এখন কাছাকাছি। ভাবী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণী। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
স্পিকার পদে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে বসানো নিয়ে গোলযোগ শুরু হয়েছে বিজেপির মধ্যেই।
অরুণ জেটলি-সহ বেশ কিছু নেতার আশঙ্কা, স্পিকার হলে দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন আডবাণী। আজই মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছেন নরেন্দ্র মোদী। দুপুরে আডবাণীর বাড়ি গিয়ে চল্লিশ মিনিট বৈঠক করেন তিনি। কিন্তু স্পিকার পদ নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে আডবাণীকে যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কোনও দায়িত্ব দিতে আগ্রহী, তা-ও বুঝিয়ে দেন মোদী। সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে আলোচনা করে মোদী এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
সঙ্ঘ প্রকাশ্যে জানিয়েছে, সরকার গঠনে তারা কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু এখন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে সংগঠনে রদবদলের বিষয়টি। এবং সেখানেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য বিজেপি সভাপতি হিসেবে উঠে আসছে অমিত শাহের নাম। বিজেপি সূত্রের খবর, রাজনাথ সিংহ এবং নিতিন গডকড়ী দু’জনেই যদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় চলে যান, সে ক্ষেত্রে অমিতকেই দলীয় সভাপতি করার ব্যাপারে সঙ্ঘের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছেন মোদী। লোকসভা ভোটে অমিতকে তাঁর চেনা জমি গুজরাত থেকে উত্তরপ্রদেশে তুলে নিয়ে গিয়ে অগ্নিপরীক্ষায় ফেলেছিলেন মোদী। তাতে অমিত পুরোপুরি উত্তীর্ণ। সনিয়া ও রাহুল গাঁধী, মুলায়ম সিংহ ও তাঁর পুত্রবধূ ডিম্পল-এর মতো কয়েক জন বাদ দিলে বিরোধীরা সে রাজ্যে কোনও আসনই পায়নি। উত্তরপ্রদেশে ছত্রভঙ্গ বিজেপিকে একজোট করে অমিত প্রমাণ করেছেন, সংগঠন সামলাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। তার পর থেকেই অমিতের জন্য বড় ভূমিকার কথা ভেবে আসছিলেন মোদী।
শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেবেন নরেন্দ্র মোদী। তার আগে কলকাতার বিজেপি দফতর
সাজানো হচ্ছে তাঁর কাট-আউট দিয়ে। রবিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
কিন্তু আডবাণীর জন্য যথাযোগ্য পদের ব্যবস্থা করাটাও এখন মোদীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আডবাণী। স্বভাবতই মোদীর অধীনে মন্ত্রী হওয়া তাঁর কাছে অস্বস্তিকর। বরং স্পিকারের মতো সাংবধানিক পদই আডবাণীর পক্ষে সম্মানজনক হবে। কিন্তু দলের একটা অংশের আশঙ্কা, আডবাণীকে স্পিকার করলে কংগ্রেস তাঁকে ব্যবহার করতে পারে। এবং সে ক্ষেত্রে বেগ পেতে পারে মোদী সরকারই।
আজ অবশ্য আডবাণীর বাড়িতে বৈঠককে কার্যত ‘ইভেন্টে’ পরিণত করেছেন মোদী। সাধারণত আডবাণীর বাড়িতে এমন বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আজ আডবাণীর বৈঠকখানায় প্রবেশাধিকার পান চিত্রসাংবাদিকরা। সেখানে একই সোফায় বসে হাসিমুখে ছবি তোলান আডবাণী ও মোদী। এর পর মন্ত্রিসভা নিয়ে কথা হয় দু’জনের। মোদীর বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ উঠেছে, তিনি অন্যদের মতকে গুরুত্ব দেন না। অনেকের আশঙ্কা, লোকসভা ভোটে সাফল্যের পর সে সম্ভাবনা বাড়বে। এই অভিযোগকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে মোদী সচেতন ভাবেই সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। তাই আডবাণী বা মুরলীমনোহর জোশীর মতো প্রবীণদের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন। ছোট-বড় নেতাদের গুজরাত ভবনে ডেকে আলোচনা করছেন। আজ সকালেই অমিত শাহ, ধর্মেন্দ্র প্রধান, জগৎপ্রকাশ নাড্ডার মতো সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান গুজরাত ভবনে।
শরিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন মোদী। সন্ধ্যায় রামবিলাস পাসোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। লোকসভায় নিরঙ্কুশ হলেও রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতা না থাকার বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। তাই আরও বেশি দলের কাছে পৌঁছতে চান মোদী। আজই জয়ললিতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তামিলনাড়ুর উন্নয়নের স্বার্থে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। লোকসভা ও রাজ্যসভার বিজেপি টিমের মধ্যে ভারসাম্য রাখার কথাও ভাবতে হচ্ছে মোদীকে। জেটলিকে তিনি বড় দায়িত্ব দিতে চান। অরুণ শৌরীকেও দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। আরও একটি প্রস্তাব রয়েছে রমন সিংহ, মনোহর পারিক্করের মতো মুখ্যমন্ত্রীদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসার। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সমস্যা হল, ছত্তীসগঢ় বা গোয়ার মতো রাজ্যে এই নেতারা নিজেদের সংগঠিত করেছেন। রাজ্যপাট ছেড়ে দিল্লি এলে রাজ্যেরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা।
কাল বারাণসী সফরের ফাঁকেই মন্ত্রিত্ব নিয়ে রাজনাথের সঙ্গে কথা হয় মোদীর। রাজনাথ চান স্বরাষ্ট্র বকলমে মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় স্থান। তা না হলে সভাপতিই থাকতে চান তিনি। এ দিকে সুষমা স্বরাজও গুরুত্বপূর্ণ পদ চান। অথচ রাজনাথের বিষয়টির সমাধান না হলে সুষমাকে নিয়ে জটেরও নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। সুষমা সন্ধ্যায় দিল্লিতে আরএসএসের দফতর কেশব কুঞ্জে গিয়ে ভাইয়াজি জোশী, সুরেশ সোনিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মুরলীমনোহর জোশীও নাগপুরে গিয়ে সঙ্ঘ নেতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দাবি জানিয়েছেন। সঙ্ঘের সদর দফতরে যান বেঙ্কাইয়া নাইডুও। সঙ্ঘের সঙ্গে কথা বলেই বিষয়গুলির নিষ্পত্তি করতে চান মোদী।
বিজেপি নেতাদের মতে, ‘বিগ-ফোরে’ না রাখলেও জোশী নিজের পছন্দসই মন্ত্রক পেলেই খুশি। গডকড়ী হয়তো পাবেন পরিবহণ মন্ত্রক। কিন্তু সুষমাকে বিগ ফোরে রাখা নিয়ে আপত্তি অনেকের। তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দেওয়া নিয়ে এক সময় কথাও চলছিল। কিন্তু দলীয় সূত্রের মতে, এই মন্ত্রকে সব সময়েই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার আশঙ্কা থাকে। তাই সুষমাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বিজেপি সূত্রের মতে, যে হেতু লোকসভায় অনেক বেশি সদস্য জিতে এসেছেন, মোদী তাই সব প্রান্তেরই প্রতিনিধিত্ব মন্ত্রিসভায় রাখতে চাইছেন। তবে মানবসম্পদ উন্নয়ন বা সংস্কৃতির মতো মন্ত্রকে পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের বদলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পারদর্শীদের আনার কথাই ভাবছেন তিনি। মঙ্গলবার বিজেপি সাংসদদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সেখানেই মোদীকে দলের নেতা নির্বাচিত করা হবে। তত দিন দিল্লিতে থেকে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিসভার রূপরেখা তৈরি করবেন নরেন্দ্র মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy