জনসভায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং কিরণ বেদী। শনিবার দিল্লির কারকারডুমায়। ছবি: পিটিআই
নরেন্দ্র মোদী বনাম নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি ভোটের আসরে নেমে এখন এই লড়াইটাই লড়তে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে।
বিজেপি নেতারাই বলছেন, লোকসভার পরে যতগুলি ভোট হয়েছে, তার মধ্যে কঠিনতম লড়াইয়ের মুখে মোদী। কারণ, ভোট হচ্ছে দেশের রাজধানীতে। যেখানে প্রতি মুহূর্তে কষ্টিপাথরে বিচার হচ্ছে মোদীর সাত মাসের সাফল্য-ব্যর্থতা। আর যেখানে মূল প্রতিপক্ষ রাজনীতির উঠোনে চেনা গতের বাইরে একটি নাম। অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁকে টক্কর দিতে তাঁরই পুরনো সহযোগী কিরণ বেদীকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাতেও হাওয়া ঘোরেনি। তাই আজ থেকে আসরে নামলেন স্বয়ং মোদীই।
দিল্লিতে ভোট ঘোষণা ও কিরণকে মুখ করার পরে প্রথম সভা। কারকারডুমার সেই সভায় স্বাভাবিক ভাবেই নিশানায় ছিলেন কেজরীবাল। নাম না করেই মোদী জানান, এক বছর আগে স্বপ্ন দেখিয়ে যাঁদের ভোট নিয়েছিলেন, সেই দিল্লিবাসীর পিঠে ছুরি মেরেছেন কেজরীবাল। দিল্লিতে এক স্থির সরকার চাই, উন্নয়ন চাই।
কিন্তু ভোট ঘোষণার আগে রামলীলার জনসভায় যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে হেঁটেছিলেন মোদী, এ বারে তা করেননি। কারণ মোদী বুঝেছেন, কেজরীবালকে আক্রমণ করলে সেটি নিজের পক্ষে ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন তিনি। সে কারণে লোকসভার সময় যেমন গোটা দেশ ও বিশ্বের প্রেক্ষিতে নিজেকে মেলে ধরতেন মোদী, তেমনটি আজও করলেন। টেনে আনলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের সাফল্যও। কেজরীবালের গরিব ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে বোঝালেন তাঁর সরকার কী রকম গরিব-দরদি। সে জনধন প্রকল্পই হোক বা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি গরিবদের ব্যাঙ্কে পৌঁছে দেওয়া, কেন্দ্রের সব প্রকল্পেরই প্রচার করলেন।
আর দিল্লিবাসীর সঙ্গে নিজের আবেগ জুড়তে বললেন, “আপনারা ডেকেছেন বলেই তো আমি এখন দিল্লিবাসী। কিন্তু শুধু সাউথ ব্লকে বসে থাকা নয়, দিল্লির অলিতে-গলিতে সেবা করতে চাই।” মোদী প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তৃতা দিলেও কিরণ বেদীর সময় নির্ধারিত করা হয়েছিল মাত্র দশ মিনিট। তার মধ্যে তিনি ব্যস্ত থাকলেন মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা নিয়ে।
মোদীর সভা শেষ হতেই দিল্লির আর এক প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর যাবতীয় প্রতিশ্রুতি ও সাফল্যকে নিজের ছন্দে ভেস্তে দিতে তৎপর হলেন কেজরীবাল। আজ সকালেই তিনি দলের ইস্তাহার প্রকাশ করে ভুরি-ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি এ বারে কোনও ইস্তাহারই প্রকাশ করছে না। কারণ, কেজরীবালের মতো জল, বিদ্যুতের দাম সস্তা করা কিংবা দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি বিজেপির পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আর সেখানেই মোদীকে চেপে ধরছেন কেজরীবাল। নিজের সভায় একটি ছোট্ট চিরকুট পকেট থেকে বের করে তিনি বলেন, “আমরা দিল্লিবাসীর কাছে এত প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আর মোদীর প্রতিশ্রুতি মাত্র এই ছোট্ট কাগজে শেষ। মোদী আজ যা বলছেন, লোকসভাতেও তা বলেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও দিল্লিতে ধর্ষণ হয়েছে। গ্যাসের ভর্তুকি পাওয়ার জন্য বিপিএল কার্ড চাই, ক’জনের হয়েছে? এত দিন রাজ্যপালের শাসনে বকলমে তো দিল্লি কেন্দ্রের হাতেই ছিল, যমুনা সংস্কার হয়নি কেন?”
এখানেই মোদীর সঙ্গে মোদীর দ্বন্দ্ব হচ্ছে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। কারণ, দিল্লির ছোটখাটো বিষয় তুলে ধরে কেজরীবাল যে ভাবে প্রচার করছেন তা মোদীর পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু মোদী সরকারের সাত মাসের খতিয়ান তুলে ধরে আক্রমণ করতে পারছেন আম আদমি পার্টির নেতা। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন থাকাতে তাঁর আরও সুবিধে হয়েছে।
কোন মোদী লড়াইয়ে জেতেন, তাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy