ফল ঘোষণার পর গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছেন তালড্যাংরার বিজেপি প্রার্থী অনন্যা রায় চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর কাণ্ড থেকে নিয়োগ দুর্নীতি, নারী নির্যাতন থেকে কয়লা, বালি, পাথর পাচার— একের পর অভিযোগের তিরে নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূলকে বিঁধেছিল বিজেপি। কিন্তু তালড্যাংরা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে শেষ হাসি হাসল তৃণমূলই। সবুজ ঝড়ে উড়ে গেল গেরুয়া। ধুয়েমুছে সাফ সিপিএম, কংগ্রেস।
সাম্প্রতিক কালে এই কেন্দ্রে সব চেয়ে বড় ব্যবধানে জয় পেল তৃণমূল। তেমনই বিজেপিরও এটাই সব চেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়। সিপিএমের এক সময়ের গড় বলে পরিচিত তালড্যাংরা কেন্দ্রে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলের চেয়ে ১৭,২৬৮ ভোটে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেই ছবিটা উল্টে যায়। সে বার এই কেন্দ্রে তৃণমূল ১২,৩৩৭ ভোটে বিজেপিকে হারায়। বছর তিনের ব্যবধানে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপি কিছুটা নিজের ভোট ফিরে পেলেও তৃণমূল এগিয়ে থাকে ৭,৪৮৩ ভোটে।
১২ রাউন্ডের গণনায় এ দিন প্রথম থেকেই টানা এগিয়ে থেকেছেন তৃণমূল প্রার্থী ফাল্গুনী সিংহবাবু। একের পর এক রাউন্ডের ফল ঘোষণা হয়েছে, ততই উল্লাসে ফেটে পড়েছেন গণনাকেন্দ্রের বাইরে থাকা তৃণমূল কর্মীরা। ততই ফিকে হয়েছে বিরোধী শিবির।
তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “আর জি কর কাণ্ডকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলি ডাক্তারদের নিয়ে যে রাজনীতি শুরু করেছিল, তাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এর ভুক্তভোগী। ইভিএমে তারই জবাব দিয়েছেন তাঁরা।’’ তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রের আবাস প্রকল্প, একশো দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ করার মাসুল দিতে হচ্ছে বিজেপিকে।
তৃণমূল প্রার্থী ফাল্গুনী বলেন, ‘‘এই জয় বিধানসভার মানুষকে উৎসর্গ করলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থার জন্যই আমাদের জয়। রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্প মানুষের হৃদয় কেড়েছে।’’
লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় এ বার বিপুল ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় তালড্যাংরা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট বেড়েছে ৮,১৩৬। অন্য দিকে, বিজেপির ভোট কমেছে প্রায় ১৮,৪৬৩।
গণনা কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত পড়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী অনন্যা রায় চক্রবর্তী। ফেরার পথে তিনি বলেন, ‘‘মানুষ তৃণমূলকে চেয়েছেন বলেই ভোট দিয়েছেন। কেন এত ভোট কমল জানি না। জানতে পারলে, আগে থেকে ব্যবস্থা নিতাম। তবে এ জন্য মনখারাপ নেই।’’
তবে এত ব্যবধানের পরাজয় মানতে পারছেন না বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, “আমাদের দলের নেতারা এখনও তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াইয়ের কৌশলটাই বুঝে উঠতে পারছেন না। দলীয় কর্মীরা কী চাইছেন, স্থানীয় মানুষজন কী চাইছেন, এ সব তাঁদের সবার আগে বোঝা দরকার।” তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পুজোর মুখে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অনন্যাকে বিধানসভা ভোটের প্রার্থী করার বিষয়টি গেরুয়া শিবিরের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ভাল ভাবে নিতে পারেননি। তার উপরে বাঁকুড়া শহরের পুরপ্রতিনিধি অনন্যার বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’ প্রচারও ছিল বিরোধীদের অন্যতম হাতিয়ার। এ সবের প্রভাবও বিজেপির ভোট কমার অন্যতম কারণ।
সে সব অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল দাবি করেন, “উচ্চপর্যায়ের তদন্ত ছাড়া এমন হারের কারণ খুঁজে বের করা মুশকিল। উপনির্বাচনে শাসক দলের পক্ষে একটা হাওয়া থাকে ঠিকই। তবে এত বড় ব্যবধানে পরাজয় আমরা ভাবিনি।”
আর জি কর কাণ্ড, রাজ্যের নারী নির্যাতন নিয়ে এ বার জোরকদমে প্রচার চালিয়েছিল সিপিএম। তার পরেও কেন শাসকেই মানুষের
আস্থা রইল?
সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “উপনির্বাচনে সরকার পক্ষের দিকেই হাওয়া থাকে। তবে এই ভোটের ফলাফলে আর জি কর কাণ্ড, নারী নির্যাতনের প্রভাব তেমন দেখা না গেলেও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আগামী দিনে তৃণমূল সেটা
ঠিক টের পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy