লোকসভা ভোটে ভরাডুবির গ্লানি এখনও টাটকা। তা নিয়ে পর্যালোচনার মধ্যেই কংগ্রেসের ঘুম কেড়ে নিয়েছে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা নিয়ে উদ্বেগ। এ বছরের শেষ দিকে এই দুই রাজ্যেই বিধানসভা ভোট। সর্বভারতীয় স্তরে দলের ধস রোখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ের মধ্যেই ফের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে কংগ্রেস। কিন্তু তারও আগে এই দুই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে বিদ্রোহ আছড়ে পড়ল দশ জনপথে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকে সরানোর দাবি নতুন নয়। গত ছ’মাস ধরে সেই দাবি মাঝে মধ্যেই জেগে উঠেছে। কিন্তু লোকসভা ভোটে গোহারার পর এখন জ্বালামুখ খুলে গিয়েছে। লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস এ বার পেয়েছে মাত্র দু’টি! কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের নেতারা প্রায় একমত যে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ সঠিক নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ। গত তিন দিন ধরে মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের একাধিক নেতা সনিয়া ও রাহুলকে জানিয়েছেন, পৃথ্বীরাজ যে ভাবে কাজ করছেন, তাতে বিধানসভা ভোটেও ভরাডুবি অনিবার্য।
চহ্বাণকে সরানোর ব্যাপারে দ্বিধায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দলের শীর্ষ সূত্রে খবর, পৃথ্বীরাজের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের যে অভাব রয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না সনিয়া-রাহুলের। কিন্তু তাঁদের সংশয়, ভোটের চার মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে কি রাজনৈতিক ফায়দা পাওয়া যাবে?
লোকসভা ভোটের আগে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিজয় বহুগুণাকে সরিয়ে হরিশ রাওয়াতকে মুখ্যমন্ত্রী করেন সনিয়া। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কংগ্রেসের। তাই এখনই মুখ্যমন্ত্রী বদল না করে সংগঠনকে শক্তিশালী করাকেই অগ্রাধিকার দিতে চান সনিয়া। সেই সঙ্গে এ-ও চাইছেন, যাতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করেন। যদিও দলের বহু নেতা বলছেন, কংগ্রেসের সবাই এক সঙ্গে লড়ার বিষয়টি প্রায় সোনার পাথরবাটির মতো!
দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ সূত্রে অবশ্য এ-ও বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বদল নিয়ে সনিয়া এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদল করা হবে। তাতেও বিদ্রোহ না কমলে মুখ্যমন্ত্রী বদলের কথা ভাববেন সনিয়া। হাইকম্যান্ডের এই দাওয়াই আপাতত অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলতে হচ্ছে রাজ্য নেতাদের। তবে তাঁরা হুমকি দিয়েছেন, অবিলম্বে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে মানিকরাও ঠাকরেকে সরাতে হবে। সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে মহারাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোহন প্রকাশকেও সরাতে হবে।
এই দুই দাবি নিয়ে অবশ্য হাইকম্যান্ড সহানুভূতিশীল। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণকে প্রদেশ সভাপতি করার বিষয়টি হাইকম্যান্ডের বিবেচনায় রয়েছে। রাজ্যে কংগ্রেসের যে দুই নেতা এ বার লোকসভা ভোটে জিতেছেন, তাঁদের মধ্যে অশোক অন্যতম। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, শরদ পওয়ারের সঙ্গে দর কষাকষি একমাত্র এই মরাঠা নেতাটিই করতে পারবেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রাণেও এ বার সংগঠনে বড় পদ চাইছেন। তবে রাণের ছেলে লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর তাঁর কর্তৃত্ব দুর্বল হয়েছে।
হরিয়ানায় ১০টি আসনের মধ্যে ১টি জিতেছে কংগ্রেস। সেখানেও রাজ্য কংগ্রেস নেতারা মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ভূপেন্দ্রসিংহ হুডাকে সরাতে সক্রিয় হয়েছেন। গত কালই সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে হুডাকে সরানোর দাবি জানান হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা বিজেন্দ্র সিংহ। সনিয়ার আস্থাভাজন দলিত নেত্রী কুমারী শৈলজা আজ বলেন, “হরিয়ানায় কংগ্রেস এখন ওয়ান ম্যান শো-য়ে পরিণত হয়েছে! লোকসভায় মাত্র ১টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। বিধানসভা ভোটে তলানিতে নামার আগে আশা করি চেতনা হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।”
হুডাকে সরানোর ব্যাপারেও হাইকম্যান্ড বিভ্রান্ত। শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মতে, রাজ্য সংগঠনে হুডা যে ভাবে নিজের লোক ঢুকিয়ে রেখেছেন, তাতে তাঁকে সরালে হিতে বিপরীত হবে। হরিয়ানায় এ বার বিপুল জাঠ ভোট পেয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা, হুডার মতো এক জন জাঠ নেতাকে সরালে ওই সম্প্রদায়ের ভোটে আরও ধস নামবে।
তবে সনিয়া-রাহুল এটুকু বুঝতে পারছেন, মহারাষ্ট্র-হরিয়ানা নিয়ে সিদ্ধান্ত খুব শীঘ্রই নিতে হবে। না হলে ফের ভরাডুবি অনিবার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy