Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আতঙ্কের ছায়ায় কাটল বড়দিন, হাজির নেতারা

কেক নয়, বড়দিনে মিলল শুকনো পাউরুটি। মোমবাতি জ্বললেও ত্রাণ শিবিরের আঁধার তাতে কাটল না। মিলল না বড়দিনের সে উষ্ণতাও। গির্জার ক্যারল নয়, খ্রিস্টানপ্রধান এলাকাগুলিতে গত কাল প্রাক-বড়দিনের রাত ভারী হয়ে থাকল স্বজনহারার কান্নায়।

বড়দিনেও চোখে জল। শোণিতপুরে সাজানো গির্জাই ত্রাণ শিবির। ছবি: এপি।

বড়দিনেও চোখে জল। শোণিতপুরে সাজানো গির্জাই ত্রাণ শিবির। ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি ও ধুবুরি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১৬
Share: Save:

কেক নয়, বড়দিনে মিলল শুকনো পাউরুটি। মোমবাতি জ্বললেও ত্রাণ শিবিরের আঁধার তাতে কাটল না। মিলল না বড়দিনের সে উষ্ণতাও। গির্জার ক্যারল নয়, খ্রিস্টানপ্রধান এলাকাগুলিতে গত কাল প্রাক-বড়দিনের রাত ভারী হয়ে থাকল স্বজনহারার কান্নায়। আর আজ, বড়দিনের সকাল বয়ে নিয়ে এল একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধারের খবর।

সরকারের আবেদন, সেনাবাহিনীর টহল, কার্ফু-কবলিত কড়া নজরদারির মধ্যেও শোণিতপুর, কোকরাঝাড়, উদালগুড়িতে শান্তি ফেরেনি। গত ১২ ঘণ্টায় আরও ন’টি দেহ উদ্ধারের জেরে বড়ো জঙ্গিদের আক্রমণ ও আদিবাসীদের জবাবি হামলা মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৮০ ছাড়াল। গত কাল রাতে উদালগুড়ির বড়ো-প্রধান আমজুলি গ্রামের ৫টি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পাল্টা আগুন লাগানো হয় গোঁসাইগাঁওয়ের ভরতনগর, ধরধরা, লতামারি, মেটেকামারি-সহ কয়েকটি আদিবাসী গ্রামেও। এ দিন সকালে কোকরাঝাড়ের সামসিংখোলা এলাকার বাজারে-গ্রামে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। সামসিংখোলা, শালাকাটি, গড়চিংপাড়া, কচুগাঁও থেকে এক সাঁওতাল মহিলা ও তিন বড়োর দেহ মেলে। শোণিতপুরেও মেলে একটি দেহ। বিকেলে শোণিতপুরের রঙাজানে পাঁচটি গ্রামে আদিবাসীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন ভর্তি। এর মধ্যে সাত জনের দেহে অস্ত্রোপচার হয়। অসম চা-উপজাতি ছাত্র সংগঠন (আটসা) ২৬ ডিসেম্বর ১২ ঘণ্টার অসম বন্ধের ডাক দিয়েছে।

শোণিতপুর-কোকরাঝাড়ের ত্রাণ শিবিরে হাজার-হাজার আদিবাসী মানুষের ভিড় ছিলই। গত কাল সন্ধে থেকে ঘর-ছাড়া বড়োদের জন্যও রাজ্য প্রশাসনকে আলাদা ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। নিহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লক্ষ ও রাজ্য সরকারের তরফে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। আহতরা দুই তহবিল মিলিয়ে পাবেন ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারের এই আর্থিক ঘোষণাতেও ক্ষতে প্রলেপ পড়ছে না। আজ শোণিতপুরের তিনিসুঁতি ত্রাণ শিবির দেখতে যান ঢেকিয়াজুলির স্থানীয় বিধায়ক তথা অসমের ডেপুটি স্পিকার ভীমানন্দ তাঁতি ও কংগ্রেস নেতা রিপুন বরা। তাঁতি গত কাল পাকিস্তান-বাংলাদেশের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে অসমের ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। আজ ত্রাণ শিবিরে তাঁতির গালে সপাটে থাপ্পড় মারেন এক মহিলা। তাঁকে মাটিতে বসিয়ে শিবিরের খাবার খাওয়ানো হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাঁকে ছেড়েই সরে পড়েন কংগ্রেস নেতা বরা।

কোকরাঝাড় ও শোণিতপুরের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখবার কথা থাকলেও আজ সেখানে বা কোনও ত্রাণ শিবিরে যাননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তেজপুর থেকে কোকরাঝাড় যাওয়ার পথে রাজনাথ, মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুকে নিয়ে রওনা হওয়া হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। মাঝপথ থেকে তেজপুর ফিরে আসে কপ্টারটি। পরে অন্য কপ্টারে রাজনাথ কোকরাঝাড় যান। দুই জেলাতে, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীকে ডেকে আনা হয় ‘সাই’ চত্বরে। বিপিএফ প্রধান হাগ্রামা মহিলারি বৈঠকে আসেননি। রাজনাথ কোকরাঝাড়ে থাকার সময়ে ক্ষিপ্ত আদিবাসীরা বড়ো গ্রাম আলোকঝাড়িতে আগুন লাগায়।

দিল্লি ফেরার আগে রাজনাথ জানান, বড়ো জঙ্গি নেতারা ভুটান ও মায়ানমারে লুকিয়ে আছে। ভারত সরকার তাদের নিকেশ করতে চায়। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দুই দেশের সঙ্গে কথা চালাচ্ছেন। সিংহের মতে, “এই ধরনের সন্ত্রাস দেশের পক্ষে চ্যালেঞ্জ। রাজ্য সরকারকে সব রকম সাহায্য করা হবে।” তাঁর বক্তব্য, কিছু মানুষ ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক রং লাগাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু জঙ্গিদের কোনও জাত-ধর্ম নেই। এনডিএফবি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে চলবে বলে রাজনাথ জানান।

এ দিকে, বড়ো সমাজ ও সংগঠনগুলির নিন্দার মুখে গত কাল রাতেই সংবিজিৎ গোষ্ঠীর লেফটেন্যান্ট বি বিদাই বিবৃতি পাঠিয়ে দাবি করেন, শোণিতপুর-কোকরাঝাড়ের হত্যাকাণ্ডে তারা নয়, তৃতীয় কোনও শক্তি জড়িত। কেন্দ্র সংবিজিৎ গোষ্ঠীকে সহজ নিশানা করছে। যার ফলে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। গোটা ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তুলেছেন বিদাই। যদিও কেন্দ্র ও রাজ্য বিদাইয়ের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। কেন্দ্র জানাচ্ছে, আদিবাসীদের উপরে আক্রমণের মূল মাথা ছিল বিদাই নিজেই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে খবর, ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১২টা ও ৩টেয় এনডিএফবি কম্যান্ডারদের ফোন ট্যাপ করে জানা গিয়েছিল তারা শোণিতপুরে আদিবাসীদের উপরে হামলা চালাবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, অসম পুলিশকে সব জানানো হলেও তারা ব্যর্থ হয়। কেন্দ্রের মতে, সংবিজিৎ রয়েছে মায়ানমারের টাগায়। বড়ো স্বশাসিত পরিষদের শাসক দল বড়োল্যান্ড পিপল্স ফ্রন্টের সহ-সভাপতি চন্দন ব্রহ্ম বলেন, “নিজে অ-বড়ো হয়ে সংবিজিৎ বড়োদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের নামে হিংসা-অবিশ্বাস সৃষ্টি করছে।” রাজনাথ বলেন, “আমরা এনআইএ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজাতি উন্নয়নমন্ত্রী জুয়েল ওরাম বিশ্বনাথ গোটা ঘটনা নিয়ে বিশদ রিপোর্ট দেবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

assam NDFB kokrajhar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE