। দলের অন্দর মহলেই আলোচনা আছে, ইউরোপের অনেক দেশে বামপন্থীরা পরিবেশ নিয়ে আন্দোলন করে তরুণ প্রজন্মের মন জিতেছেন। অথচ লেনিন-উত্তর যুগের ধারণা আঁকড়ে এ দেশে বামপন্থীরা ওই পথে বিশেষ হাঁটেননি। বাম জমানায় পরিবেশ দফতর চালানো হয়েছে প্রায় হেলাফেলা করেই। সিপিএমের অন্দর মহলে অনেকেই বলছেন, এ থেকেই স্পষ্ট, দল সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। পুরনো ছাঁচ ভাঙতে অসুবিধা হচ্ছে। এক সময় সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে কম্পিউটার বসানোর বিরোধিতা করেছিল। এখন সেই সিপিএম নেতারাই প্রচারে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। কিন্তু অন্দরে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি।

উপুর্যপরি বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাসঙ্গিক থাকার ভাবনা বামপন্থীরা ভাববেন কি না, প্রশ্ন এখন বাম মহলেই।

অন্য বিষয়গুলি:

prasun acharya premangshu chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE