দুঃসময়ে পুরনো ‘বন্ধু’কে পাশে পেলেন সনিয়া গাঁধী।
প্রধানমন্ত্রীর পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়ার যে ঘটনা সনিয়াকে অন্য রাজনৈতিক উচ্চতা দিয়েছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন একদা ঘনিষ্ঠ বন্ধু নটবর সিংহ। অস্বস্তির এই সময়ে আজ সনিয়ার পাশেই দাঁড়ালেন তাঁর আর এক পুরনো বন্ধু, প্রবীণ সিপিআই নেতা এ বি বর্ধন।
প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী নটবর সিংহ তাঁর আত্মজীবনীতে দাবি করেছেন, দশ বছর আগে সনিয়া কোনও অন্তরাত্মার ডাকে নয়, ছেলে রাহুলের বাধায় প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেননি। আজ সিপিআইয়ের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এ বি বর্ধন কিন্তু অন্য কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিনই সনিয়া তাঁকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে। জন্মসূত্রে বিদেশিনি সনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পদে বসা নিয়ে ভোটের ফল প্রকাশের আগে থেকেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই সনিয়া মনে করেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে শুধু তাঁর দলের নেতাদের নয়, ইউপিএ-সরকারকে সমর্থন করলে বামেদেরও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
নটবর তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন, রাহুলের জেদের কাছেই সে দিন হার মেনেছিলেন সনিয়া। যা শুনে কংগ্রেস সভানেত্রী গত কাল মন্তব্য করেছিলেন, “আমি যখন নিজে বই লিখব, তখনই সকলে সব কিছু জানতে পারবে।” আজ নটবরের পাল্টা কটাক্ষ, সনিয়ার এতটা কড়া প্রতিক্রিয়াই বুঝিয়ে দিচ্ছে, স্পর্শকাতর জায়গায় ঘা লেগেছে।
সেই সময়কার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্ধন আজ বলেন, ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হয় ১৩ মে। সে দিনই বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সনিয়ার দফতর থেকে ফোন আসে দিল্লির অজয় ভবনে। সনিয়া দেখা করতে চান বর্ধনের সঙ্গে। তখনও সব আসনের ফল বেরোয়নি। তবে কংগ্রেসই যে সরকার গঠনে প্রধান ভূমিকা নেবে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফোন পেয়ে দলের নেতা পল্লব সেনগুপ্তকে নিয়ে দশ জনপথে যান বর্ধন। কোথায় যাচ্ছেন, তা দলের আর কাউকে বলেনি। সনিয়ার সঙ্গে সরকার গঠনের নানা দিক নিয়ে কথাবার্তা হয়। বর্ধন সে সময় সনিয়াকে বলেন, শুধু সিপিএম-সিপিআই নয়, ছোট বামদলগুলির সঙ্গেও তাঁর কথা বলা দরকার। সনিয়াও তা মেনে নেন। ফেরার সময় বর্ধন বলেন, “আপনি তা হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তুতি নিন। কিন্তু সনিয়া জবাব দেন, ‘সেটা আমার পক্ষে খুব কঠিন হবে’।”
বাম নেতাদের মধ্যে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ ও সিপিআইয়ের বর্ধনই নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন সনিয়ার সঙ্গে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্ধন তাঁকে সে দিন প্রশ্ন করেননি, কেন প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে। পল্লবকে সঙ্গে নিয়ে বেরনোর সময় রাহুলের সঙ্গে দেখা হয় বর্ধনের। রাহুল প্রথম বার সাংসদ হয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। বর্ধনকে দেখে তাঁকে প্রণাম করেন রাহুল। সে দিন না করলেও প্রশ্নটা অবশ্য বর্ধন কয়েক দিন পরে সনিয়াকে করেছিলেন। তত দিনে ঠিক হয়ে গিয়েছে, বামেরা ইউপিএ-সরকারকে সমর্থন করবে। সনিয়া ১৫টি দলের জোট ইউপিএ-র সংসদীয় দলনেত্রীও নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। এনডিএ ফের সনিয়ার বিদেশিনি প্রশ্নে সরব। কিন্তু সনিয়া যে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসবেন না, তা ঘোষণা করেননি। বর্ধনের প্রশ্নে সনিয়া বলেছিলেন, “এতে আপনাদেরও অস্বস্তির মুখে পড়তে হবে। সব সময় আমাকে রক্ষার জন্য আপনাদের মাঠে নামতে হবে’।” আজ বর্ধন বলেন, “বুঝতেই পেরেছিলাম, বিদেশিনি প্রশ্ন নিয়ে তিনি বিব্রত বোধ করছেন। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীর পদগ্রহণ নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন।’’
নটবর অবশ্য এখনও তাঁর যুক্তিতেই অনড়। আজ কংগ্রেস সভানেত্রীকে ফের খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি সনিয়ার পরামর্শদাতা হলে ওঁনাকে মুখ না খুলতে বলতাম। তবে আমি ওঁনার বই পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। আশা করি, খুব শীঘ্রই উনি বই লিখবেন।” সনিয়াকে একটি বিষয়েই আজ কৃতিত্ব দিয়েছেন নটবর। তা হলে কংগ্রেসকে অটুট রাখা। নটবরের মতে, সনিয়া না থাকলে কংগ্রেস ভেঙে পাঁচ টুকরো হয়ে যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy