Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal By Poll

জয়ের ব্যবধানে বাবাকে টপকালেন রবিউল

উপনির্বাচনে সেই ব্যবধানকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁর ছেলে। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে আইএসএফ, বিজেপি, কংগ্রেসের।

তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলামের সঙ্গে প্রাপ্য ভৌমিক ও সুজিত বসু।

তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলামের সঙ্গে প্রাপ্য ভৌমিক ও সুজিত বসু। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাড়োয়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১০:০১
Share: Save:

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হাড়োয়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলাম জয়লাভ করেছিলেন ৮০,৯৭৮ ভোটে। ৫৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। এ বার হাড়োয়া বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রয়াত নুরুলের ছেলে শেখ রবিউল ইসলামকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। শনিবার ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে, তাঁর জয়ের ব্যবধান ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৮৮। তিনি পেয়েছেন ৭৭ শতাংশ ভোট। বিধায়ক থাকাকালীনই গত লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন নুরুল। হাড়োয়া কেন্দ্র থেকে তিনি এগিয়ে ছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার ভোটে। উপনির্বাচনে সেই ব্যবধানকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন তাঁর ছেলে। জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে আইএসএফ, বিজেপি, কংগ্রেসের।

তৃণমূলের এই জয়ের বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতা তথা ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক বলেন, “উপনির্বাচনে সাধারণ ভাবে জয়ের ব্যবধান বেড়ে থাকে। হাড়োয়ার ক্ষেত্রে বলব, আর জি করের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে কুৎসা অপপ্রচার করা হয়েছে, মানুষ তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।” রবিউল বলেন, “হাড়োয়ার মানুষ রেকর্ড তৈরি করেন, আবার তাঁরাই সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি করেন। ভাবিনি এত বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব। হাড়োয়াবাসীকে ধন্যবাদ।” জয়ের মধ্যেও বাবার জন্য ভারাক্রান্ত রবিউলের মন। তাঁর কথায়, “যে মানুষটা (নুরুল ইসলাম) আমার সুখে-দুঃখে সব সময়ে পাশে থাকতেন, এই আনন্দের দিনে তিনি নেই। আমার দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল।”

ফলাফল অনুযায়ী, গত বিধানসভা ভোটের তুলনায় বিরোধীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে বিজেপি পেয়েছিল ১৭.২ শতাংশ ভোট। এ বার বিজেপি পেয়েছে ৬.৬৫ শতাংশ ভোটে। গত বিধানসভায় আইএসএফ দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এ বারও তারা সেই জায়গা ধরে রেখেছে। তবে শতাংশের হিসেবে ভোট কমেছে। গত বিধানসভায় আইএসএফ পেয়েছিল ২২ শতাংশ ভোট। এ বার তারা পেয়েছে ১২ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস এ বার পেয়েছে ১.৮৪ শতাংশ ভোট। নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, জামানত বজায় রাখতে গেলে প্রাপ্ত ভোটের ১৬.৬৬ শতাংশ ভোট পেতে হয়। সেই হিসেবে বিরোধী প্রতিটি দলেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে এ বার।

এ দিন সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হাড়োয়ার পির গোরাচাঁদ হাই স্কুলে গণনা শুরু হয়। গণনা কেন্দ্রের বাইরে পুলিশের পক্ষ থেকেও আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা রাখা হয়েছিল। গণনার প্রথম রাউন্ড থেকেই তৃণমূল এগিয়ে ছিল। চার-পাঁচ রাউন্ডের পরে বাইরে তৃণমূল কর্মীরা জয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে আবির খেলতে শুরু করেন। মিষ্টিমুখ করানো হয়। পরাজয় বুঝে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা একে একে এলাকা ছাড়েন।

গণনা শেষের আগেই বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস গণনা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান। তিনি বলেন, “মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ঠিক মতো রায় দিতে পারেননি।” কংগ্রেস প্রার্থী হাবিব রেজা চৌধুরীর অভিযোগ, “শাসক দল মানুষকে সঠিক ভাবে ভোট দিতে দেয়নি। এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বের করে দিয়ে ভোট করিয়েছে।” আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুলের কথায়, “গণনায় দেখলাম বারাসত ২ ব্লকের অনেক বুথে তৃণমূল ৬০০ ভোট পেয়েছে। বিরোধীরা ৫টা ভোট পেয়েছে। ভোট কী ভাবে হয়েছিল, আপনারা তা দেখছিলেন। অনেক বুথে এজেন্ট বসতে দেয়নি।” বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে পার্থ ভৌমিকের প্রতিক্রয়া, “গত কয়েক বছরের হাড়োয়ার ভোটের ধারাবাহিক ফল পর্যালোচনা করলেই বিরোধীরা তাদের উত্তর পেয়ে যাবে। ওদের অভিযোগের সারবত্তা নেই। সংগঠন বলেও কিছু নেই।”

কী ভাবে ব্যবধান বাড়িয়ে জিতল তৃণমূল? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, নুরুল ইসলামের মৃত্যুর পরে সহানুভূতির হাওয়া কাজ করেছে তাঁর ছেলে রবিউলের পক্ষে। হাড়োয়া এলাকাটি সংখ্যালঘু প্রধান। সংখ্যালঘুদের মধ্যে তৃণমূলের প্রভাব এখানে প্রশ্নাতীত। আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য জুড়ে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও তার আঁচ এখানে কার্যত পড়েনি। তা ছাড়া, বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতাও ছিল। ভোটের দিন শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুললেও তা প্রতিরোধ করার মতো শক্তি বিরোধীদের ছিল না। সর্বত্র এজেন্ট দিতে পারেনি তারা। হাড়োয়ার মেছো ভেড়িকেন্দ্রিক রাজনীতিতেও বিরোধীরা প্রভাব ফেলতে পারেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

haroa TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy