প্রকাশ কারাট। —ফাইল চিত্র
কংগ্রেসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ তৈরিতে সীতারাম ইয়েচুরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ইয়েচুরির প্রয়াণের পর প্রকাশ কারাটের দায়িত্বে তৈরি সিপিএমের রাজনৈতিক পর্যালোচনায় এবার ইন্ডিয়া-র প্রধান শরিক কংগ্রেস সম্পর্কে ভিন্ন সুর শোনা গেল।
আগামী বছর সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে থাকলেও জোটের প্রধান দল কংগ্রেসের থেকে সিপিএমের আর্থিক নীতিগত অবস্থানের ফারাক স্পষ্ট করে দিতে হবে। কংগ্রেসের শ্রেণিচরিত্র তথা নব্য-উদারবাদী আর্থিক নীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্বের প্রশ্নে আপস করলে সিপিএমকে তার সমালোচনা করতে হবে। বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র কথা ভাবতে গিয়ে সিপিএমের নিজস্ব ভূমিকা ও কর্মসূচি শিকেয় তুলে রাখলে চলবে না। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সিপিএম লড়লেও, সমস্ত স্তরে বিজেপির রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত মোকাবিলায় আরও নজর দিতে হবে। এটি জরুরি, কারণ রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের বড় অংশ তৃণমূলকেই বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকরী শক্তি হিসেবে দেখে।
আগামী বছর এপ্রিলে মাদুরাইয়ে সিপিএমের ২৪-তম পার্টি কংগ্রেস। সেই পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজনৈতিক পর্যালোচনা চূড়ান্ত করতে রবিবার থেকে দিল্লিতে সিপিএমের তিনদিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসেছে। ইয়েচুরির প্রয়াণের পরে আগামী পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত প্রকাশ কারাট পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে তৈরি খসড়া রাজনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০২২-এ শেষ পার্টি কংগ্রেসে রাজনৈতিক রণকৌশলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পার্টির নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই রণকৌশল রূপায়ণে দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। একে কার্যত ইয়েচুরি-জমানার সমালোচনা হিসেবেই দেখছেন সিপিএম নেতারা।
পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সম্পর্কে সিপিএমের খসড়া রাজনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০১১-য় বাম সরকারের পতনের পরে সিপিএমের জায়গা দখল করে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে বিজেপি। দলের প্রভাব ও গণভিত্তি কমেছে। দশ বছর ধরে পার্টি একইসঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে। এই প্রেক্ষিতে গেরুয়া শিবিরকেই ‘প্রধান শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত করে খসড়ায় বলা হয়েছে, বিজেপির মোকাবিলায় বেশি নজর দিতে হবে। কারণ, তৃণমূলকেই ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের বড় অংশ বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি হিসেবে দেখছে।
পশ্চিমবঙ্গে পার্টির ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের ভূমিকার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে ছাত্র ও যুব সংগঠন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। আর জি করের ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার পরে স্ফতঃস্ফুর্ত আন্দোলনে মহিলা সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্র-যুবরা ভাল ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু আসল কাজ হল, গ্রামের গরিব মানুষ ও শহরের খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা। এখনও আতঙ্ক ও
হিংসার হুমকির ফলে সংগঠনের সঙ্গে মানুষের রোজকার যোগাযোগ নেই। তৃণমূল ও বিজেপি, দুই দলই
জাত ও গোষ্ঠীর ভিত্তিতে পরিচিতি সত্তার রাজনীতি করছে। দলিত, জনজাতি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের সামাজিক সমস্যা তুলে ধরে কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বি ভি রাঘাভুলু, হেমলতা, এ আর সিন্ধু, অরুণ কুমাররা কংগ্রেস সম্পর্কে মতামত সমর্থন করেছেন। দলের মধ্যে লড়াই করে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য জায়গা ছেড়ে রাখার যে ব্যবস্থা সীতারাম ইয়েচুরি করেছিলেন, তাঁর অবর্তমানে দলের অবস্থান অবিকল একই থাকবে, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বড় অংশই তা মনে করছেন না। বাংলার সিপিএম নেতারাও তার ব্যতিক্রম নন। তবে দলের অবস্থান একেবারে বদলে যাবে, সেটাও তাঁরা মনে করছেন না। সূত্রের খবর, নানা নির্বাচনে আসন সমঝোতায় কংগ্রেসের মনোভাব নিয়ে সমস্যার কথা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বঙ্গ ব্রিগেডের নেতাদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে। প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পরে রাজ্যে ৬টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়নি, সেই তথ্যও ‘রিপোর্ট’ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বৃহত্তর বাম ঐক্যে নতুন উদ্যমের কথা বলা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেস সম্পর্কে কিছুটা সমালোচনামূলক মনোভাব দলের মধ্যে আছে। পরিস্থিতির নিরিখে সেটা অপ্রত্যাশিত নয়। তবে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে একজোট করে লড়াইয়ের পথ থেকে আমরা সরে আসব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy