Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছাত্র সাসপেন্ডে ক্ষুব্ধ কাশ্মীর, প্রতিক্রিয়া পাকিস্তানের

ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড হওয়া ৬৭ জন কাশ্মীরি ছাত্রের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত ওই ছাত্ররা। দেশদ্রোহে অভিযুক্তদের সর্বনিম্ন শাস্তি তিন বছরের কারাবাস। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:৪৫
Share: Save:

ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড হওয়া ৬৭ জন কাশ্মীরি ছাত্রের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত ওই ছাত্ররা। দেশদ্রোহে অভিযুক্তদের সর্বনিম্ন শাস্তি তিন বছরের কারাবাস। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে।

রবিবার ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময় পাকিস্তানের সমর্থনে গলা ফাটানো কাশ্মীরি ছাত্রদের উপর হামলা করে মেরঠের স্বামী বিবেকানন্দ শুভার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য ছাত্ররা। দু’পক্ষের মারামারি, ভাঙচুরে অভিযোগের আঙুল ওঠে ৬৭ ছাত্রের দিকে। তাঁদের ৩ দিনের জন্য সাসপেন্ডও করা হয়।

আজ তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা আনা হলে এই পদক্ষেপের নিন্দায় সরব হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা জানিয়েছেন, এ শাস্তি মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। ছাত্রদের ভবিষ্যত্‌ শেষ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও কথা হয়েছে। টুইট করেছেন, “উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি দেখবেন বলেছেন।” তবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের পিপল্‌স ডেমোক্র্যাটিক পার্টিও। দলের প্রধান মুখপাত্র নঈম আখতার বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু কাশ্মীরি ছাত্রদেরকেই অভিযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন। ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত না করেই ছাত্রদের পুরো দলটিকে সাসপেন্ড করে দিয়েছেন। এটা ফাসিস্ত মনোভাবের পরিচয়। ...আর এই ঘটনায় কাশ্মীরি ছাত্রদের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলছে সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপি।”

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো ব্যক্তিরা ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ চলার সময় অন্য দলের ভাল খেলায় হাততালি দেন। তখন তো সেটা দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়!।” তাঁর দাবি, অবিলম্বে অভিযোগ তুলে নেওয়া উচিত। শুধু তা-ই নয়, উত্তরপ্রদেশ সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ছাত্রদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নেওয়া উচিত বলে জানান নঈম আখতার।

একই বক্তব্য শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের-ও। দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুস্তাফা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ছাত্রদের অবিলম্বে ফিরিয়ে নিতে।

ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র তনসিম আসলাম জানিয়েছেন, কিছু কাশ্মীরি ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকেই সমর্থন করে। এটা নতুন কিছু নয়। তার জন্য ছাত্রদের সাসপেন্ড করে দেওয়া ঠিক নয়। “ক্রিকেট ম্যাচে একটা দলকে সমর্থন করলেই যদি দেশদ্রোহিতা করা হয়, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক।” মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে এ-ও বলেন, “ওই কাশ্মীরি ছাত্ররা পাকিস্তানে এসে পড়াশোনা শেষ করতে পারেন। রাস্তা সব সময় খোলা থাকবে।”

মুখ খুলেছেন অভিযুক্ত ছাত্ররাও। গুলজার ও মাতিফ নামের দুই ছাত্র জানিয়েছেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেলে মেরঠে ফিরতে রাজি নন তাঁরা। খেলায় একটা ভাল দলকে সমর্থন করায় বেআইনি ভাবে অভিযোগ এনেছে পুলিশ। অন্যদের বক্তব্য, “আমরা কোনও অন্যায় করিনি। আমরা জঙ্গি নই। কাশ্মীরি এবং ক্রিকেট ম্যাচে পাকিস্তানকে সমর্থন করি। এই কারণে হেনস্থা করা হচ্ছে আমাদের।”

এজাজ আহমদ নামের এক ছাত্র বলেন, “মজার ব্যাপার হল, যারা মারধর শুরু করল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাঙচুর করল তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। ঘটনার কোনও তদন্ত ছাড়াই আমাদের বার করে দেওয়া হল, দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হল।”

রবিবারের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এজাজ বলেন, “সে দিন পাকিস্তান জিতে যাওয়ার পরেও সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। কিছু ক্ষণ পরে হঠাত্‌ই কয়েক জন ছাত্র দু’জন কাশ্মীরিকে মারতে শুরু করে। হস্টেলের ওয়ার্ডেন এবং কয়েক জন উঁচু ক্লাসের ছাত্রও ওদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। এই করেই ঝামেলা গড়ায় বেশ কিছু ক্ষণ। রাতে ভেবেছিলাম, সকালে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু পরের দিন আমাদের অবাক করে দিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু করে অন্য ছাত্ররা। দাবি, কাশ্মীরি ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে আজ একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ প্রত্যাহারের ব্যাপারে এখনও কিছু জানাননি কর্তৃপক্ষ।

অন্য বিষয়গুলি:

kashmir student suspension pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE