E-Paper

মহারাষ্ট্রে বিপুল ভাবে ভোটে জেতার পরই মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি নিয়ে দ্বন্দ্বে শিন্দে-ফডণবীস

আপাতত তাই মুখ্যমন্ত্রিত্বের লড়াই দেবেন্দ্র বনাম একনাথের মধ্যেই। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মতে, বৃহত্তম দলের নেতা হিসেবে স্বভাবতই দেবেন্দ্র ফডণবীসের উচিত মুখ্যমন্ত্রী হওয়া।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৩
(বাঁ দিকে) একনাথ শিন্দে এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস।

(বাঁ দিকে) একনাথ শিন্দে এবং দেবেন্দ্র ফডণবীস। —ফাইল চিত্র।

মহারাষ্ট্রে বিপুল ভাবে ভোটে জিতে এসেও, নিজের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি বাঁচাতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রবল সংশয়ে একনাথ শিন্দে। যা ছিনিয়ে নিতে মহায্যুতি জোটের শরিক শিবসেনা (শিন্দে) দলের নেতা একনাথের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন বর্তমানে বড় শরিক বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস। জোটের তৃতীয় শরিক এনসিপি (অজিত) দলের নেতা অজিত পওয়ার ফলের আগে পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে ছিলেন। কিন্তু আজ যে ভাবে বিজেপি কার্যত একার ক্ষমতায় মহারাষ্ট্রে ম্যাজিক সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে, তা দেখে রণে ক্ষান্ত দিয়েছেন তিনি।

আপাতত তাই মুখ্যমন্ত্রিত্বের লড়াই দেবেন্দ্র বনাম একনাথের মধ্যেই। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের মতে, বৃহত্তম দলের নেতা হিসেবে স্বভাবতই দেবেন্দ্র ফডণবীসের উচিত মুখ্যমন্ত্রী হওয়া। রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশ দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাইছেন। তা ছাড়া শিন্দে শিবিরের সঙ্গে যখন বিজেপির জোট হয়েছিল, সে সময়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে বড় শরিক হয়েও একনাথকে মুখ্যমন্ত্রী করতে বাধ্য হয় বিজেপি। ফলে দেবেন্দ্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ দীর্ঘ সময় ধরে পাওনা রয়েছে বলেই মনে করে বিজেপি। দেবেন্দ্র ফের এক বার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বঞ্চিত হন, এমনটি চাইছেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাতে রাজ্যে বিজেপি বিধায়ক-কর্মীদের মনোবল নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা দলের।

তা ছাড়া লোকসভায় খারাপ ফলের পাঁচ মাসের মধ্যে পট পরিবর্তনের পিছনে যে দেবেন্দ্র মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন দলীয় নেতারা। লোকসভায় ভরাডুবির পরে দেবেন্দ্র নিজে নাগপুরে গিয়ে আরএসএস নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করে উভয় শিবিরের দূরত্ব কমিয়ে আনেন। যার সার্বিক ফায়দা দল নির্বিশেষে ভোটের বাক্সে পেয়েছে গেরুয়া শিবির।

বিজেপির কেন্দ্রীয় এক নেতার কথায়, ‘‘আজকের ফলের পরে শিন্দে শিবিরের উচিত মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি নিজে থেকেই ছেড়ে দেওয়া। যাতে এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে বিরোধের পরিস্থিতি তৈরি না হয়।’’ জয়ের দিনে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে বিতর্ক বাড়াতে চাননি দেবেন্দ্র। তিনি কেবল বলেন, ‘‘তিন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বৈঠক করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

পিছিয়ে নেই শিন্দে শিবির। এনডিএ জোটের আজকের এই বিপুল জয়ের পিছনে একনাথ শিন্দেই প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন বলে পাল্টা প্রচারে নেমে পড়েছে শিবসেনা। শিন্দে সমর্থকদের দাবি, লোকসভায় খারাপ ফলের পরে জনসমর্থন ফিরে পেতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একাধিক জনমোহিনী নীতি হাতে নেন। যার মধ্যে রয়েছে ‘লাড়কি বহিন’ যোজনা। মহিলাদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেওয়ার ওই প্রকল্পের সাফল্য ভোটের ফল এনডিএ-র পক্ষে ঘুরিয়ে দিয়েছে বলেই সরব হয়েছেন শিন্দে ঘনিষ্ঠরা। তাঁদের মতে, ওই প্রকল্প আনায় মহারাষ্ট্রের মহিলাদের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন এনডিএ প্রার্থীরা। শিন্দে শিবিরের বড় অংশ তাই চান না বিজেপির চাপের মুখে নতিস্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিক দল। দলের অবস্থান স্থির করতে মুম্বইয়ের একটি হোটেলে
সব জয়ী বিধায়কদের বৈঠক ডেকেছে শিবসেনা। সেখানেই বিধায়ক দলের নেতা বেছে নেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
নেবে দল।

মুখ্যমন্ত্রী পদ পেতে বিজেপি কতটা অনড় অবস্থান নেয় তার উপরেও জোটের সমীকরণ নির্ভর করছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকরা। বিজেপি যদি মুখ্যমন্ত্রী পদ পেতে প্রবল ভাবে চাপ বাড়ায় সে ক্ষেত্রে একনাথ শিন্দে গোষ্ঠীর এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি নেতাদের পাল্টা মত, আজকের ফলের পরে শিন্দেরা সরকার ছেড়ে বেরিয়ে গেলে কেবল অজিত পওয়ারের সমর্থন নিয়েই সরকার গড়ে ফেলতে সক্ষম হবে বিজেপি। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই পরিস্থিতিতে দেবেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রী করতে গিয়ে শিবসেনাকে হারানোর ঝুঁকি কি নেবে বিজেপি?

পরিবর্ত বিকল্প প্রস্তাব হল, শিন্দে যেমন মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন তেমনি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। দেবেন্দ্র ফডণবীসকে সে ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে নিয়ে আসা হবে। সেই পরিস্থিতিতে দেবেন্দ্রকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা রয়েছে দলের অভ্যন্তরে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Maharashtra Assembly Election 2024 Eknath Shinde Devendra Fadnavis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy