মনমোহন সিংহ এ বার প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই। তবু কংগ্রেসকে বিঁধতে গিয়ে তাঁকেই নিশানা করে নরেন্দ্র মোদী আজ নিজের ফারাকটা তুলে ধরতে চাইলেন বণিকসভা ফিকি-র সম্মেলনে। দেশের অর্থনীতির করুণ ছবি তুলে ধরে বোঝালেন দেশের পক্ষে জোরালো নেতৃত্ব, ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সাহস কতটাই জরুরি। রাহুল গাঁধীর মধ্যে এই সব গুণ কোথায়, কার্যত এই প্রশ্নও তুললেন বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। অর্থনীতিতে সুদিনের আশা জাগাতে দাবি করলেন, দেশকে ঘোর দুর্দশায় ফেলে (মনমোহনের মতো) পালিয়ে যাওয়ার লোক নন তিনি। বার্তা দিলেন, এই মোদী আলাদা। গেরুয়া পাঞ্জাবি নয়। কপালে রক্ততিলক নয়। উগ্র হিন্দুত্ব নয়। এই মোদী শিল্পের পক্ষে। সংস্কারের রথে।
গত বছরের শেষে দিল্লিতে এই বণিকসভার সম্মেলনে গিয়েই নিজের আর্থিক নীতি প্রচার করেছিলেন রাহুল। সকলের জন্য উন্নয়নের স্বার্থে খয়রাতির পক্ষে সওয়াল করলেও শিল্পায়নের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনিও। গাঁধীনগরে সেই ফিকি-র মঞ্চেই আজ নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মোদী জানিয়ে দিলেন, সঠিক নেতৃত্ব এলে অর্থনীতির চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে পারে। ক’দিন আগে প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে বলেছিলেন, ভাল সময় আসছে। আজও মোদীর ঘোষণা, ভাল সময় আসবে, তিনি আশাবাদী।
মোদীর মতে, তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে না থাকার যে ঘোষণা মনমোহন করেছেন, সেটা তাঁর পলায়নবাদী মনোভাব। দেশের অর্থনীতির যখন করুণ হাল, তখন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছেন তিনি।
মোদীর কথায়, “শুধু প্রশংসা নয়, সমালোচনা শোনার জন্যও তৈরি থাকা উচিত। এটাই আমাদের দেশে হতাশার কারণ। যদি দেশের মানুষ আমাদের কোনও দায়িত্ব দেয়, তা হলে তা গ্রহণ করতে হবে। পালিয়ে গেলে দেশ চলতে পারে না।” তিনি যে ময়দান ছেড়ে পালান না, তা বোঝাতে মোদী বলেন, “লোকে প্রশ্ন করে, পটনার জনসভায় বোমা বিস্ফোরণ হলেও তুমি পালাওনি কেন? আমি বলি, মোদী পালানোর জন্য জন্ম নেয়নি।”
ইউপিএ নেতৃত্বের সমালোচনার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির করুণ হালের জন্য আজ নীতিপঙ্গুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করেছেন মোদী। নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ তুলে শিল্পমহল অনেক দিন ধরেই দাবি করছে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সচেষ্ট হোক সরকার। যাতে দেশীয় শিল্পপতিরা বিদেশের বদলে এ দেশেই বিনিয়োগ করেন। সেই আস্থা ফেরানোরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী। নীতিপঙ্গুত্ব কাটাতে তাঁর দাওয়াই, একই সঙ্গে কৃষি, কারখানা উৎপাদন এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দেওয়া হোক। শিল্পমহলের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, এখন প্রয়োজন হল আত্মবিশ্বাস ও আস্থা ফিরিয়ে আনা। তাঁর কথায়, “যদি সঠিক পরিকল্পনা থাকত, আমরা আরও বেশি উচ্চতায় পৌঁছতে পারতাম। আজ ভারত ক্ষমতার তুলনায় কিছুই করতে পারছে না। অথচ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সব রকম সুযোগই রয়েছে দেশে। এই হতাশার পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসাটা প্রয়োজন।”
শিল্পমহল কয়লা ও আকরিক লোহার খননের কাজ বন্ধ থাকার জন্য সরকারি নীতিকে দুষছে। সেই ক্ষোভকেই উস্কে দিয়ে মোদীর মন্তব্য, “পরিকল্পনার রূপায়ণ, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, কাজের বণ্টন নিয়ে যদি রণকৌশল তৈরি করা যেত, দেশের ছবিটাই অন্য রকম হত। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি।”
অর্থনীতির হাল ফেরাতে তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে নজর দিতে চান, তারও তালিকা বলে দিয়েছেন মোদী। তাঁর মতে, শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং পরিষেবা এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে জোর দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে কর্মসংস্থানের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে মোদীর জবাব, শিল্পে উন্নয়ন হলেই কর্মসংস্থান হবে। আর্থিক বৃদ্ধির জন্য সামগ্রিক নীতির প্রয়োজনের কথা বলে মোদী যুক্তি দিয়েছেন, “আর্থিক বৃদ্ধির কথা বললে পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেটা আবার জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। জ্বালানির অভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কাউকে এর দায়িত্ব নিতেই হবে। কিন্তু কেউই এ দেশে দায়িত্ব নিতে চায় না। এটাই হতাশার বিষয়।”
মোদীর শিল্পায়ন ও আর্থিক বৃদ্ধির নীতির সঙ্গে সনিয়া-রাহুলের সকলের জন্য উন্নয়নের জনকল্যাণমুখী নীতির বিরোধ বরাবর। আজ কিন্তু মোদী অভিযোগ তুলেছেন, ইউপিএ সরকার সকলের জন্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা আমদানি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সব সময় সকলের জন্য উন্নয়নের কথা বলেন। কিন্তু যদি গরিবদের ঠিক মতো প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের দক্ষ করে না তুলি, তা হলে তাঁরা আয়ের ক্ষমতা কোথা থেকে পাবেন?” তাঁর প্রশ্ন, “সমাজবাদী স্লোগান শুনতে ভাল। কিন্তু তাতে কি কারও উপকার হচ্ছে?” তাই মোদীর দাওয়াই, সাধারণ মানুষকে উন্নয়নে অংশীদার করতে হবে। আরও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
এ দিনই গ্রেটার নয়ডায় এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করেছেন, তিন বছরের মধ্যেই দেশ উঁচু হারে আর্থিক বৃদ্ধির পথে ফিরে আসবে। চলতি বছরে রাজকোষ ঘাটতি ও চালু খাতার লেনদেনের ঘাটতিও লাগামের মধ্যে চলে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সেই আশ্বাসকে খারিজ করে দিয়ে মোদীর অভিযোগ, “দেশের সামনে বহু প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে রয়েছে। এই হতাশা আর প্রশ্নচিহ্ন থেকে বেরিয়ে আসাটাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy