বিহারে উপনির্বাচনের ফল বেরোবে কাল। নিছকই একটি রাজ্যের ১০টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন। এমনও নয় যে রাজ্যে জিতনরাম মাঁঝির সরকার উল্টে দিতে পারে তার ফল। তবু সেই উপনির্বাচনের ফলের দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশের অবিজেপি দলগুলি।
মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডে ভোট সামনে। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি তার আগে বিহারের এই ভোট থেকেই আঁচ পেতে চায়, বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লিতে ক্ষমতায় আসার মাস তিনেক পরে মোদী ঝড়ের শক্তি এখন কতটা? যদিও বিজেপির চেয়েও বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা অবিজেপি দলগুলির কাছে এই উপনির্বাচন ঢের বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের জুটির অভিঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন এই দলগুলি। এর থেকে আলাদা নয় পশ্চিমবঙ্গও।
উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম-মায়বতী যেমন বিহারের এই ফলাফলের দিকে তাকিয়ে, তেমনই বাংলার তৃণমূল এবং বাম শিবিরও সমান ভাবে নজর রাখছে লালু ও নীতীশের জোট কতটা সফল হয়, তার দিকে। বিহারের উপনির্বাচনের ফল কোন দিকে যেতে পারে, তা বুঝতে বিভিন্ন সূত্রের কাছে খোঁজখবর নিচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। অন্য দিকে, বাম নেতারাও সমান আগ্রহী ফল জানতে। সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নেতা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন বিহারের ফলাফল কেমন হবে। বিহারের ভারপ্রাপ্ত সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র পিল্লাই কেরল থেকে ফোনে জানিয়েছেন, “আমাদের দলের রাজ্য নেতারা এই ব্যাপারে খবর রাখছেন। উপনির্বাচনের ফল জেনে তা আমরা পর্যালোচনা করব।”
প্রশ্ন হল, কেন এতটাই আগ্রহ এই উপনির্বাচনের ফলকে ঘিরে? জবাব হল, লালু-নীতীশের জোট। দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে বিহারে যে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে, তা বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে বিকল্প পথের সন্ধান দিতে পারবে কি না আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু সেটাই। বিজেপির বিপুল দাপটের মুখে দুই দশকের শত্রুতা ভুলে একজোট হয়ে বিহারে সরকার চালাচ্ছেন জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলন থেকে উঠে আসা এই দুই নেতা। একজোট হয়ে লড়েছেন এই উপনির্বাচনেও। ভোটে এই জোট সাফল্য পেলে মোদী জমানায় বিরোধীদের কাছে সেটা একটা দিশা হয়ে উঠতে পারে। বিজেপির বিকল্প হয়ে ওঠার জন্য একই পথে হাঁটার কথাও ভাবতে হতে পারে অবিজেপি দলগুলিকে। বস্তুত, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে নীতীশের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার পর থেকেই সেই ভাবনা উস্কে দিতে তৎপর আরজেডি-প্রধান। উত্তরপ্রদেশেও মুলায়ম-মায়াবতীর হাত মেলানো উচিত বলে সে সময় মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
এখন অমিত শাহের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বিজেপি। মোদীর অন্যতম সেনাপতি অরুণ জেটলি আজই কলকাতায় গিয়ে সেই প্রত্যাশা বাড়িয়ে তুলতে রাহুল সিংহদের মনে করিয়েছেন, লোকসভা ভোটেই দেখা গিয়েছে দল যতটা ভেবেছিল, দেশের মানুষ তার চেয়ে বেশি ভেবে রেখেছেন। বিজেপি নেতারা উত্তরপ্রদেশে ৫০-৬০টির বেশি আসনের কথা বলতে ভরসা পাচ্ছিলেন না। দেখা গেল সেখানে মানুষ তাঁদের ৭৩টি আসন দিয়েছেন। জেটলির মতে, একই কথা খাটে বাংলার ক্ষেত্রেও। বিজেপির এই মেজাজ ভাবাচ্ছে বাংলার তৃণমূল ও বাম নেতাদেরও। লালু-নীতীশের পরীক্ষা সফল হয় কি না বা জাতীয় রাজনীতিতে তা বিকল্প পথের বার্তা দিতে পারে কি না, তা জানতে উদগ্রীব তাঁরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy