পিনারাই বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন এবং এম ভি গোবিন্দন।
এক লড়াইয়ের শেষ। অন্য লড়াই শুরু!
টানাপড়েন কাটিয়ে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পদ থেকে এ বার সম্ভবত বিদায় ঘটতে চলেছে পিনারাই বিজয়নের। তাঁর জায়গায় নতুন মুখকে দায়িত্বে আনার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত মিলেছে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। বিদায় আসন্ন বুঝে বিজয়ন এখন তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনে কেরলের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনকে দেখতে চাইছেন। আবার দলের অন্য একাংশ রাজ্য সম্পাদক হিসাবে চাইছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এম ভি গোবিন্দন মাস্টারকে। ঘটনাচক্রে, বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক এবং নতুন দায়িত্বের দৌড়ে থাকা দুই মুখ তিন জনই কান্নুর জেলার! কান্নুরের তিন মূর্তিকে নিয়েই রাজ্য সম্মেলনের আগে লড়াই জমে উঠছে সিপিএমে!
তিন বারের বেশি কোনও কমিটির সম্পাদক পদে থাকা যাবে না, এই নীতি মেনে বিজয়নের এ বার সরে যাওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত লাভালিন কেলেঙ্কারির মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ায় রাজ্য সম্পাদকের হয়ে ফের সক্রিয় হয়েছিল কেরল সিপিএমের একাংশ। তাদের দাবি ছিল, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত বিজয়নকেই ফের রাজ্য সম্পাদক করে ‘অপপ্রচারে’র জবাব দেওয়া হোক। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য আলোচনা করে দেখেছেন, শুধু এই কারণে আবার রাজ্য সম্পাদককে ফিরিয়ে আনলে ভুল বার্তা যাবে। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “তিন বারের বেশি কমিটির শীর্ষ পদে নয়, এই নিয়মে এক জন ব্যতিক্রম ঘটালেই অন্যেরাও দাবি করবেন! ব্যতিক্রমের সুযোগ নেওয়া যাবে না বলে ইতিমধ্যে নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। খুব জরুরি না হলে ব্যতিক্রমের দিকে যাওয়া যাবে না, এটাই নীতিগত সিদ্ধান্ত।”
শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাব বুঝে যাওয়ার পরেই বিজয়ন এখন নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। পলিটব্যুরোর সতীর্থ বালকৃষ্ণন রাজ্য সম্পাদক হলে দলে বিজয়নের নিয়ন্ত্রণই থেকে যাবে। বিজয়ন-শিবিরের নেতা হলেও বিধায়ক বালকৃষ্ণন ততটা আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন নন। বিজয়ন-বিরোধী শিবিরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও বিজয়নের তুলনায় ভাল। কিন্তু কেরল সিপিএমের অন্য আর এক অংশ চাইছে, এত দিন পরে যখন বিজয়নের হাত থেকে ছুটি মিলছে, দলকে তখন একেবারেই তাঁর প্রভাব থেকে বার করে আনতে। এই অংশের পছন্দ গোবিন্দন। যিনি আগে কান্নুর জেলা সম্পাদক ছিলেন। তিন বছর আগে এর্নাকুলাম জেলা কমিটিতে বিশেষ সঙ্কট দেখা দেওয়ায় কিছু দিনের জন্য ওই জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকও হয়েছিলেন। বালকৃষ্ণনের ছেলেদের জড়িয়ে কেরলে যেমন দুর্নীতির অভিযোগ আছে, গোবিন্দনের ভাবমূর্তি সেখানে একেবারেই স্বচ্ছ।
কিন্তু সমস্যা হল, গোবিন্দন পলিটব্যুরো দূরের কথা, এখনও সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সদস্য নন! দলের কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নন, এমন কেউ সচরাচর রাজ্য সম্পাদক হন না। তা হলে এখানেও ব্যতিক্রম ঘটাতে হবে!” কেরলে রাজ্য সম্মেলনের পরের মাসে বিশাখাপত্তনমে বসবে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস, যেখানে নতুন পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হবে। তার আগে গোবিন্দনের জন্য কোনও সূত্র বার করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ।
এই গোটা পর্বে এক জনের নীরবতা অবশ্য রহস্যময়! রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন এখনও দলের মধ্যে এই নিয়ে মুখ খোলেননি। সিপিএমের এক সাংসদের কথায়, “দলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে বালকৃষ্ণনই এগিয়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভি এস যদি গোবিন্দনের পক্ষে দাঁড়িয়ে পড়েন, তা হলে লড়াই অন্য মাত্রা পাবে!” কান্নুরের তিন মূর্তিই তাই আপাতত উদ্বেগে আছেন ৯২ বছরের এক তরুণকে নিয়ে! পঞ্চাশ বছর আগে যে ৩২ জন তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে সিপিএমের ভিত্তি রচনা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র জীবিত সদস্য কী করবেন উৎকণ্ঠা তা নিয়েই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy