খাবারের ডাব্বায় প্রেমপত্র! শুনেছেন কখনও?
সক্কাল-সক্কাল গিন্নির সঙ্গে ঝগড়া করে অফিস গিয়েছেন কর্তা। দুপুরে যখন গিন্নির হাতের রান্নার ডাব্বা হাতে দিলাম, কর্তা খুলে দেখেন চিরকূট। গিন্নি লিখেছে, ‘আই লাভ ইউ। রাগ কোরোনা। খেয়ে নাও।’ ওমনি গলে জল। বেজার মুখে হাসি এল। খাবার খেয়ে খালি টিফিন বাক্সে আবার সিনেমার রাতের শো-র দুটো টিকিট পাঠালেন গিন্নিকে।
ট্রেন ছুটছে। বিরার হয়ে বোরিভলি। অন্ধেরি-বান্দ্রা-দাদর ছুঁয়ে চার্চগেট। কপালে তিলক আর গাঁধী টুপি। সামনে সার সার খাবারের ডাব্বা। লেডিস কামরার পাশের ভেন্ডারে ডাব্বার এমন হরেক গল্প শেষই হচ্ছে না বিট্টলভাইদের, “শুনুন ঘড়ির কাঁটা ভুল সময় দিতে পারে, মুম্বইয়ের ডাব্বাওয়ালারা নয়। গিন্নিদের হাতের রান্না ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবে তাদের কর্তার টেবিলে। আমরা ইংরেজ জমানার জেলার না হই, ইংরেজ জমানার ডাব্বাওয়ালা।”
১২৫ বছরের রেওয়াজ। এখন গোটা শহরে পাঁচ হাজার ডাব্বাওয়ালা। রোজ খাবার ফেরি করেন দু’লক্ষ মুম্বইকরকে। প্রিন্স চার্লস এসে দেখা করেছেন। বিয়েতেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রিচার্ড ব্র্যানসন ডাব্বাওয়ালাদেরই ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করেছেন। ভোটের সময় এমন নিখুঁত নেটওয়ার্কে নজর সব দলেরই। কিন্তু বাজিমাত করেছেন উদ্ধব ঠাকরে। সংগঠনের নেতাদের আগেভাগে মাতোশ্রীতে ডেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মুম্বইতে হবে ডাব্বাওয়ালা ভবন। আর সরকারে এলে প্রথম বছরে পাঁচ কোটি টাকার সাহায্য। বদলে এখন ডাব্বায় বিলি হবে আবেদনপত্র। শিবসেনাকে ভোট দেওয়ার। ডাব্বাওয়ালা সংগঠনের নেতা সঞ্জয় তড়কেও জানিয়ে দিয়েছেন, “উদ্ধব ঠাকরেকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম, বিজেপি-শিবসেনার জোট থাকুক। মহারাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য দু’দলের একসঙ্গে থাকা দরকার ছিল।”
কিন্তু চাইলেই কি সব হয়? ভোটের মুখে এমন ভাবে সব হিসেব উল্টে যাবে, কে জানত? শিবসেনাকে ভোট দেওয়ার আবেদনপত্র হাতে নিয়েও মন খচখচ করছে অনেকের। ভোট কাকে দেবেন? বালসাহেব না কি নরেন্দ্র মোদী? ঠাকরের প্রতি অতীতের আবেগ না মোদীর দেখানো ভবিষ্যতের স্বপ্ন! বেছে নেবেন কোনটা? চার্চগেট স্টেশন আসতেই ভোটের কথা তুললাম। উমেশ বললেন, “বালসাহেব তো ভগবান। কিন্তু উন্নয়ন যদি কেউ করেন, তিনি মোদী। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, এ বারে রাজ্যের উন্নয়নেও তাঁকে সুযোগ দেওয়া উচিত। মন তো আজও বালসাহেবকেই চায়। কিন্তু বুদ্ধি বলছে মোদী।” এই ঘুরপাকেই এখন আটকে রয়েছেন রাজ্যের মানুষ। চলন্ত ট্রেন, শহরের অলিতে-গলিতে একটাই ধন্দ, কোন পথে যে চলি!
গোটা শহর জানে, জোট না ভাঙলে এ বারে মহারাষ্ট্রের কুর্সিতে বিজেপি-শিবসেনার সরকার নিশ্চিত ছিল। কংগ্রেস-এনসিপির বিরুদ্ধে ওঠা ঝড়ে বালসাহেবের আবেগ আর নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের মডেল- দু’টির কম্বো প্যাকেজেই কেল্লা ফতে করত দু’দল। লোকসভাতেও এটাই ছিল সাফল্যের মন্ত্র। কিন্তু ভোটের মুখে সব হিসেব ওলট-পালট। শিবসেনার সঙ্গে জোট ভাঙল বিজেপি। কংগ্রেসের সঙ্গে শরদ পওয়ারের দল। সবাই এখন নিজের ওজন মাপছে ভোটের ময়দানে। আমনে-সামনে সকলে। সবাই সবাইকে দুষছে। এক এক এলাকায় কম-বেশি দাপট সকলেরই। আর তাতেই বিভ্রান্তি। প্রায় দু’দশক ধরে যে রাজ্যের মানুষগুলি শুধু জোট-সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত ছিলেন, তাদেরও এখন বেছে নিতে হচ্ছে কোনও একটি দলকে।
ফলে সিকি-শতক পরে এ বার মহারাষ্ট্র এক নতুন সময়ের সন্ধিক্ষণে। ১৫ অক্টোবরের ভোট বলবে, রাজ্য রাজনীতির গতিপথ কী হবে। নব্বইয়ের বিধানসভা ভোট থেকে এ বছর পর্যন্ত কংগ্রেস-এনসিপি ও বিজেপি-শিবসেনা এই দুই জোটের মধ্যেই ক্ষমতার কেন্দ্র ঘুরে বেড়িয়েছে। তার পর এই প্রথম পাঁচমুখী লড়াই। কংগ্রেস, এনসিপি, বিজেপি, শিবসেনা ও রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। এই ভোটেই পরখ হবে সকলের নিজের শক্তি। আর এই ভোটই বলবে, মহারাষ্ট্র কোনও একটি বিশেষ দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেবে কিনা, নরেন্দ্র মোদীর নামে ঠিক যেমনটি হয়েছিল দিল্লিতে। যদিও এবিপি নিউজ ও এ সি নিয়েলসেনের প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা জানাচ্ছে, রাজ্যে বিজেপি ১২০টি আসন পেয়ে সব থেকে বড় দল হতে পারে। শিবসেনা ৬৭টি, কংগ্রেস ৪৬টি, এনসিপি ৩৬টি ও এমএনএস ৮টি আসন পেতে পারে। তা হলে কি ভোটের পরে আবার সেই জোট গড়েই পথ চলা? তাই যদি হয়, তা হলে কেন এই ভাঙা-গড়ার খেলা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy