চল কোদাল চালাই...। শনিবার বারাণসীর অসি ঘাটে সাফাইয়ের কাজে নামলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পিটিআইয়ের ছবি।
রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে শুক্রবারই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, “আপনারা ২৮২টি আসন পেয়েছেন। এটাই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়!”
চিদম্বরম আর্থিক সংস্কারের দিকে ইঙ্গিত করেছেন বটে, কিন্তু বিজেপি মন্ত্রিসভার প্রথম রদবদলের আগের দিন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই যে, প্রত্যাশিত প্রশাসনিক সংস্কার কি করে উঠতে পারবেন নরেন্দ্র মোদী? লোকসভা ভোটের প্রচার পর্বে মোদীর স্লোগান ছিল ‘ন্যূনতম সরকার আর সর্বোচ্চ প্রশাসন’। কিন্তু সরকার গড়ার সময় সেই স্লোগান পূরণ করার প্রথম ধাপ একই ধরনের বিভিন্ন মন্ত্রক মিলিয়ে দেওয়া, সেটাই করে উঠতে পারেননি তিনি। তবে মন্ত্রীর সংখ্যা কমিয়ে মোটামুটি ভাবে ছিপছিপে রেখেছিলেন মন্ত্রিসভা।
চার মাস পরে সেটুকুও বোধহয় আর থাকছে না! আগামিকাল দুপুর ১টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ। তার আগে প্রাতরাশে ভাবী মন্ত্রীদের ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানা যাচ্ছে, বিজেপি ও শরিক দল মিলিয়ে অন্তত ১৫-১৬ জন নেতা ডাক পেয়েছেন। ফলে বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েক জন যদি বাদ না পড়েন, তা হলে মন্ত্রিসভার কলেবর অনেকটাই বেড়ে যাবে। যে ইঙ্গিত দেখে কংগ্রেসের অনেকেই কটাক্ষ করে বলছেন, এ যেন তৃতীয় ইউপিএ সরকারই গড়ছেন নরেন্দ্র মোদী!
অথচ বিজেপি সূত্র বলছে, সপ্তাহখানেক আগেও ঘনিষ্ঠ মহলে মোদী জানিয়েছিলেন, এখনই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের ইচ্ছে তাঁর নেই। তা হলে হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন? বিজেপি নেতারা বলছেন, বেশ কিছু বাধ্যবাধকতাই মত বদলাতে বাধ্য করল মোদীকে।
প্রথমত, শিবসেনাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল করানো। মহারাষ্ট্রে সোমবার থেকে শুরু বিধানসভা অধিবেশন। বুধবার আস্থা ভোট। তার আগে শিবসেনার নিঃশর্ত সমর্থন চায় বিজেপি। তাদের ইতিবাচক বার্তা দিতেই আগেভাগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তাঁদের মন্ত্রীকে সামিল করতে চাইছেন মোদী। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি কম নয়। শিবসেনার দাবি, আগে মহারাষ্ট্রে মন্ত্রিত্বের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে জট ছাড়াতে হবে, তার পর তারা কেন্দ্রে মন্ত্রীর নাম জানাবে। মোদী চান, শিবসেনা নেতা সুরেশ প্রভুকে সরকারে আনতে। সূত্রের খবর, সুরেশকে রেল মন্ত্রকে আনা হতে পারে। অথবা যোজনা কমিশন ভেঙে যে নতুন সংস্থা তৈরি হচ্ছে তার দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি। শিবসেনার বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে সুরেশকে তাদের কোটার মন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তাদের আলাদা দু’জন নেতাকে মন্ত্রী করতে হবে। আজ দিনভর আলোচনার পর সুর নরম করেছে শিবসেনা। তাদের অনিল দেশাই মন্ত্রী হতে পারেন।
সমস্যা অন্য শরিক চন্দ্রবাবু নায়ডুকে নিয়েও। তাঁর দল থেকে মাত্র এক জন মন্ত্রী হওয়ায় তিনি অখুশি। তাঁর মন পেতে টিডিপি-র ওয়াই এস চৌধুরিকে মন্ত্রী করতে হচ্ছে।
শরিকি জটিলতা ছাড়াও মন্ত্রিসভায় আঞ্চলিক ভারসাম্য না-রাখার অভিযোগও উঠেছে মোদীর বিরুদ্ধে। সামনেই পরপর বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। ফলে সেই সব রাজ্যের দাবির কথা মাথায় রাখতেই হচ্ছে। যেমন, আগামী বছর ভোট বিহারে। সে রাজ্য থেকে চার জনের নাম উঠে আসছে। ভূমিহার নেতা হিসেবে গিরিরাজ সিংহ ও ভোলা সিংহ, লোকসভা ভোটের আগে লালুর দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রামকৃপাল যাদব এবং বিজেপি নেতা রাজীব প্রতাপ রুডি।
সদ্য হওয়া ভোটে এই প্রথম বারের জন্য হরিয়ানা দখল করেছে বিজেপি। ফলে সেই রাজ্যের দাবি মেনে বীরেন্দ্র সিংহকে মন্ত্রী করার ভাবনা রয়েছে। লোকসভা ভোটে গুজরাতের মতো রাজস্থানে ভাল ফল করলেও কেন্দ্রে মাত্র এক জনকে মন্ত্রী করায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। তাই সে রাজ্য থেকে রাজ্যবর্ধন রাঠৌর, কর্নেল সোনারাম চৌধুরি, গজেন্দ্রসিংহ শেখাওয়াত, সনওয়ারলাল জাঠের মধ্যে কাউকে মন্ত্রী করা হতে পারে। একই ভাবে, সংখ্যালঘু মুখ মুখতার আব্বাস নকভি, পঞ্জাবের দলিত নেতা বিজয় সাম্পলা, মহারাষ্ট্রের হংসরাজ আহির, ছত্তীসগঢ়ের রমেশ ব্যাস, উত্তরপ্রদেশের সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাবুল সুপ্রিয়র নাম সম্ভাব্য তালিকায় আছে।
গোড়া থেকে মন্ত্রিসভায় তরুণ মুখ সামিল করার যে প্রক্রিয়া মোদী শুরু করেছেন, তাতে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছেন না তিনি। বিহারের প্রবীণ নেতা সি পি ঠাকুরকে ফোন করে মোদী বুঝিয়েছেন, যে যুক্তিতে লালকৃষ্ণ আডবাণী বা মুরলীমনোহর জোশীকে মন্ত্রী করা হয়নি, সেই বয়সের নিরিখে তাঁকেও মন্ত্রী করা যাচ্ছে না। ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোটের মুখে ৮২ বছরের যশবন্ত সিন্হাকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা সম্ভব নয়।
বরং মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন তাঁর ছেলে জয়ন্ত সিন্হা। একই ভাবে, হিমাচলপ্রদেশে শান্তা কুমারদের মতো প্রবীণ নেতাদের বদলে অনুরাগ ঠাকুরের মতো নবীন মুখকে নিয়ে আসা হতে পারে মন্ত্রিসভায়। বড় নামের মধ্যে ঠাঁই পেতে পারেন জগৎ প্রকাশ নাড্ডাও। অমিত শাহের সঙ্গে নাড্ডার নামও বিজেপির সভাপতি পদের দৌড়ে সমান ভাবে চলেছিল। মন্ত্রিসভায় এলে গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পেতে পারেন নাড্ডা।
এত সম্ভাব্য নতুন নামের বিপরীতে ‘বাদ পড়তে পারেন’ এই তালিকাটা কার্যত শূন্যই। শুধু সদানন্দ গৌড়াকে রেল মন্ত্রক থেকে সরানো হতে পারে বলে জল্পনা দিল্লির দরবারে। ফলে পূর্বসূরিদের মতো মোদীও যে ‘জাম্বো ক্যাবিনেট’-এর পথে হাঁটছেন তা মোটামুটি স্পষ্ট। ও এত দাপট দেখিয়েও তিনি যে শেষ পর্যন্ত রাজনীতির বাধ্যবাধকতা থেকে বেরোতে পারছেন না, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে মুখও খুলেছেন কয়েক জন বিজেপি নেতা।
এর পর প্রশাসনিক সংস্কারের অঙ্গীকার কী ভাবে পূরণ করেন মোদী, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy